শিরোনামঃ-

» বাসদ (মার্কসবাদী) দলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, অনন্যসাধারণ কমিউনিস্ট বিপ্লবী কমরেড মুবিবুল হায়দার চৌধুরীর ২য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ২৯. জুলাই. ২০২৩ | শনিবার

ডেস্ক নিউজঃ
বাংলদেশের বিপ্লবী আন্দোলনের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, আমাদের প্রিয় নেতা,শিক্ষক ও বাসদ (মার্কসবাদী)’দলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কমরেড মুবিবুল হায়দার চৌধুরীর ২য় মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণসভা আজ শনিবার (২৯ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৪টায় সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনের ৩ নং হলে অনুষ্ঠিত হয়।
সিলেট জেলা শাখার আহ্বায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়ের সভাপতিত্বে স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন দলের জেলা কমিটির সদস্য ফাতেমা ইমা,বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলা শাখার সভাপতি মোখলেসুর রহমান, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র সিলেট জেলা শাখার আহবায়ক তামান্না আহমেদ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখার সভাপতি সঞ্জয় কান্ত দাস।
আলোচনা পর্বের শুরুতে কমরেড মুবিবুল হায়দার চৌধুরীর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার নেতৃবৃন্দ ও বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট নগর শাখা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট শাবিপ্রবি শাখা ও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ফেডারেশন এর নেতৃবৃন্দ।
স্মরণ সভায় বক্তরা বলেন, “কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতের চট্টগ্রাম জেলার বাড়বকুন্ডতে জন্মগ্রহণ করলেও কলকাতার খিদিরপুরে চাকরিরত তার এক ভাইয়ের আশ্রয় চলে যান। সেখানেই  আকস্মিকভাবে ১৯৫১ সালে সোশালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অফ ইন্ডিয়া (কমিউনিস্ট) সংক্ষেপে এসইউসিআই (সি) এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট মার্কসবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষের সাথে তাঁর পরিচয় ঘটে। তিনি কমরেড শিবদাস ঘোষের মার্কসবাদ- লেনিনবাদের যুগোপযোগী বিশেষীকৃত প্রজ্ঞাদীপ্ত ব্যাখ্যা -বিশ্লেষণ, তাঁর অসাধারণ চরিত্র, শোষিত মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, সকল প্রতিকূলতা অগ্রাহ্য করে বিপ্লবী দল গঠন এবং সংগ্রামে অদম্য দৃঢ়তা ও মনোবল, বিরল সাংগঠনিক শক্তি যতটা ওই বয়সে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন – তাতে গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়ে কমরেড শিবদাস ঘোষকে শিক্ষক ও নেতা মেনে বিপ্লবী আন্দোলনকে জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেন। ভারতবর্ষে এসইউসিআই (কমিউনিস্ট) দলের সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে তিনি শ্রমিক, কৃষক ও ক্ষেতমজুর, ছাত্র -যুবকদের সংগঠিত করেন এবং আন্দোলন গড়ে তোলেন।  সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলায় তিনি অসাধারণ যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন। কংগ্রেস সরকার বিরোধী নানা আন্দোলনে তিনি বেশ কয়েকবার কারারুদ্ধ হন”।
বক্তারা আরও বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে কমরেড মুবিনুল হায়দার সীমান্তবর্তী শরণার্থী শিবিরগুলোতে ঘুরে ঘুরে পার্টির পক্ষ থেকে ত্রাণ কার্য পরিচালনা করেন এবং প্রশিক্ষণ শিবিরগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এরপর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তিনি এসইউসিআই (সি) দলের অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে মার্কসবাদ -লেলিনবাদ – শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার ভিত্তিতে বিপ্লবী দল গঠনের স্বপ্ন নিয়ে স্বদেশে চলে আসেন। বাংলদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে শাসক বুর্জোয়াশ্রেণির শোষণের বিরুদ্ধে মুক্তির আকুতি তৈরি হয়। এরই অংশ হিসেবে ছাত্র যুব সমাজ ও জনগণের মধ্যে শোষণমুক্ত ব্যবস্থা সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আকুতি সৃষ্টি হয়। সঠিক পথ দেখাবার মতো কোনো যথার্থ বিপ্লবী দল ও নেতৃত্ব ছিল না। এই পরিস্থিতিতে কমরেড শিবদাস ঘোষের অমূল্য শিক্ষা ও অসাধারণ সংগ্রামের দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে এক কঠিন ও কঠোর সংগ্রামে লিপ্ত হন। সেই সময় তাঁর কোন পরিচিতি ছিল না, সঙ্গী-সাথী ছিল না, যোগাযোগ ছিল না, থাকা-খাওয়ার সংস্থান ছিল না। এই অবস্থায় কমরেড শিবদাস ঘোষের বৈপ্লবিক চিন্তা সম্বলিত কয়েকটি পুস্তক হাতে নিয়ে তিনি নানা স্থানে ঘুরেছেন, বিভিন্ন বামপন্থী দলের নেতা- কর্মী ও বুদ্ধিজীবী যাকেই পেয়েছেন তাকেই এইসব পুস্তক দিয়েছেন, নিজের উপলব্ধি অনুযায়ী মার্কসবাদী- লেনিনবাদ- শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার ভিত্তিতে আলোচনা করেছেন। এই প্রক্রিয়ায় সদ্য সংগঠিত যৌবনোদ্দীপ্ত জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর অনেক নেতৃবৃন্দ, সংগঠক তাঁর রাজনৈতিক ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং দল গড়ে তোলার আদর্শগত- সাংগঠনিক সংগ্রাম সম্পর্কে তাঁর মাধ্যমে শিক্ষিত হয়ে ওঠেন। এদেরই একটি অংশ পরবর্তীতে জাসদ নেতৃত্বের হঠকারিতা, আপসকামিতা, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক ভ্রান্তির বিরুদ্ধে দলের অভ্যন্তরে মতাদর্শগত সংগ্রামে লিপ্ত হন। এই নেতা- কর্মীদের নিয়ে তিনি ১৯৮০ সালে প্ল্যাটফর্ম অফ অ্যাকশন হিসেবে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) গড়ে তোলেন । মার্কসবাদ- লেলিনবাদ- শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার ভিত্তিতে নতুন করে বিপ্লবী দল গড়ে তোলার এই সংগ্রামের মূল কেন্দ্র ছিলেন কমরেড মুবিনুলর হায়দার চৌধুরী “
বক্তারা আরও বলেন, সর্বহারা নৈতিকতা ও উন্নত রুচি-সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে তার জীবন সংগ্রাম ও আচরণ দলের নেতাকর্মীদের সামনে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে সবসময় ছিল। তিনি যখন যেখানে অবস্থান করেছেন, সব সময় নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের কাছে কমরেড শিবদাস ঘোষ সহ মার্কসবাদী অথরিটিদের জীবন ও শিক্ষাকে তুলে ধরেছেন। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ, রাজনীতি অর্থনীতি, ইতিহাস, রুচি- সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য, সংগীতসহ জ্ঞান জগতের ও জীবনের সকল সমস্যা সম্পর্কে মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ধরানোর জন্য ক্লান্তিহীনভাবে আলাপ- আলোচনা করেছেন। নিজের হাতে তিনি অসংখ্য বিপ্লবী কর্মী, সাংগঠনিক ক্যাডার ও সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী-দরদী তৈরি করেছেন। বাসদ-এর অভ্যন্তরে কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষার গুরুত্ব প্রসঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্যসহ বিপ্লবী দল গড়ে তোলার মূলনীতিগত প্রশ্নের মৌলিক পার্থক্য দেখা দিলে ২০১৩ সালের ১২ এপ্রিল কমরেড মুবিনুল হায়দারকে আহ্বায়ক করে ‘বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটি’ নামে নতুন দল গঠিত হয় যা পরে কনভেনশনের মাধ্যমে বাসদ (মার্কসবাদী) নাম গ্রহণ করে। আদর্শগত প্রশ্নে পুরনো দলে বাহ্যিক সম্মান, প্রতিষ্ঠা, নিরাপদ জীবন থেকে বেরিয়ে এসে ৮০ বছর বয়সে শূন্য হাতে নতুন করে সংগ্রাম শুরু করার ঘটনা কমরেড মুবিনুল হায়দারের দৃঢ় চরিত্র, উচ্চ মনোবল ও গভীর আদর্শবাদের পরিচায়ক। সামগ্রিকভাবে বলা চলে কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরীর সংগ্রামের ফলে বাংলাদেশে মার্কসবাদের এক সঠিক উপলব্ধি ও জীবনব্যাপী চর্চা এবং বামপন্থী আন্দোলনে এক নতুন ধারা প্রবর্তিত হয়।”
পরিশেষে নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশ এক ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে আক্রান্ত। মানুষের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার আজ ভূলুন্ঠিত। সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে। বিএনপি সহ অন্যান্য বিরোধীদল তারা ব্যস্ত কি করে ক্ষমতায় যাওয়া যায়। সরকার কিংবা বিরোধী দল- এরা কেউই জণগণের কথা একদমই ভাবছে না। এ পরিস্থিতিতে তীব্রতর গণআন্দোলন একান্ত জরুরি। আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে এ সংগ্রাম গড়ে তুলতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ|

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ১৫৬ বার

Share Button

Callender

February 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
2425262728