শিরোনামঃ-

» ৮৮ ঘণ্টায়ও চেষ্টা চালিয়ে সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না

প্রকাশিত: ৩০. এপ্রিল. ২০১৬ | শনিবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের ২৫নং কম্পার্টমেন্টের তুলাতলা ও টেংরা এলাকার আগুন ৩ দিনেও নেভাতে পারেনি বনবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

প্রায় ৩৫ একর বনভূমির বিভিন্ন স্থানে এখনো ধোঁয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে নিভু নিভু করে আগুন জ্বলছে। আগুন দেওয়ার অভিযোগে উত্তর রাজাপুর গ্রাম থেকে খলিলুর রহমান হাওলাদার (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। খলিলুর রহমান উত্তর রাজাপুর গ্রামের চাঁন মিয়ার হাওলাদারের ছেলে।

শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, আগুন দেওয়ার অভিযোগে খলিলুর রহমানকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে চলতি মাসের ১৩ ও ১৮ এপ্রিল সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের নাংলী এলাকায় পৃথক আগুনের ঘটনায় বন বিভাগ শরণখোলা থানা এবং বন আদালতে দু’টি মামলা দায়ের করে।

বুধবার বিকালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাইরেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের ২৫ নাম্বার কম্পার্টমেন্টের তুলাতলা এলাকায় ওই আগুন লাগে।আগুন দেয়ার অভিযোগে স্থানীয় কয়েকজন দুর্বৃত্তকে আসামী করে বনবিভাগ পৃথক দু’টি মামলা করে। ওই মামলার আসামীরা বন বিভাগের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে দাবী করেছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

’উল্টো পথে এসে বিভিন্ন স্থানে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা : র‌্যাবএদিকে, সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর শুক্রবার র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান(র‌্যাব)- ৬ খুলনার কমান্ডিং অফিসার (সিও) খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, ব্যক্তিস্বার্থে কতিপয় দুর্বৃত্ত বনে আগুন দেয়।

এ নিয়ে মামলা করায় ক্ষুব্ধ হয়ে তারা প্রতিশোধ নিতে আবারও আগুন দেয়। সম্প্রতি ধানসাগর স্টেশনে বন রক্ষায় ওয়াচ টাওয়ার স্থাপনের কারণে সর্বশেষ (২৭-এপ্রিল) ওই দুর্বৃত্তরা উল্টো পথে নৌকায় করে বনের ভেতর দিয়ে এসে আধা কিলোমিটার পর পর ৬/৭টি স্থানে আাগুন দিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ অপরাধীদের দমনে প্রয়োজনীয় সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

অগ্নিকান্ড সংগঠিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সুন্দরী, গেওয়া, বলাসহ অসংখ্য গছপালা ও লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে বন্যপ্রাণীও মারা পড়েছে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ বিরামহীনভাবে চালিয়ে যাচ্ছে।

তাছাড়া বনসংলগ্ন এলাকার শতাধিক মানুষ স্বেচ্ছায় আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় এবং পানি সরবরাহের সুব্যবস্থা না থাকায় আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মরতদের। পরিকল্পিত এই আগুন পুরোপুরি কখন নেভানো সম্ভব হবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।

চলতি বছরে সংঘটিত ৪ দফা অগ্নিকান্ডের মধ্যে এটিই ভয়াবহ অগ্নিকান্ড বলে মন্তব্য করেছেন আগুন নেভানোর কাজে অংশগ্রহণকারীরা। তবে, আগুনের তীব্রতা কিছুটা কমে গেছে এবং তা এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে বলে দাবি করেছে বনবিভাগ।

শুক্রবার দুপুরে বনবিভাগের খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. জহির উদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এদিকে, সুন্দরবনে এক মাসে ৪ বার অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং বনবিভাগ।

গোটা পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ (শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জ) জুড়ে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। জেলে, বাওয়ালী, মৌয়ালদের পাশ-পারমিট এবং বনে সব ধরনের জনসাধারণের প্রবেশ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

14তবে, বিদেশি পর্যটকরা অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর আগে বৃহস্পতিবার শুধুমাত্র চাঁদপাই রেঞ্জে সব ধরনের পাশ-পারমিট বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে গোটা পূর্ব সুন্দরবনজুড়েই এ নির্দেশ জারি করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়। এ দুটি রেঞ্জে র‌্যাবসহ কোস্টগার্ড সদস্যরাও টহলে রয়েছে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।

প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. ইউনুছ আলী বলেন, অপরাধীদের বিষয়ে বন অধিদফতর জিরো টলারেন্স দেখাবে। সুন্দরবন ধ্বংসের সাথে যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সকল বিভাগের সাথে যোগাযোগ রাখছি।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুন্দরবন সুরক্ষার স্বার্থে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সুন্দরবনের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত সব ধরনের পাশ-পারমিট বন্ধ ও সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

বর্তমানে যারা পাশ পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে অবস্থান করছেন তাদের দ্রুত বন থেকে বের হয়ে যাওয়ার র্নিদেশ দেয়া হয়েছে। তদন্তের পাশাপাশি জিপিএস সিস্টেমের মাধ্যমে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।

আগুন এখন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আগুন নিভানোর কাজে নিয়োজিত এক বন কর্মী বলেন, বনরক্ষীদের নানা সংকট থাকলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনা না করে সুন্দরবনে অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিয়ে থাকেন।

দুর্গম বনের আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়া খুবই ব্যয় বহুল ও কষ্টকর। গত ১ মাসে ৪ দফা অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রণ করতে যেয়ে বনরক্ষীরা ক্লান্ত হয়ে পড়লেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনা না করে বরখাস্ত করে তারা ওপর মহলে সাধু সাজে।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মানিকুজ্জামান মানিক বলেন, বুধবার সন্ধ্যা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৩টি ইউনিট বিরতিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

ঘটনাস্থলের প্রায় ২ কিলোমিটার দূর থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে । প্রচন্ড গরমে একনাগাড়ে কাজ করতে গিয়ে কর্মীরা ক্লান্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

এবার আগুনের বিস্তৃতি অনেক বেশি। বাতাসের কারণে এরইমধ্যে আগুন ওই এলাকার উত্তর ও দক্ষিণ দিকের কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়েছে।

ফলে আগুন নেভাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ঘটনাস্থলটি বেশ দুর্গম হওয়ায় সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত দমকল কর্মীদের পক্ষে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।

দমকল কর্মীরা প্রখর তাপদাহে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এজন্য খুলনা ফায়ার সার্ভিস থেকে ১২ সদস্যের একটি দল শুক্রবার সকালে সুন্দরবনে এসে কাজে যোগ দিয়েছেন। তাছাড়া তীব্র বাতাসের কারণে আগুন নেভানোর কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকায় এখনো ধোঁয়ার কুন্ডলী পাকিয়ে আগুন জ্বলে উঠছে। আগুন পুরোপুরি নেভাতে কতো সময় লাগবে তা বলা যাচ্ছে না। সম্পূর্ণ নিভে না যাওয়া পর্যন্ত দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে অবস্থান করবেন বলে জানান তিনি।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাংশের নিচু এলাকায় এর আগেও বিভিন্ন সময়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।

এ মৌসুমে বাতাসের তীব্রতা থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণ করাও কঠিন হয়।

২০১৪ সালে চাঁদপাই রেঞ্জের গুলিশাখালী ক্যাম্প সংলগ্ন পয়ষট্টিছিলা এলাকায় বনে আগুন লেগে অন্তত ৫ একর বনভূমি পুড়ে যায়। ২০১১ সালে ধানসাগর স্টেশনের নাংলি ক্যাম্প এলাকায় পুড়ে যায় ২ একর বনভূমি।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৯৬ বার

Share Button

Callender

May 2024
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031