শিরোনামঃ-

» টাংগুয়ার হাওরে পানিতে ডুবে এমসি কলেজ ছাত্র নিহত; দাফন সম্পন্ন

প্রকাশিত: ৩০. জুন. ২০১৭ | শুক্রবার

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাংগুয়ার হাওরে পানিতে ডুবে নিহত এমসি কলেজ মেধাবী ছাত্র আশরাফুল ইসলাম হাসানের (২৩) লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) ১১টার সময় ধর্মপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে জানাযার নামাজ অনুষ্টিত হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব খাঁ, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কারুজ্জামান কামরুল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসুল হক, ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরস ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলী আমজাদ, ধর্মপাশা উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক লুৎফুর রহমান উজ্জল সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও এলাকার সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহনে কানায় কানায় পূর্ন হয় নামাজে জানাযার মাঠ। জানাযার নামাজ শেষে সেলবরস ইউনিয়নের এলাকাবাসীর সম্মিলত কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।

জানাযায়, বাবা চাঁন মিয়া সুনামগঞ্জ গনর্পূত বিভাগে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরীর সুবাদে সুনামগঞ্জের হাজি পাড়াস্থ সরকারী কোয়াটারে থেকেই স্কুল জীবন শুরু করে। উন্নত লেখা পড়ার জন্য চলে আসে সিলেটে। ভর্তি হয় এমসি কলেজে উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগে। পড়াশুনায় ছিল মেধাবী। তার জন্য সবার ভাল লাগা ছিল একটু বেশি, ছিল সবার প্রিয় পাত্র।

শেষ মুর্হুতে ৪র্থ বর্ষে ছিল হাসান। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে হাসান দ্বিতীয়। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে আছে বাবা চাঁন মিয়া। আর মায়ের নাড়িছেড়া ধন হারানো বেদনায় বার বার মূর্চা যাচ্ছে মা। বার বার শুধু বলছেন আমার বাবারে আইনা দাও। আমার বাবারে ছাড়া কেমনে দিন কাটব। বাবা আমার কেমনে আমরারে ছাইড়া চইলা গেল। কোনভাবেই শান্ত করা যাচ্ছে না মায়ের মন। মায়ের আর্তচিৎকারে এলাকার এক হ্নদয় বিধারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আত্মীয়স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীরা নিজেদের চোখের জল ধরে রাখতে পারছে না। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে বাবা চাঁন মিয়া একবারেই হাত পা ছেড়ে বসেছে। কারন একমাত্র সন্তানকে নিয়ে ছিল তার অনেকে স্বপ্ন। কিন্তু সব স্বপ্ন এভাবে এক মূর্হূতে নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে কোনভাবেই তা মানতে পারছেন না তিনি।

নিহতের বাবা চাঁন মিয়া বলেন, বাবারে নিয়া অনেক স্বপ্ন ছিল আমরার, সব শেষ হইয়া গেল। ভাল ছাত্র ছিল কষ্ট করে তাই লেখা পড়া করার লাগি সিলেট এমসি কলেজে পড়াইতেছিলাম, কেরে যে বাবা আমার হাওরে গেল? না গেলে তো এমন হইতো না।

আমার বুকটা খালি কইরা দিয়া গেল। কেমনে বাঁচমু তারে ছাড়া আমরা। নিহতের তিন বোন ভাই হারানো বেদনায় মা, বাবাকে জড়িয়ে চিৎকার করে শুধুই চোঁখের জল ফেলছে।

এমসি কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী হাসানের অকাল মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার নিজ এলাকা সেলবরস ইউনিয়নে সহ উপজেলা জুড়ে। হাসানের মৃত্যু খবর শুনে ছুটি আসছে তার সহপাটি সহ এলাকাবাসী।

সবাই নির্বাক দৃষ্টিতে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া হাসানের পরিবারের দিকে তাকিয়ে আছে আর শান্তনা দিচ্ছে পরিবারের সকল সদস্যদেরকে।

এভাবে অকালে না ফেরার দেশে চলা যাওয়া কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার দীর্ঘ সময়ের সহপাঠিরা। হাসানের সহপাঠি এহসানুল হক মুন্না, অভি, অপু তালুকদার সহ সবাই বুকভড়া র্দীঘশ্বাস আর কান্না জড়িত কণ্ঠে জানায়, হাসান আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে যাবে তা কোনভাবেই মানতে পারছি না, পারছি না ভাবতে। এখনও ভুলতে পারছি না আমরা গতকাল একসাথে ট্যাকেরঘাট, বারেকটিলা, লামকাছড়া ও টাংগুয়ার হাওরে বেড়ানো ও গোসল করার মুর্হুতগুলো। কত আনন্দ করেছি আমরা সবাই মিলে।

আজ হাসান আমাদের মাঝে নেই তা মানতে খুব কষ্ট হচ্ছে। নিজের হাতে আমাদের প্রিয় বন্ধুকে এভাবে মাটি দিতে হবে তা কখনোও ভাবিনি। আমরা আর তার সাথে কথা বলতে পারব না, পারব না আড্ডা দিতে, ভাবতেই বুকটা হাহাকার করে উঠে।

নিহত হাসানের চাচাতো ভাই সিদ্দিকুর রহমান ও মোফাজ্জল হায়দার বলেন, হাসান খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। আমরা সবাই তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম আজ সব শেষ হয়ে গেল। সে পরিবারের সবার আদরের ছিল। এভাবে যে আমাদের ছেঁড়ে চলে যাবে ভাবতে পারছিনা। এবার ঈদে বাড়ি আসেনি। এই তো বাড়ি আসল একবারে নিরব নিতর দেহটা।

আর তার মুখে বড় ভাই ডাক শুনব না মনে হলে কষ্টে বুকটা ভেঙ্গে যায়।

উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের গত মঙ্গলবার ঈদ উপলক্ষে সকালে সিলেট থেকে হাসান মিয়া (২৩) ও তার কলেজের বন্ধু সহ মোট ২১ জনের একটি দল ট্যাকেরঘাট, টাংগুয়ার হাওর সহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বেড়াতে আসে।

রাতে ট্যাকেরঘাট অবস্থান করে বুধবার দুপুরে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারযোগে টাংগুয়ার হাওরে বেড়াতে যায়। বেড়ানোর একপর্যায়ে টাংগুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারের পাশে নৌকা রেখে সবাই গোসল করতে নামে।

গোসল শেষে সবাই নৌকায় উঠে কাপড় পরিবর্তন করে তাহিরপুরের উদ্যেশ্যে রওনা করে। এক সময় সবাই হাসানের মোবাইল নৌকার উপড়ে দেখতে পায় কিন্তু হাসানকে নৌকার উপরে ও ভিতরে না পেয়ে সবাই নৌকা ঘুড়িয়ে ওয়াচ টাওয়ারের কাছে যায়।

সেখানে গিয়ে অনেক খোঁজা খুজির পর তারা ওয়াচ টাওয়ারে পাশেই হাসানের মৃত দেহ ডুবন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫১৯ বার

Share Button

Callender

May 2024
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031