শিরোনামঃ-

» ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ফাইনাল পরীক্ষা দিতে দেননি

প্রকাশিত: ০৪. ডিসেম্বর. ২০১৬ | রবিবার

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ হবিগঞ্জে ধর্ষণের শিকার এক কিশোরীকে তার স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্লাস করতে ও বছর শেষের ফাইনাল পরীক্ষা দিতে দেননি বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে।
এরপর শনিবার (৩ ডিসেম্বর) উপজেলার প্রশাসন, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের কর্মকর্তারা কিশোরীটির ভবিষ্যৎ নিয়ে এক বৈঠক করেছেন।
পরিবার বলছে, মেয়েটির আর কোনদিন স্কুলে পড়া হবে কিনা তাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জুলাই মাসে ধর্ষণের ঘটনার পর তার পরিবারের করা এক মামলায় দু’জনকে স্থানীয় পুলিশ গ্রেফতার করে।

হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয়ে বছর শেষে ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে কয়েক দিন আগে। কিন্তু ধর্ষণের শিকার হওয়া সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীর পরীক্ষা দেয়া হচ্ছে না।

তার বাবা হরিধন চক্রবর্তী বলছেন, স্কুলের কর্তৃপক্ষ তাকে ঐ ঘটনার পর থেকে ক্লাসেও যেতে দেয়নি। মি. চক্রবর্তী বলেছেন, “ঘটনা ঘটার দশদিন পর আমি স্কুল হেডমাস্টার সারের সাথে দেখা করেছিলাম।

উনি তখন বললেন আপনার মেয়ে স্কুলে আসতে পারবে না। কিন্তু পরীক্ষা দিতে পারবে। এখানে আসল বহুজন বহু কথা বলবে। স্কুলটা অপবিত্র হয়ে যাবে। তাই সে শুধু পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দেবে।”
কিন্তু তাকে শেষ পর্যন্ত পরীক্ষাও দিতে দেয়া হয়নি বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “২৮ তারিখ পরীক্ষা শুরু হয়। ওর মা ২৭ তারিখ সকালে স্কুলে বেতন নিয়ে গিয়েছিলো। তখন বলা হয়েছে সে এখানে পরীক্ষা দিতে পারবে না। দিলে অসুবিধা আছে। ম্যানেজিং কমিটি থেকে নিষেধ করা হয়েছে।”

ইতিমধ্যেই ৪টি পরীক্ষা হয়ে গেছে। মেয়েটির ক্লাস এইটে ওঠা হবে কি-না সেটি আর নিশ্চিত নয়। এমনকি তার আর কোনদিন স্কুলে পড়া হবে কিনা তাও অনিশ্চিত হয় পড়েছে বলে জানাচ্ছে তার পরিবার। ঘটনার সূত্রপাত এ বছরের জুলাই মাসের শেষের দিকে কাজের লোভ দেখিয়ে তাকে নিয়ে গিয়েছিলো প্রতিবেশী এক নারী।

একদিন নিখোঁজ থাকার পর তাকে অচেতন অবস্থায় বাহুবলের একটি বাজারের ধারে রাস্তায় খুঁজে পায় স্থানীয় লোকজন। বাহুবল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, ঘটনার পর পরিবারের করা এক মামলায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এখন মেয়েটিকে কেন স্কুলে যেতে দেয়া হচ্ছে না সে বিষয়ে শাহজালাল উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে স্কুল কমিটির সভাপতি আবুল হাশেম মেয়েটির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই তিনি থেমে যান। এর পর আর তাকে টেলিফোনে পাওয়া যায়নি।

তবে বিষয়টি নিয়ে সন্ধ্যার পরই আলাপে বসেছেন উপজেলার প্রশাসন,স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের কর্মকর্তারা। বাহুবলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বিবিসিকে জানিয়েছেন, কাল থেকে মেয়েটি যাতে পরীক্ষা দিতে পারে সেটি নিশ্চিত করা হচ্ছে।

তিনি বলছেন, “এটা তারা (স্কুল কর্তৃপক্ষ) আমাকেও বলেছে যে মেয়েটি নিজে বের হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা তো এর কোন সত্যতা এখনো পাইনি। আমি তাদের বলেছি এসব কথা শোনা যাবে না। আগামী দিন সে পরীক্ষা দিতে আসবে। এবং তার পরীক্ষা নিতে হবে।”

কিন্তু ততক্ষণে স্কুলের সহপাঠী, পাড়ার লোকজন সবাই জেনে গেছেন মেয়েটিকে স্কুলে নেয়া হচ্ছে না আর সেজন্যে সে নিজেই দায়ী।

তাই তার ভবিষ্যৎ নিয়ে পরিবারের এই দুশ্চিন্তা। তবে দরকারে মেয়েকে অন্য কোথাও নিয়ে হলেও পড়াশোনা করাতে চান তারা।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৩৫৬ বার

Share Button

Callender

May 2024
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031