শিরোনামঃ-

» অবৈধ কোর্ট ফি বিক্রি নিয়ে সিলেট আদালত পাড়ায় অচলাবস্থা

প্রকাশিত: ১৭. সেপ্টেম্বর. ২০২২ | শনিবার

স্টাফ রিপোর্টারঃ

সিলেটের আদালত পাড়ায় কোর্ট ফি জালিয়াতি চক্রের হাতে যেন সবাই জিম্মি। বছরের পর বছর স্ট্যাম্প জালিয়াত চক্র ১, ২, ৫, ১০, ২০ টাকা মূল্যমানের জাল কোর্ট ফি বিক্রি করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে এতো দিন সবাই নীরব থাকলেও সম্প্রতি এক অভিযানের পর কোর্ট ফি বিক্রি ও জালিয়াতদের ব্যবসায় ছন্দপতন ঘটেছে।

সম্প্রতি এই জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলে লাপাত্তা হয়ে যায় অপরাধীরা। কিন্তু উল্টো বিপদে পড়েছেন বৈধ ব্যবসায়ীরা। পাওয়া যাচ্ছেনা কোর্ট ফি। কোর্ট থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে বৈধ কোর্ট ফি-ও।

মুলত কোর্ট ফি লাইনেন্সপ্রাপ্ত স্ট্যাম্প ভেন্ডারাই বৈধভাবে বিক্রি করে আসছেন সব সময়। কিন্তু জালিয়াত চক্র তাদের ডিঙ্গিয়ে প্রশাসনের নাকের ডগায় কোর্ট ফি সরবরাহ করে আসছে। তাদের নৈরাজ্যকর অবস্থার কারনে সরকার যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছে তেমনি জালিয়াতির মাধ্যমে নকল কোর্ট ফি ছড়াছড়িতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ব্যবহারকারীরা।

তথ্যমতে, গত ১২ সেপ্টেম্বর আদালত পাড়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালানোর পর লাপাত্তা রয়েছে অবৈধ কোর্ট ফি বিক্রিকারীরা।

স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতির অভিযোগ- অভিযানে পর থেকে প্রকৃত কোর্ট ফি জজশীপ থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে অবৈধ বলে।

এ নিয়ে সিলেট জেলা স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতি ট্রেজারি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জজশীপ থেকে ফেরত আসা কোর্ট ফি জমা দিতে বলেন এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টির সুরাহা করবেন বলে সমিতিকে আশ্বস্থ করেছিলেন। কিন্তু গত বুধবার জমা দেবার কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও কোন সুরাহা না হওয়াতে বেশ বেকায়দায় পড়েছেন স্ট্যাম্প/কোর্ট ফি ব্যবসার সাথে জড়িতরা। এছাড়াও অবৈধ কোর্ট ফি বিক্রি বন্ধ হওয়াতে প্রকৃত কোর্ট ফি‘র চাহিদা বেড়ে গেছে বহুগুন।

কোর্ট ফির সংকট দুরীকরণের লক্ষে অতিরিক্ত চাহিদার কথা ট্রেজারি বিভাগকে জানিয়ে গত মঙ্গলবার জরুরী ভিত্তিতে চালান নেয়ার মৌখিক আবেদনের প্রেক্ষিতে ট্রেজারি বিভাগও স্ট্যাম্প ভেন্ডারদের চালান গ্রহনের অনুমতি প্রদান করেন। এবং স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা বাংলাদেশ ব্যাংকে কোর্ট ফির চালান জমা করেন।

স্ট্যাম্প ভেন্ডাররা তাদের ক্ষোভের কারন হিসেবে তারা বলছেন- আমরা বৈধ কোর্ট ফি বিক্রি করার পরেও জজশীপ থেকে কেন যাচাই না করে কোর্ট ফি ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে?

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যে সব কোর্ট ফি জজশীপ থেকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে ক্রেতারা সেই কোর্ট ফি ট্রেজারি বিভাগে গিয়ে যাচাই করলে তাদের ক্রয়কৃত কোর্ট ফি বৈধ বলে জানানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ট্রেজারি বিভাগের কোর্ট ফি যাচাই করার যে মেশিন এবং জেলা জজশীপের কোর্ট ফি যাচাইয়ের মেশিন রয়েছে এই দুটির মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জেলা জজশীপের মেশিনে পরীক্ষা করে বৈধ কোর্ট ফি-কে অবৈধ বলা হলেও ট্রেজারিতে পরীক্ষা করে সেটিই বৈধ বলে জানানো হচ্ছে।

তবে সিলেট জেলা বারের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট মো.মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন, বিষয়টা মেশিনের পরীক্ষার। আমরা চেষ্টা করছি কোথায় সমস্যা হচ্ছে। আমাদের সাথে জড়িত যেহেতু আমরা দেখব কিভাবে সমাধান করা যায়।

এদিকে এই বিষয়টি নিয়ে আজ শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেট জেলা স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতি নগরীর তালতলাস্থ একটি হোটেলের হলরুমে বিশেষ সভায় মিলিত হয়েছেন। সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল খালিক এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব আশরাফ উদ্দিন এর পরিচালনায় সভায় সমিতির বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন- জেলা জজশীপ থেকে ফেরত আসা কোর্ট ফি ট্রেজারি বিভাগে যাচাইয়ের জন্য জমা দিয়েছেন, তা যাচাই করে সিদ্ধান্ত না দেয়া পর্যন্ত তাদের চালানের কোর্ট ফি‘র ডেলিভারি আনবেন না।

তাদের দাবী জেলা জজশীপ, ট্রেজারি বিভাগ ও জেলা বারের মধ্যে সমন্বয় হলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এ নিয়ে তারা জেলা জজশীপ, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সভা থেকে। পাশাপাশি অবৈধ স্ট্যাম্প বিক্রেতারা যেন আর ফিরে না আসতে পারে সে দিকে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।

তারা আরও বলছেন সমস্যার সমাধান করে চাহিদা অনুযায়ী কোর্ট ফি ডেলিভারি আনলে সংকট থাকবেনা।

ছবির ক্যাপশন: সিলেট জেলা স্ট্যাম্প ভেন্ডার সমিতির বিশেষ সভায় সদস্যবৃন্দ।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ১৪৮ বার

Share Button

Callender

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930