শিরোনামঃ-

» ছাতক পৌরসভার নারী কাউন্সিলর কাকলী সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা

প্রকাশিত: ০৮. সেপ্টেম্বর. ২০২১ | বুধবার

স্টাফ রিপোর্টারঃ

সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর তাছলিমা জান্নাত কাকলীসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা।

সুনামগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছাতক-সুনামগঞ্জ আদালতে বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) ইজিবাইক স্ট্যান্ড ছাতকে ম্যানেজার আতিকুল মিয়া বাদী হয়ে সি আর মোকাদ্দমাটি দায়ের করেন।

মামলার আসামীরা হলেন, নারী কাউন্সিলর তাছলিমা জান্নাত কাকলী, কাউন্সিলর কাকলীর স্বামী মাছুম আহমদ (৪৫), কাকলীর ভাই নোমান ইমদাদ কানন (৩৫) ও কার্জন মিয়া (২৮) ।

মামলার বাদী আতিকুল মিয়া জানান, ২২ আগস্ট ২০২১ ইংরেজি দুপুর ১২টার দিকে ১নং আসামী কাউন্সিলর কাকলীর ছত্রছায়ায় থেকে অন্যান্য আসামীরা এলাকায় অপরাধ সংঘটিত করে থাকে। ছাতকে বাজারে খোকন চৌধুরীর মার্কেটের সামনে ব্যাটারিচালিত (অটো বাইক-ইজি বাইক) গাড়ি চলাচল করে এবং আমি এই স্ট্যান্ডের ম্যানেজার হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে দায়িত্বপালন করে আসছি। ব্যাটারচালিত গাড়ি বন্ধ থাকা সরকারি নির্দেশনা থাকিলেও ড্রাইবার ও শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার জন্য চালকগণ উল্লেখিত স্ট্যান্ড হতে গ্রামীন এলাকায় গাড়িগুলো লোকজন নিয়ে চলাচল করে থাকে। ছাতক পৌরসভা কতৃক সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক গাড়িগুলো বন্ধ থাকার তাগিদ থাকা সত্ত্বেও গরীব চালকরা পরিবার পরিজন ও জীবিকার নির্বাহের দায়ে উক্ত স্ট্যান্ড হতে গাড়িগুলো চালিয়ে আসছিলো।

এলাকার প্রভাবশালী চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা উল্লেখিত কাকলী, মাছুম, নোমান, কার্জন আসামীগণ প্রায় স্ট্যান্ডে এসে আমাদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিলো এবং চাঁদা না দিলে আসামীরা গাড়ি চলাচল বন্ধ, মারিপিঠ ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো।

১নং আসামী কাকলীর নেতৃত্বে অন্যান্য আসামীরা আমাদের কাছ জোরপূর্বক চাঁদা নিয়েছে এবং প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা চাঁদা না দিলে আমাদেরকে মারপিঠ করে গাড়ি ভাংচুর করে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিবে হুমকি দিয়েছিলো।

মামলার এজহারে বাদী আতিকুল মিয়া আরও উল্লেখ করেন, ২০১৯ সালের আকিজ প্লাস্টিক গ্রুপ চাঁদাবাজির কারণে ১নং আসামী কাকলীর উপর চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছিলো। গত ২২ আগস্ট ২০২১ইং দুপুর ১২টায় ১নং আসামী কাকলী ও মাছুম, নোমান, কার্জন আসামীরা হাতে ডেগার, পিস্তল, রামদা ও অবৈধ বন্দুক ইত্যাদি প্রাণনাশের অস্ত্র নিয়ে আমাদের ইজিবাইক স্ট্যান্ডে আসে এবং আমাকে দায়িত্বরত অবস্থায় রাস্তার উপর পেয়ে সাক্ষীগণের সামনে অস্ত্রেসহ ঘেরাও করে মাসিক ৫হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় আমার উপর আসামীরা ক্ষ্রিপ্ত হয়ে ১নং আসামী হুকুম দেয় যে, ৫ হাজার টাকা চাঁদা না দিলে শালারপুত্ররে মারিয়া মাটির সাথে মিশিয়ে দে, গাড়িগুলো ভাংচুর করে ফেলো”।

আসামীরা অজ্ঞাতনামা অন্যান্য আসামীগণের হাতে থাকা অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে গাড়িগুলোতে আঘাত করিতে থাকিলে উপস্থিত সাক্ষী ও প্রতিকরা আসামীদের হাত থেকে আমাদের হাত রক্ষা করে অথবা আসামীরা আমাদের মেরে ফেলতো । আসামীগণ যাওয়ার সময় আবারো আমাদেরকে হত্যা করে আমাদের লাশ ঘুম করে ফেলবে বলে এ কথা বলে চলে যায় ।

আতিকুল মিয়া মামলায় উল্লেখ করেন, আসামীদের দ্বারা তার জান-মালের নিরাপত্তার বিঘ্ন হওয়ার আশংকায় তিনি আদালতে মামলা দায়ের করছেন বলে জানান।

প্রসঙ্গত; সুনামগঞ্জের ছাতক পৌর ভবনে ভাঙচুরের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর তাছলিমা জান্নাত কাকলীসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণ করেছে আদালত।

মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সুনামগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. আব্দুর রহিমের আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র (নং-২৪০/১০ তারিখ-০৬/০৯/২০২১) গ্রহণ করা হয় বলে জানিয়েছেন ছাতক থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান।

মামলায় কাউন্সিলর কাকলী ছাড়াও অন্য আসামিরা হলেন- কাউন্সিলর কাকলীর স্বামী মাছুম আহমদ (৪৫), কাকলীর ভাই নোমান ইমদাদ কানন (৩৫) ও কার্জন মিয়া (২৮)। এদের মধ্যে প্রধান আসামি কাউন্সিলর কাকলী ছাতক থানায় ২০১৯ সালে একটি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি এবং কার্জন মিয়া ছাতক থানায় বিভিন্ন সময়ে দায়েরকৃত সাতটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমান জানান, ‘সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর আজ শুনানী শেষে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত।’

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ‘অবৈধ ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সার অনুমোদন প্রদান না করার বিষয়ে ছাতক পৌরসভার সংশ্লিষ্টদের অবস্থান হার্ডলাইনে। কিন্তু ছাতক পৌরসভার ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর তাছলিমা জান্নাত কাকলীর নেতৃত্বে তার স্বামী, ভাই এবং কার্জন মিয়া গং চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে ব্যাটারীচালিত অটোরিকশা চলাচল করিয়ে আসছিল।

এ নিয়ে তাদের সাথে অটোরিকশা চালক ও মালিকদের বিরোধ হয়। একপর্যায়ে তারা তাদের বিরুদ্ধে পৌরসভার মেয়র বরাবরে অভিযোগ করেন।’অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, ‘গত ১৮ আগস্ট বাগবাড়ী কবরস্থান ইজিবাইক স্ট্যান্ডের ম্যানেজার ও মালিকরা পৌরসভায় লিখিত অভিযোগ করলে ২২ আগস্ট কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে মেয়রের কক্ষে আলোচনার আয়োজন করা হয়। আলোচনা চলাকালে নারী কাউন্সিলর কাকলীর নেতৃত্বে ২০-২৫ জন লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মেয়রের কক্ষে প্রবেশ করে গালাগালি শুরু করে।’‘একপর্যায়ে তারা পৌরভবনের বিভিন্ন কক্ষে দরজা, জানালা, টেবিলের গ্লাস ভাঙচুর করে; এতে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন হয়। পাশাপাশি তারা মেয়রের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক স্লোগান দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতিরও সৃষ্টি করে।

এ ঘটনায় ছাতক পৌরসভার অফিস সহায়ক দীপ্ত বনিক বাদী হয়ে থানায় মামলা (নং-২৮/ ২৭-০৮-২০২১) দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর তদন্তে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের বক্তব্য, পৌরভবনে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ঘটনার সময়ে স্থিরচিত্র ও আলামত পর্যালোচনায় প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এ চারজনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে ছাতক পৌর মেয়র কালাম চৌধুরীসহ ৩১ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে।’

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ১৭০ বার

Share Button

Callender

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930