শিরোনামঃ-

» উপাচার্য কাজী আজিজুল মওলার লাগামহীন অনিয়ম-দুর্নীতিঃ কঠোর হুশিয়ারী ইউজিসির

প্রকাশিত: ১২. নভেম্বর. ২০২৩ | রবিবার

ডেস্ক নিউজঃ
সিলেটের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য কাজী আজিজুল মওলা কর্তৃক সংঘটিত বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে উত্তাপিত সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে পত্র মারফৎ হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর বিধান লঙ্ঘন করে বিদেশে অর্থ পাচার, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটি ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াই নিজের বেতন বৃদ্ধি, আয়কর ফাঁকি দিয়ে বিশ্ববিদল্যালয়ের তহবিল থেকে অর্থ আত্মসাৎ, নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে বিনা ছুটিতে বিদেশ ভ্রমণ, আইন মোতাবেক ট্রেজারারকে দায়িত্বভার হস্তান্তর না করে মাসের পর মাস দেশের বাইরে অবস্থান, আইন লঙ্ঘন করে যুক্তরাষ্ট্রে উপাচার্যের ক্যাম্প অফিস স্থাপন, বিধি বহির্ভূতভাবে ও পাকিস্তানি কায়দায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকুরির বিধিমালা তৈরি সহ প্রায় ডজন খানেক অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করে ইউজিসি।

চলতি বছরের জুলাই মাসে এসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বিষয় তদন্তে উপাচার্য কাজী আজিজুল মওলার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির প্রমাণ পায় ইউজিসির তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

তদন্তপূর্বক ১২ নভেম্বর তারিখে ইউজিসির প্রদত্ত পত্র পর্যবেক্ষণে জানা যায়, চ্যান্সেলরের অনুমোদন ব্যতীত লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য কাজী আজিজুল মওলা বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৪৪ (৬) ধারার বিধান লঙ্ঘন করে নিজ নামে পদক পাওয়ার শর্তে লন্ডন ভিত্তিক ‘অক্সফোর্ড এওয়ার্ড এজেন্সী লিমিটেড’ কে প্রায় আড়াই হাজার পাউন্ড সমপরিমাণ অর্থ তুলে দেন, যার প্রমাণ পায় ইউজিসির তদন্ত কমিটি।

ইউজিসির পত্রের বরাতে জানা যায়, লিডিং ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের কোনরূপ অনুমোদন ছাড়া নিজেই নিজের বেতন বাড়িয়ে নেন উপাচার্য কাজী আজিজুল মওলা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাথে সম্পাদিত চুক্তিতে নির্ধারিত বেতন-ভাতাদির অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেন উপাচার্য কাজী আজিজুল মওলা।

এ বিষয়ে সতর্ক করে উপাচার্যকে একাধিকবার চিঠিও দিয়েছে লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড।

তবে এতে কোনরূপ কর্ণপাত করেননি উপাচার্য আজিজুল মওলা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ কমিটি ও সিন্ডিকেটের অনুমোদন ব্যতিরেকে নিজের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছে ইউজিসি।

এছাড়াও, সুনির্দিষ্ট চুক্তি ব্যতীত আয়কর ফাঁকি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল হতে অতিরিক্ত অর্থ উত্তোলন করা বেআইনী বলে উল্লেখ করেছে ইউজিসি।

উপাচার্য পদের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বিনা অনুমতিতে বিদেশ গমন অর্থাৎ বহিঃবাংলাদেশ অবস্থানকালে আইন মোতাবেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারকে দায়িত্বভার হস্তান্তর না করা আইনগত কর্তৃত্ব বর্হিভূত বলে উল্লেখ করা হয় ইউজিসির পত্রে।

এছাড়াও, উপাচার্য মহোদয় আমেরিকায় অবস্থানকালে VC-LU’s Camp Office, USA ঠিকানা ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্বের সাথে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হয়।

আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ-বিদেশে কোন শাখা থাকার বিধান নেই। কিন্তু উপাচার্য কাজী আজিজুল মওলা কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রে উপাচার্যের কার্যালয় স্থাপনের বিষয়ে আগামী ৩ (তিন) দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেয় ইউজিসি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানায় যায়, উপাচার্য কাজী আজিজুল মওলা কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ৩৭ ধারা লঙ্ঘন করে সংবিধি প্রণয়ন ও জারি করেছেন, যা আইন সঙ্গত হয়নি।

কোন এখতিয়ার বলে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরণ ব্যতিরেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি প্রণয়ন ও জারি করেছেন সে বিষয়ে আগামী তিন (০৩) কর্মদিবসের মধ্যে কমিশনে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য উপাচার্য কাজী আজিজুল মওলাকে নির্দেশ দিয়েছে ইউজিসি ।

বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্যের মতো উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার অসহযোগিতা এবং অনিয়মের কারণে লিডিং ইউনিভার্সিটির সার্বিক কার্যক্রমে অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে ইউজিসি উল্লেখ করেছে।

এতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুচারুরূপে সম্পাদনে বাধা সৃষ্টি হয়েছে এবং লিডিং ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে বিভিন্ন মহলে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দিচ্ছে বলেও জানিয়েছে ইউজিসি।

ইউজিসির পরিচালক মো: ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত এক স্মারকে উপাচার্য কাজী আজিজুল মওলার বিরুদ্ধে আনীত নানান অভিযোগের ব্যাপারে তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে।

একই সাথে তাঁকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ যথাযথভাবে অনুসরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। লিডিং ইউনিভার্সিটির স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষে পারস্পারিক সৌহার্দ বজায় রাখাসহ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ যথাযথভাবে অনুসরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয় ইউজিসির পত্রে।

ইউজিসির আরেক পত্রের বরাতে লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দা জেরিনা হোসেন এবং সাবেক সহযোগী অধ্যাপক স্থপতি রাজন দাস সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, ইউজিসির চিঠি আমি হাতে পেয়েছি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার জানান, স্থাপত্য বিভাগের সাবেক চুক্তিভিত্তিক অধ্যাপিকা সৈয়দা জেরিনা হুসেইন-এঁর চুক্তির মেয়াদ বিগত ৩১ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি. তারিখে সমাপ্ত হয়, ইতোমধ্যেই যার বয়স প্রায় ৭৩ বছর।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগবিধি অনুসারে চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের চাকুরির সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৭০ (সত্তর) বছর নির্ধারিত। ফলে, লিডিং ইউনিভার্সিটির নিয়োগবিধি মোতাবেক নির্ধারিত বয়সসীমা অতিক্রম করায় তাঁর চাকুরীর চুক্তি আর নবায়ন করা হয় নি।

স্থপতি রাজন দাস সম্পর্কে রেজিস্ট্রার বলেন, তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক চাকুরি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। লিডিং ইউনিভার্সিটিতে বিভিন্ন নির্মাণ কাজের বিপরীতে সংঘটিত আর্থিক দুর্নীতির বিষয়ে স্থপতি রাজন দাস সহ জড়িতদের বিরুদ্ধে মাননীয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, সিলেটে মামলা দায়ের করা হয়েছে যা তদন্তাধীন।

মামলার আসামী এবং তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে কথা বলা সমীচীন নয় বলে জানান তিনি।

ইউজিসির চিঠি ও ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক কাজী আজিজুল মওলাকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৮৫ বার

Share Button

Callender

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930