শিরোনামঃ-

» হযরত শাহজালাল (রা:) এর জীবনী ও সিলেট আগমন

প্রকাশিত: ১৪. ফেব্রুয়ারি. ২০১৭ | মঙ্গলবার

মানব ও ইসলামঃ এখন থেকে প্রায় ৮০০ বছর পূর্বে আরবের বিখ্যাত ইয়েমেন প্রদেশে তিনি জন্মগ্রহন করেন। মহিউদ্দিন সালামাত তার পিতা এবং উম্মে সালতা বিন ফাতেমা নাম্নি তার আম্মা। পিতার বংশ আবুবকর (রা:) এর সিলসিলা এবং মাতার বংশ ইমাম হুসাইন (রা:) এর শেষ ছইয়দ প্রদীপ কারবালা প্রান্তর হইতে একমাত্র বেচে যাওয়া পুত্র জয়নাল আবেদিন (রা:) এর বংশধর। শাহ জালাল (রা:) এর মামা সায়েক বাহাউদ্দিন (রা:) তখন খার সময়ে একজন দরবেশ বুজুর্গ ছিলেন। অল্প বয়স থেকে তিনি তার মামার নিকট ইসলামী এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষায় সিদ্ধ লাভ করেন। শিক্ষা কতটুকু সিদ্ধ হল পরীক্ষা করার জন্য মামা শাহ জ্বালাল (রা:) কে ডেকে পাশের জঙ্গলে অবস্থান করার জন্য তাগিদ দেন। শাহ জালাল (রা:) নির্দেশিত স্থানে গমন করেন। একটি হরিণ কান্না জড়িত কণ্ঠে মানুষের ভাষায় ফরিয়াদ করতে লাগলো। হুজুর বিচার করুন, আমার সদ্য প্রসব দু’টি বাচ্ছাকে বনের লোভী বাঘ খেয়ে ফেললো। শাহ জালাল (রা:) হুংকার ছেড়ে বনের বাঘকে ডাক দিলেন। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বাঘ এসে তার পায়ে হাজির। এই নির্দয় সদ্যজাত হরিণের বাচ্ছাকে গ্রাস করতে তোর হৃদয় কি একটু বিচলিত হলোনা, জংগলে কি খাবারের অভাব ছিল। মাথা নিচু করে বলল হুজুর আমার এহেন বেয়াদবি মাফ দিন, আমি আজ থেকে মাসেক ক্ষন পর্যন্ত অসুস্থতায় ভুগছিলাম, পেটে ছিল ধারুন ক্ষুধার তাড়না, তাই সম্মুখে এদের পেয়ে গিলে ফেলেছি, রাগে শাহ জালাল (রা:) বাঘের গালে কষে থাপ্পর লাগালেন, সাথে সাথে ভুমি করে হরিণের শাবক দু’টি-কে উগ্রে দিল এবং জংগলে চলে গেল। শাহ জালাল (রা:) আল্লাহর নিকট মোনাজাত করলো হরিণ দু’টি জীবন্ত হয়ে গেল, মা হরিণী খুব খুশি হল। আর তার মামা আড়াল থেকে ঘটনা প্রত্যক্ষ করে বুঝলেন শাহ জালাল (রা:) একজন কামেল আধ্যাত্মিক সিদ্ধ হয়েছেন, তখন তার বয়স মাত্র ১২ বছর। তার আশ্চর্য্য খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লো সারা আরব ভুখণ্ডে। মামা একদিন তাকে ডেকে বললেন বাবা এবার তোমাকে অন্ধকার থেকে ইসলামকে জিন্দা করার জন্য মানুষের মুক্তির হেদায়েতের বার্তা লয়ে দূর দেশ ভ্রমন কর। ইনশাল্লাহ আল্লাহই তোমার সাহায্যকারী । দেশ ভ্রমন এবং বাংলায় পদার্পণ।

********শাহ জালাল (রা:) প্রয়োজনীয় রসদ নিয়ে উল্লেখ্য সংখ্যক লোক জুটায়ে আল্লাহর নামে বেড়িয়ে পড়লেন। মামা তার নিকট এক মুষ্টি মাটি দিয়ে বললেন পৃথিবী পরিভ্রমণ করে যেখানে এই মাটির সহিত মিল পাবে সেখানেই যেন হয় তোমার আস্তানা। শাহজালাল (রা:) ধিরে ধিরে বহু দেশ পরিভ্রমণ করে বহু জমিদার এবং রাজা বাদশাহের সমাদর লাভ করেন এবং তার আশ্চয্য কোরআন পাঠে, আল্লাহর মহত্তে হেদায়েতের বারি দ্বারায় সিক্ত হয়ে ইসলাম গ্রহন করেন এবং কেউ কেউ ইসলামের জন্য, আল্লাহর রাজি খুশি এবং শাহ জালাল (রা:) এর সাথে আসার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে তিনি শেষ তক অনুমতি দেন। ক্রমান্বয়ে তার সাথি বাড়তে বাড়তে ৩৬০ জন হয়,

উল্লেখ্য এদের মধ্য ভারতের বাদশা নাসির উদ্দিন, চীনের গভর্ণর ফতেহ লোহানী মিসরের জমিদার শাহ মখদুম রা ও সঙ্গি হয়েছিলেন।

তখন বাংলা ভারতের কিছু অঞ্চলের প্রতাব শালি হিন্দু রাজা গউরগবিন্দের রাজধানী ছিল শ্রীহট্রয় বা বর্তমান সিলেট। এখানে একঘর খাটি মুসলমান বাস করত, তারা সম্ভবত আরব হতে এসে অনেক আগেই বসতি স্থাপন করেছিল। তার নাম ছিল বুরহান উদ্দিন, তিনি ১২ বছর যাবত সন্তান লাভের আশায় আল্লাহর নিকট কানা কাটি করলে তার সুন্দর একটি ফুট ফুটে সন্তান লাভ করে। আনন্দে আত্বহারা হয়ে ছেলের ৭ দিনের দিন লুকিয়ে আকিকা দেয় গরু কোরবানি, কিছু মাংস রেখে বাদ বাকি মাংস মাটিতে পুতে রাখলো। এক টুকরা মাংস পাখি কর্তৃক হিন্দু রাজার মন্দিরে চলে যায়। রাজা সংবাদ পেয়ে বুরহান উদ্দিনের পরিবার কে ধরে নিয়ে যায় এবং মা বাবার সামনেই কচি সদ্যজাত সন্তানকে হত্যা করে এবং বুরহান উদ্দিনকে অত্যাচার করে শিকল দেন। বুরহান উদ্দিন সেখান থেকে পালিয়ে যান এবং সেই সময়ে ভারতের নদিয়ায় শাহ জালাল (রা:) এর নিকট সাক্ষাৎ সমস্ত জানিয়ে বিচার দেন। আউলিয়া সর্দার সঙ্গী সাথী সহ দ্রুত বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।

সুরমা নদীর দক্ষিন সীমান্তে আস্তানা নেয়। খবর পেয়ে রাজা বহু গুপ্তচর নিয়োগ করে এবং নদী যেন না পাড়ি দিতে পারে সব নৌকা যান চলাচল বন্ধ করে দেন। আল্লাহর সাহায্য কামনা চাইলে আল্লাহর কুদ্রতে জায়নামাজ বিচিয়ে তার মধ্য ভেসে সুরমা নদী পাড়ি দেন। অপর প্রান্ত থেকে তির ছুঁড়তে থাকে রাজার লোকেরা, আল্লাহর কুদ্রতে যারা বিষের তীর ছুঁড়েছিল তাদের বুকেই উল্টো বিধতে লাগলো। পাড়ে ভিড়বে পাহাড়ের উপর থেকে ভারি পাথর নিক্ষেপ করতে থাকে, শিল হট উচ্ছারন করেন শাহ জালাল (রা:) শিল অর্থ পাথর হট অর্থ উপরে যাও। আল্লাহর কুদ্রতে তাও উলটোভাবে গড়াল। রাজা সৈন্য সীমান্ত হারিয়ে প্রাসাদে লুকালেন।

আল্লাহর প্রতিনিধিরা প্রাসাদ অভিমুখে রওয়ানা দিলেন। রাজা সন্ধি প্রস্তাব দিল, আমার প্রাসাদে ২৮ মন ওজন একটা ধনুক আছে তোমাদের মধ্য যদি কেহ এই ধনুকে তির যোজনা করতে পার তাহলে আমি রাজা ইসলাম গ্রহন করব। শাহ জালাল (রা:) সঙ্গিদের মধ্য বললেন কেহ এমন আছ কি যে কোন সময় তার আছরের নামায কাযা হয়নাই। ভারতের মুসলমান বাদশা নাসির উদ্দিন বললেন, সেই লোক সম্ভবত আমি। বেশ তাহলে যাও আল্লাহর নামে প্রাসাদে গিয়ে ধনুকে তীর যোজনা কর। নাসির উদ্দিন একটানে তা করে বসলেন। রাজা তাদের ঐশী শক্তি প্রত্যক্ষ করে গুপ্ত পথে পালিয়ে গেল। মাটির সাথে মাটি মিলিয়ে শাহ জালাল (রা:) সেথা আস্তানা বা বসতি গড়ে তুললেন।

****** এবং প্রকাশ্য আযান দিলেন। সাথে সাথে গৌড় গোবিন্দের সাত তালা মনোরম প্রাসাদ ভেঙ্গে ধুলিস্যাত হয়ে গিয়েছিল। রাজার বোন ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিল এবং সারা ভারত বাংলায় আল্লাহর অলিগন ছড়িয়ে পড়েন এবং ইসলামের নিশান উড়িয়ে দেন। সেই হেদায়েতে বর্তমান মুসলিম সংখ্যা হবে সারা দক্ষিন এশিয়ায় ৭০ কোটির উপরে।

********হযরত শাহ জালাল (রা:) এর কেরামতি**********

*******হজরত শাহ জালাল (রা:) এর আশ্চর্য কেরামতের সংকিপ্ত বাকি অংশ গউর গবিন্দ রাজ্য প্রতাব প্রতিপত্তি সব হারিয়ে এবার ছলনার আশ্রয় নিল। শাহ জাজাল (রা:) কে একনজর দেখার জন্য এক সাপুড়ে টিক করে সাপের বাক্স মধ্য লুকিয়ে রইল। সাপুড়ে যেখানে মুসলিম ঘাটি বর্তমান মেজরটিলা সেথা অবস্থান নিয়ে সাপ খেলা দেখাতে লাগলো। শাহ জাজাল (রা:) দূর থেকে ডাক দিলেন হে রাজা ছলনা পরিত্যাগ করে বেরিয়ে এসো। রাজা অবাক হলেন, কেমন মানুষ তিনি যে, না দেখেই সব আচঁ করে ফেলল। গৌর গৌবিন্দ আবার ভয়ে পালাল।

******* হজরত শাহ জালাল (রা:) একটি মসজিদ নির্মাণের আদেশ দিলেন এবং সেথা আস্তানা বা থাকার উপযোগী আবাস্থল নির্মাণ করে সেথা ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করলেন। তিনি অযু বানানোর জন্য পাশের বিশাল এক দিঘি ছিল সেথা অবস্থান নিলে গউর গবিন্দের লোকেরা এক রমনিকে উলঙ্গ করে রাখে, তিনি আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ জানান, সাথে সাথে উলঙ্গ রমনি সহ বালু কনা এসে পুকুরটি ভরাট হয়ে যায়। এ ঘটনায় শত শত হিন্দু অধিবাসি হেদায়েত এবং মুসলমান হয়।

****** সিলেটে এসেই হযরত শাহজালাল (রা:) জানলেন ভারতের কোন এক প্রদেশে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার আস্তানা। তিনি দুত মারফত অলিত্তের চিহ্ন পাঠান, এক টুকরা তুলার ভিতরে একটা জলন্ত অঙ্গার পুড়ে সেথা পাটিয়ে দেন, জবাবে নিজাম উদ্দিন আউলিয়া শাহজালাল ইয়েমেনই (রা:) নিকট এক জুড়া কবুতর ও নানা রসদ মসলা পাটিয়ে তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

***** অলির সান্নিধ্য অলি হয়, তার ভাগ্নে শাহপরান (রা:) একদিন তার মামার অবর্তমানে কবুতর জুড়া খেয়ে ফেলল। কবুতরের খুজ নিলে ভাগ্নে শিকার করে যে জবাই করে খিদে মিটানোর কথা। মামা উপহার সামগ্রি কথা জানালে ভাগ্নে রাগে কবুতরের পাখা সংগ্রহ করে তাতে ফু দেয়। আল্লাহর রহমতে হাজার হাজার কবুতর সৃষ্টি হয়ে আকাশে উড়তে থাকে এবং তারনাম দেওয়া হয় জালালি কবুতর।

************ চীনের গভর্নর শাহজালাল (রা:) এর নিকট একটি সুন্দর জামা প্রস্তুত করে উপহার দেন। কিন্তু পথিমধ্যে জামাটি লুটতরাজের হাতে হস্তগত হয়ে ইরান চলে যায়। আল্লাহর কুদ্রতে এক বছর পর আবার শাহ জ্বালাল (রা:) এর দরবারে চলে আসে এবং সেই দিন চিনের গভর্নর শাহ জালাল (রা:) এর দরবারে উপস্থিত ছিলেন।

ঘটনার তাৎপর্য জানতে চাইলে আল্লাহর অলি বলেন নিশ্চই উপহার দাতা নিজে যখন আসলেন তখন উপহার টিও ততদিন সফরে ছিল এবং আজি তার মালিকের হস্তে সেটা আমার নিকট এল।

***************** এক হজ্ব যাত্রি শাহ জালাল (রা:) এর সমাধিতে এসে যমযম কুপের উৎস খুজে পান এবং পরীক্ষামুলকভাবে ঐ কুপে ১০০ স্বর্ণ মুদত্রা বেধে সেথা নিক্ষেপ করে হযে চলে যায়। হজ্বে গিয়ে সেথা ৫০টি স্বর্ণ মুদ্রা আবার যম যমে নিক্ষেপ করে। দেশে ফিরে আসে। ১১ মাস পর আবার কুপে নেমে দেখে মক্কা থেকে নামাংকিত আশ্রি বা স্বর্ণ মুদ্রাগুলু অবিকল এখানে পাওয়া গেল।

কিন্তু এখানের পুতলাটি পাওয়া যায় নি। এতে বুঝা যায় মক্কার যমযম কুপের সাথে এ কুপের সরাসরি যোগাযোগ বা মিল ছিল। বর্তমানে হয়ত উৎস মুখটি বন্ধ হয়ে গেছে।

লেখক: আবুল হোসেন দীপু

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ১৮৩৪ বার

Share Button

Callender

May 2024
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031