শিরোনামঃ-

» মোহাম্মাদ আলী জিমনেসিয়ামে দু’দিনব্যাপী (২ ও ৩ জানুয়ারি ২০১৮) তথ্যমেলা আয়োজন

প্রকাশিত: ০৩. জানুয়ারি. ২০১৮ | বুধবার

তথ্য প্রযুক্তি সংবাদঃ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় তথ্য অধিকার আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই- আর এক্ষেত্রে তথ্যমেলা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ- তথ্যমেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশাসন, সিলেট এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র অনুপ্রেরণায় গঠিত সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), সিলেট এর উদ্যোগে নগরীর রিকাবীবাজারস্থ মোহাম্মাদ আলী জিমনেসিয়ামে দু’দিনব্যাপী (২ ও ৩ জানুয়ারি ২০১৮) তথ্যমেলা আয়োজন করা হয়। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে অবহিত করার সেতুবন্ধন সৃষ্টির লক্ষ্যে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় সরকারি বেসরকারি ২৯টি প্রতিষ্ঠান (সরকারি ২৩টি, বেসরকারি ৬টি) অংশগ্রহণ করে।

২ জানুয়ারি ২০১৮ বিকেল ৩ টায় মেলার উদ্বোধন করেন সিলেটের মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম।

উদ্বোধনের পর  জেলা প্রশাসক জনাব রাহাত আনোয়ারের সভাপতিত্বে তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি ও আইনের কার্যকর বাস্তবায়নে প্রয়োজন সরকারি বেসরকারি সকল অংশীজনের সক্রিয় অংশগ্রহণ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম, বিভাগীয় কমিশনার, সিলেট এবং বিশেষ অতিথি জনাব গোলাম কিবরিয়া, পুলিশ কমিশনার, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্টানে বক্তব্য রাখেন সনাক সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম, টিআইিিব সিলেট ক্লাস্টারের প্রোগ্রাম ম্যানেজার-সিই চিত্ত রঞ্জন রায়, তরুণ প্রজন্মের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ইয়েস গ্রুপের দলনেতা পল্টু কুমার রায়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- সনাক সদস্য এডভোকেট সৈয়দা শিরিন আক্তার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন সনাক সদস্য অ্যাডভোকেট সৈয়দ মনির আহমাদ।

প্রধান অতিথি বিভাগীয় কমিশনার ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম তার বক্তব্যে বলেন, এক সময় বলা হতো Knowledge is power এখন বলা হয় Information is power সুতরাং সময় পাল্টেছে। এখন শুধু জ্ঞান নিয়ে সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ নেই।

জ্ঞানের সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য হাতে থাকলে একজন মানুষ ক্ষমতায়িত হবে, সমৃদ্ধ হবে। তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইন পাশ হওয়ার পর থেকে নানাবিধ আয়োজনে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মানুষকে সচেতন করার প্রচেষ্টা অব্যাহ রয়েছে।

তবে এর পাশাপাশি কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে যেমন, তথ্য প্রদানকারী হিসেব সঠিকভাবে তথ্য সংরক্ষণ করতে না পারা, দক্ষ জনবলের ঘাটতি, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের ঘাটতি এবং সর্বোপরি ব্যাপক জনসচেতনতার অভাব। এজন্যে সরকার, তথ্য কমিশন এবং জনগণ সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি মানুষের নৈতিক চরিত্র তথা ব্যক্তিচরিত্রের উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এ আইনের সুফল পেতে এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা ও সুশাসন নিশ্চিকরণে তথ্য অধিকার আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই- আর এক্ষেত্রে তথ্যমেলা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

তিনি সিলেট জেলার সকল দপ্তরে আইন অনুযায়ী তথ্য প্রদানকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ না হয়ে থাকলে নিয়োগ দেয়ার এবং যে সকল দপ্তরে রয়েছে সেগুলো যথানিয়মে আপডেট করার পরামর্শ প্রদান করেন।

টিআইবি’র সিভিক এনগেজমেন্ট বিভাগের সিলেট ক্লাস্টারের প্রোগ্রাম ম্যানেজার চিত্ত রঞ্জন রায় বলেন, দেশের সকল নাগরিকের চিন্তা, বিবেক ও বাক্-স্বাধীনতাকে অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেবার প্রয়াসে এবং সকল পর্যায়ে সুশাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেছে। পাশাপাশি তথ্য অধিকার আইনের প্রস্তাবনায় মানুষের তথ্য প্রাপ্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকার এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি তথ্য অধিকার আইনের পটভূমি এবং সেক্ষেত্রে টিআইবি’র ভূমিকা বর্ণনা করে বলেন, তথ্যভিত্তিক ক্ষমতায়ন ও এতে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে টিআইবি ২০০৬ সাল থেকে আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস উদ্যাপন করছে। এছাড়াও ২০১০ সাল থেকে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে নিয়মিতভাবে তথ্য মেলার আয়োজন করে আসছে।

উল্লেখিত তথ্য মেলায় সকল পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের প্রদত্ত সেবার তথ্য বিতরণে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করছে।

কিন্তু, সরকারি-বেসরকারি সেবদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহকে স্বপ্রণেদিত তথ্য প্রদানে আরো আন্তরিক হতে হবে এবং আইনের সঠিক বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে হবে। আর জনসচেতনতা সৃষ্টিতে তৃণমূলের মানুষের কাছে এ আইনের সুফল প্রাপ্তির উদাহরণ পৌছে দিতে হবে, তবেই এ আইন সঠিক আলো ছড়িয়ে দীপ্তিময় করে তুলবে চারদিক। তিনি মাননীয় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের নিকট সিলেট জেলার সকল দপ্তরে তথ্য প্রদানকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়ার এবং যে সকল দপ্তরে রয়েছে সেগুলো যথানিয়মে আপডেট করার আহ্বান জানান।

সনাক সভাপতি আজিজ আহমদ সেলিম বলেন- সাধারণ মানুষ যাতে তথ্য জানতে পারে এবং তথ্য জানতে চাইতে করণীয় কি সে সম্পর্কে সচেতন করার জন্যই এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সাধারণ মানুষ বিভিন্ন দপ্তরের তথ্য জানতে চাইতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে তথ্য জানতে চাওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় মানুষ হয়রানির শিকার হয়, তথ্য বিভ্রাটে পড়ে এবং ভুল তথ্যের কারণে দুর্নীতির শিকার হয়।

সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানরেও তথ্য প্রদানে ও তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে জনগণ জানাতে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই এ ধরনের আয়োজন সফল হবে। তিনি তথ্যমেলায় অংশগ্রহণকারী সকল প্রতিষ্ঠান এবং যৌথ আয়োজক হিসেবে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করার জন্যে সিলেট জেলা প্রশাসনকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

তথ্য মেলায় সনাক সিলেট এর স্বজন কমিটির বিশেষ কর্মসূচি হিসেবে সনাক সদস্য এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম এর সঞ্চালনায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ, সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস এবং  এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট কর্তৃপক্ষ স্বপ্রণোদিতভাবে তাদের সেবা সম্পর্কিত তথ্য ভান্ডার উপস্থাপন করেন এবং সেবা সম্পর্কে সরাসরি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী জনসাধারণের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব প্রদান করেন।

এছাড়াও তথ্যমেলা ও তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ সম্পর্কিত কুইজ প্রতিযোগিতা, দুর্নীতিবিরোধী গণস্বাক্ষর, দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ভিডিও ড্রামা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। মেলায় আগত জনগণকে সিলেট ইয়েস গ্রুপ কর্তৃক পরিচালিত তথ্য ও পরামর্শ ডেস্ক থেকে তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন প্রদানের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে তথ্য প্রাপ্তির আবেদন কিভাবে করতে হয় ও ফরম পূরণের কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫৭১ বার

Share Button

Callender

May 2024
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031