শিরোনামঃ-

» সিলেটে পূজা উদযাপন পরিষদের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় বক্তারা

প্রকাশিত: ০৮. ফেব্রুয়ারি. ২০২৫ | শনিবার

সনাতনীদের ৮ দফা আদায় করেই ছাড়বো ‘আমরা ধর্মীয় সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী’

নিউজ ডেস্কঃ
সিলেটে পূজা উদযাপন পরিষদের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় বক্তারা বলেছেন, ৮ দফা সনাতনী ধর্মালম্ভীদের প্রাণের দাবি, বাচাঁর দাবি। এই ৮ দফা আমরা আদায় করেই ছাড়বো। স্বাধীনতার সময় সনাতনীরা নির্যাতিত হয়েছেন।

স্বাধীনতার পরও বিগত ৫৩ বছর সনাতনীরা নির্যাতন, অন্যায়, বঞ্চনা সহ্য করে বেঁচে আছেন। কোন সরকারের আমলেই সনাতনীরা ভালো ছিল না। গত ১৫ বছর আমাদের ৫ দফা দাবির একটিও বাস্তবায়নের কেউ উদ্যোগ নেয়নি। সরকার যায়, সরকার আসে কিন্তু সনাতনীদের নিরাপদ কেউ রাখেনি। সেই ৫ দফা এখন ৮ দফায় রুপান্তরিত হয়েছে। বক্তারা বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদ একটি সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে ন্যায়ভাবে দাবি বাস্তবায়নে কাজ করছে। আমাদের কন্ঠ থেমে থাকেনি। ঝড় আসবে, বিপদ আসবে। সব সহ্য করে, লড়াই করে মাথা উচু করে আমাদের বাঁচতে হবে। পূজা পরিষদের প্রধান লক্ষ্য হিন্দুদের অধিকার ও নিরাপত্তা প্রদান করা।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ টায় সিলেট মহানগীরর শারদা হলে অনুষ্ঠিত পূজা উদযাপন পরিষদের সিলেট বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত বক্তারা এসব কথা বলেন।

পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলার সভাপতিত্বে ও সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জন ঘোষ ও সিলেট মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশের যৌথ পরিচালনায় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক বাসুদেব ধর। প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং কালবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি অশোক মাধব রায়, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ বিশ্বাস সাধন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক প্রাণতোষ আচার্য্য শিবু, সাংগঠনিক সম্পাদক মলয় পুরকায়স্থ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিমল বণিক, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট মহানগরের সাবেক সভাপতি  সুব্রত দেব, কেন্দ্রীয় সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি আশু রঞ্জন দাশ, সিলেট জেলা ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট বিজয় কৃষ্ণ বিশ্বাস।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাসুদেব ধর বলেন, দেশের ক্রান্তিলগ্নে এই পূজা উদযাপন পরিষদ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে।

সবাই একসাথে হয়ে এদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হবে। এই সিলেট অঞ্চলে অনেক মহাপুরুষ এসেছেন। যাদের কল্যাণে আমরা যাত্রা শুরু করতে পেরেছিলাম। ফলে আমরা এতদূর পর্যন্ত এসেছি।

প্রতিটি সংকটময় মুহূর্তে আমরা যার যার জায়গায় মাঠে নেমেছি। এই দেশের জন্য আমাদের পূর্বপুরুষেরা জীবন দিয়েছেন। এই দেশ আমাদের, এই দেশকে আমরা ভালোবাসি। এই পরীক্ষায় আমরা উত্তীর্ণ হয়েছি বলে সেনাবাহিনী সহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আমাদের সাথে রয়েছে। ঐক্যের মাধ্যমে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক সবচেয়ে বেশি শরণার্থী হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, আমরা আমাদের ধর্ম থেকে দিনদিন দূরে চলে যাচ্ছি।

আমাদের চেষ্টা থাকবে অন্তত পাঁচ মিনিট হলেও গীতা পাঠ করতে হবে এবং আমাদের সন্তানদের সনাতনী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। আজকের সকল সমস্যা ও অভিযোগ আমরা সরকার, আর্মি ও প্রসাশনের কাছে তুলে ধরবো এবং এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। তিনি বলেন আপনারা ধৈর্য্য ধরুন। পরিস্থিতি বলে দিবে কখন আমাদের মাঠে থাকতে হবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। আমরা ৮টি দফা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশাসনের সাথে কথা বলেছি।

সভাপতির বক্তব্যে পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা বলেন, আপনাদের উপর যেসব হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা হয়েছে সেসব মামলা সম্পর্কে আমাদেরকে দ্রুত জানান। মিথ্যা মামলায় যত ধরনের আইনী সহায়তা প্রয়োজন হয় আমরা যেকোনভাবে তাদের পাশে দাঁড়াবো। যদি কেউ চাঁদাবাজি করতে আসে তাহলে আপনারা দ্রুত সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করবেন এবং আমাদেরকে জানাবেন।

আমরা জানি কেন্দ্রীয় নেতাদের চেয়ে স্থানীয় প্রতিনিধি বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধৈর্য ধরে শোককে- বেদনাকে শক্তিতে রুপান্তরিত করতে হবে। আর মনে বিশ্বাস রাখুন কেউ সনাতনীকে ধ্বংস করতে পারবে না। মনে প্রাণে সবাইকে সনাতনী হলেই আমরা ভালো থাকবো।

এসময় বক্তারা আরও বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা ৫ই আগস্টের পর অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সনাতনীদের গলায় জোর আনতে হবে। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। আমরা সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি।

কোন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক কারো কোন সম্পদ ও ধর্মীয় উপাসানালয়ে হামলা করেনি। আমরা চাই এদেশের মানুষ সবাই একসাথে এই দেশে বসবাস করতে।

তারা বলেন, সম্প্রতি বিসিএস, পুলিশ ও বিভিন্ন চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন পরীক্ষায় সনাতনীদের বাদ দেয়া হচ্ছে। সমান অধিকারের কথা বলেও একজন চেয়ারম্যান তার দায়িত্ব ফিরে পেলেও সনাতনী হওয়ায় আমাদের এক দাদা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ফিরে পাননি।

তারা বলেন, আপনাদের উপর যেসব হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা হয়েছে সেসব মামলা সম্পর্কে আমাদেরকে দ্রুত জানান। মিথ্যা মামলায় যত ধরনের আইনী সহায়তা প্রয়োজন হয় আমরা যেকোনভাবে তাদের পাশে দাঁড়াবো।

যদি কেউ চাঁদাবাজি করতে আসে তাহলে আপনারা দ্রুত সেনাবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করবেন এবং আমাদেরকে জানাবেন।

আমরা জানি কেন্দ্রীয় নেতাদের চেয়ে স্থানীয় প্রতিনিধি বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধর্য্য ধরে শোককে ও বেদনাকে শক্তিতে রুপান্তিরিত করুন।

আর মনে বিশ্বাস রাখুন কেউ সনাতনীকে ধ্বংস করতে পারবে না। মনে প্রাণে সবাইকে সনাতনী হলেই আমরা ভালো থাকবো।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, পুজা উদযাপন পরিষদ সিলেট জেলা শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপিকা শ্যাম পুরকায়স্থ, কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রজত কান্তি ভট্টাচার্য, সিলেট মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রদীপ কুমার দেব, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট বিমল কান্তি রায়, মৌলভীবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক মহিম দে, জগন্নাথপুর উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিজন দেব, সিলেট জেলা শাখার সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ ভাস্কর রঞ্জন দাশ, সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি কলি তালুকদার আরতি, মহানগর শাখার যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট দেবব্রত চৌধুরী, কোষাধ্যক্ষ ডিজি রুনু, কোতোয়ালী থানা শাখার সভাপতি অরবিন্দু দাশ বিভু, শাহপরান থানার সভাপতি বীরেশ দেবনাথ দেবু, এয়ারপোর্ট থানার সভাপতি নান্টু রঞ্জন সিংহ, দক্ষিণ সুরমা শাখার সাধারণ সম্পাদক নিখিল মালাকার, নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু দাশ রানা চেয়ারম্যান, গোলাপগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক রজত কান্তি দাশ, জকিগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি সঞ্জয় চন্দ্র নাথ,  জৈন্তাপুর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র দেব, কানাইঘাট উপজেলা শাখার সভাপতি ভজন লাল দাশ, গোয়াইনঘাট শাখার সভাপতি সুভাষ চন্দ্র পাল ছানা, কুলাউড়া উপজেলা শাখার আহবায়ক অরুনাভব দে, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুরঞ্জিত চৌধুরী, বিশ্বনাথ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. বিভাংশু গুন বিভু, বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চক্রবর্তি, শ্রীমঙ্গল উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সুদীপ দাশ রিকু, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা শাখার সদস্য সচিব শ্যামল কান্তি দাস, বালাগঞ্জ উপজেলার রংগেশ দাশ, কমলগঞ্জ উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রণীত দেবনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি বিজন দেবনাথ, ছাতক উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক বাবুল রায়, রাজনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রীপদ বৈদ্য, বড়লেখা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ পাল, বিশ্বম্ভপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার বর্মণ, দোয়ারাবাজার উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবুল চন্দ্র দাশ প্রমুখ।

সুচনা বক্তব্যে ৫ আগস্ট ও পরবর্তী সময়ে সিলেট বিভাগে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা মামলার বিবরণী তুলে ধরেন সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জন ঘোষ।

শুরুতেই পবিত্র গীতা পাঠ করেন পূজা দাশ। শনিবার সিলেটের চাঁদনীঘাটস্থ সারদা হলে দুপুর ১২টা থেকে শুরু হয়ে এ সভা বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলে।

এসময় পুজা উদযাপন পরিষদের সিলেটের চার জেলার প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভার সভাপতি, সম্পাদকগণসহ সনাতনী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৬২ বার

Share Button

Callender

March 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31