শিরোনামঃ-

» জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলার শোক সভা

প্রকাশিত: ২৭. নভেম্বর. ২০২১ | শনিবার

বিপ্লবী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রসেনানী ছিলেন ডা. এম এ করিম

স্টাফ রিপোর্টারঃ

এদেশের সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজিবিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের আপোসহীন অকুতোভয় দৃঢ়চেতা সাহসী জননেতা জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সভাপতি এবং সাপ্তাহিক সেবা পত্রিকার সম্পাদক ডা. এম. এ. করিম এর মৃত্যুতে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে ২৭ নভেম্বর ২০২১ সন্ধ্যা ৬টায় শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।

শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট কুমার চন্দ্র রায়।

প্রয়াত নেতা ডা. এম এ করিমের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের শেষ দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রয়াত নেতার মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন এনডিএফ সিলেট জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলম।

শোকসভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শ্যামল ভৌমিক, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রমিকনেতা রজত বিশ্বাস, দফতর সম্পাদক রহমত আলী, এনডিএফ সিলেট জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. ছাদেক মিয়া, জাতীয় ছাত্রদল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি, সিলেট জেলা শাখার সদস্য বদরুল আজাদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ১৯৪২ সালে মেট্রিক পাস করে ঢাকার মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় ডা. করিমের জীবনের এক নতুন অধ্যায়। মেডিকেল স্কুলে ভর্তি হওয়ার প্রাক্কালেই শুরু হয়ে যায় ’৪৩ এর দুর্ভিক্ষ। এ সময় তিনি দেখলেন বাজারে মহাজন ও ধনী ব্যবসায়ীদের হাতে পর্যাপ্ত মজুদ খাদ্য সামগ্রী বাজার থেকে তা উধাও করে কৃত্রিম সঙ্কট দেখিয়ে সৃষ্টি করা হয় এই দুর্ভিক্ষ। ‘পঞ্চাশের মন্বন্তর’ নামে পরিচিত এই দুর্ভিক্ষে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ লোক মারা যায়। তিনি প্রত্যক্ষ করলেন রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার উলঙ্গ বীভৎস রূপ। একদিকে কৃষক, শ্রমিক, গরীব দিনমজুরসহ নিম্নবিত্তদের খাদ্য জুটছে না। হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ খাদ্যের অভাবে নয়তো কুখাদ্য খেয়ে মারা যাচ্ছে। রোগবালাইয়ে কঙ্কালসার দেহ নিয়ে তারা রাস্তাঘাটে নানা স্থানে পড়ে পড়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ধুঁকছে অথচ বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী সরকার ও তাদের সহচর স্বার্থান্বেষী বা কোন ভ্রুক্ষেপ করছে না। উপরন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উন্মাদনায় ফাটকা বাজিতে লিপ্ত হয়ে এই মানবিক বিপর্যয়কে চরম মাত্রায় নিয়ে যায়। ডাঃ এম এ করিম এভাবেই প্রত্যক্ষ করলেন সাম্রাজ্যবাদের হিংস্র রূপটি।

সে সময় তিনি সামন্ত-জোতদার মহাজন শ্রেণির শোষণ-লুণ্ঠনের নির্মমতা তিনি দেখলেন। ভূমিহীন, দরিদ্র কৃষক, দিনমজুর গরীবেরা কিভাবে তীব্র অভাব অনটন, অত্যাচার ও সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়। সে সময় তিনি প্রত্যক্ষ করলেন দেশপ্রেমিক একদল তরুণ দুর্ভিক্ষ কবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে বাঁচানোর জন্য নিঃস্বার্থ, আত্মত্যাগের এক অভূতপূর্ব তৎপরতা। এদের মধ্যে কাজ করছে প্রচণ্ড আদর্শবোধ ও দেশপ্রেমের অনন্য উন্মাদনা। নিরন্ন, অসুস্থ, অসহায় মানুষের খাবার জোগাতে চিকিৎসা দিতে যেমন নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন পাশাপাশি গণবিরোধী রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা উচ্ছেদ করতে নিজেদেরকে নিবেদিত করে দিয়েছেন। এদের এই আদর্শবোধের উৎস হলো কমিউনিস্ট মতধারা। তারা সমাজ থেকে শোষণ-লুণ্ঠন উচ্ছেদ করে ধনবৈষম্য শ্রেণিবৈষম্য বিলোপ ঘটিয়ে সকল শোষিত শ্রেণিকে মুক্ত করতে চান। এদের সংস্পর্শে এসে ডা. এম এ করিম যুক্ত হয়ে গেলেন তাঁদের সাথে। পরিচিত হলেন প্রথমে ডাঃ বারীর সঙ্গে, পরবর্তীতে পরিচয় ঘটলো মোহাম্মদ তোয়াহার সঙ্গে। এরা প্রত্যেকেই ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। কমিউনিস্টদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে ডাঃ এম এ করিম হয়ে উঠলেন রাজনৈতিক কর্মী। সে রাজনীতি আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য নয়; সে রাজনীতি হল গণমানুষের মুক্তির জন্য। যা ডা. এম এ করিম আজীবন লালন করেছেন। ডা. এম এ করিম অত্যন্ত সচেতন ছিলেন আজকের যুগে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের নেতৃত্ব ছাড়া সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সফল হবে না। এজন্যে তিনি সবসময় কমিউনিস্ট পার্টির সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। ১৯৮০ সালের পর থেকে তিনি পুনরায় সক্রিয়ভাবে রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হন। বামহঠকারী সুবিধাবাদী প্রবণতা ও তিনবিশ্ব তত্ত্ব ইত্যাদি কেন্দ্র করে বাংলাদেশের সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রশ্নে যে লেজুড়বাদী রাজনীতি সামনে আসে তিনি এর মুখোশ উন্মোচনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। এ লক্ষ্যেই ১৯৮১ সালের ৪ এপ্রিল তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাপ্তাহিক সেবা। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন ডাঃ এম. এ. করিম। যা ছিল বাংলাদেশ সৃষ্টির পর সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ বিরোধী জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী ঘটনা। যার অন্যতম নায়ক হলেন ডা. এম এ করিম। তিনি ছিলেন এক জীবন্ত ইতিহাসের অগ্রসেনা ও ইতিহাসের কালপঞ্জী।

বক্তারা বলেন, দেশের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণ আজ স্বৈরচারী শাসন-শোষণে দিশেহারা। চাল, ডাল, তেল, চিনি, শাক-সবজিসহ দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে জর্জরিত জনগণের উপর ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধি ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে। সরকার এক লাফে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে মালিকদের সাথে যোগসাজসে ধর্মঘটের নামে জনগণকে জিম্মি করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বাস ও লঞ্চের ভাড়া শতকরা প্রায় ২৭-৩৫% বৃদ্ধি করেছে। অথচ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম তলানিতে নেমে আসার সময় দেশে জ্বালানি তেলের দাম না কমানোয় গত সাত বছরে বিপিসি ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি লাভ করেছে। সেই টাকা ভর্তুকি দিলে জ্বালানি তেল ও পরিবহণ ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ত না। সরকার দায়হীনভাবে পানি, সিলিন্ডার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় অটোগ্যাস, ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য বৃদ্ধি করেছে, আগামীতে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ১৩ বছরে ১৪ দফায় পানি, ৭ দফায় গ্যাস, ১০ দফায় খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৯০ শতাংশ, একাধিকবার জ্বালানি তেলে মূল্য বৃদ্ধি করে শ্রমিক, শ্রমজীবী, স্বল্প আয়ের মানুষ ও ব্যাপক জনগণের জীবন-জীবিকাকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুত, পানিসহ নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে জনগণ দিশেহারা। অথচ সরকার একদিকে উন্নয়নের বাজনা বাজাচ্ছে আবার একই সাথে জীবন জীবিকার সকল প্রয়োজনীয় বিষয়কে রাষ্ট্রীয়, দলীয় ও ব্যবসায়ীদের অবাধ লুটপাট ও লাগামহীন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরিণত করে চলেছে। করোনা মহামারিতে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ার সাথে সাথে লুটপাটকারীদের অর্থবিত্ত বৈভব বেড়ে যাওয়ায় দেশে ২০২০ সালেই ১০ হাজার ৫১ জন নতুন কোটিপতির সৃষ্টি হয়েছে। পক্ষান্তরে একই সময়ে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন প্রায় ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ। অথচ সরকারের মন্ত্রীরা নির্লজ্জদের মতো বলে বেড়াচ্ছেন জনগণ নাকি ঘুমের মধ্যে বড়লোক হয়ে যাচ্ছেন। নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় এ যাবৎ অধিষ্টিত সকল সরকারই হচ্ছে সামন্ত আমলা মুৎসুদ্দি শ্রেণির স্বার্থরক্ষাকারী সরকার। তারা কখনোই জনগণের কথা ভাববে না- এটাই স্বাভাবিক। তাই জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ, আমলা দালালপুঁজি বিরোধী শ্রমিক-কৃষক জনগণের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম গড়ে বিকল্প নেই-এটাই ডা. এম এ করিমের শিক্ষা।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ১৮২ বার

Share Button

Callender

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930