শিরোনামঃ-

» নবীগঞ্জে সর্বনাশা কুশিয়ারার করাল গ্রাসে বিলীন হচ্ছে সহায় সম্বল

প্রকাশিত: ১২. নভেম্বর. ২০১৬ | শনিবার

সিলেট বাংলা নিউজ নবীগঞ্জ থেকে আব্দুল কাদিরঃ নবীগঞ্জে সর্বনাশা কুশিয়ারা কেড়ে নিচ্ছে ঘর-বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ফসলী জমি। কুশিয়ারার এ করাল গ্রাম চলছে যুগের পর যুগ ধরে। সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছে কুশিয়ারা তীরের হাজার হাজার পরিবার। যাদের অনেক কিছুই ছিল তারা আজ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতি বছরই সর্বস্বান্তের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এ থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করার তেমন কোন উদ্যোগই নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কুশিয়ারা তীরের বাসিন্দাদের ফরিয়াদ শুনার কেউ আছে বলে মনে করছেন না ক্ষতিগ্রস্তরা।

একদিকে কুশিয়ারার করাল গ্রাস অপরদিকে ভাঙ্গন। এ দুয়ে মিলে এলাকাবাসী কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। গত ক‘দিনের বর্ষনে নতুন করে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে কুশিয়ারা বাঁধ। ফলে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকটি বাড়ী ও স্থাপনা। দীঘলবাক গ্রামের চুনু মিয়া ও আব্দুল হাফিজের বাড়ির চিহ্ন হারিয়ে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে আরো কয়েকটি পরিবার। এছাড়াও কুমারকাদা গ্রামের কিছু অংশ, হোসেনপুর গ্রামের ঢালার সামন, বিবিয়ানা গ্যালফিল্ড (নর্থ প্যাডে) সন্নিকটে পশ্চিম দিকে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এই ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে ওই এলাকার জনপদের। চরম হুমকীর মুখে গ্যাস ফিল্ড নর্থ।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদী ভাঙ্গন গরীব-ধনীকে এক কাতারে নিয়ে এসেছে। আপদে বিপদে ধনীরা গরীবদের সাহায্য করে থাকে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কে কাকে সাহায্য করবে। কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে দীঘলবাক এলাকার বসতবাড়ি, বনজসম্পদ, চাষাবাদযোগ্য ভূমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার উপাসনালয় ইত্যাদি বিলীন হয়ে গেছে। তারপরও কুশিয়ারা নদীর ধ্বংসলীলা রোধকল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। সাহিত্যিকদের ভাষায়, নদী সভ্যতার প্রতীক হলেও কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী এলাকাবাসীর জন্য ধ্বংস ও ভয়ানক অভিশাপের প্রতিকরূপে বিরাজমান। নদী তীরবর্তী এলাকাবাসী জানান, শুষ্ক মৌসুমে কুশিয়ারা নদীর নাব্যতা হ্রাস আর বর্ষা মৌসুমে ঘরবাড়ি, বনজসম্পদ, চাষাবাদযোগ্য ভূমি ও বসতবাড়ি ভাঙ্গন সমস্যা, বন্যার তাণ্ডবলীলায় ফসলহানি, নদীতে চর জাগা, নৌযান চলাচল বিপর্যস্থ, মৎস্য সম্পদের অভাব, কুশিয়ারার তীর সংরক্ষণে উদাসীনতা ও স্থানীয় জীবনযাত্রার নিম্নমান সেই ব্রিটিশ শাসন থেকে অব্যাহত আছে।

কুশিয়ারা নদীর হিংস্র থাবায় বেশী ক্ষতিগ্রস্ত ও গৃহহীন হয়েছেন নবীগঞ্জের দীঘলবাক, আহমদপুর, কুমারকাদা, গালিমপুর, মাধবপুর, ফাদুল্লা, মথুরাপুর, জগন্নাথপুর উপজেলার আটঘর, নোয়াগাঁও, রানীগঞ্জ ও বানিয়াচং উপজেলার এক বিরাট জনগোষ্ঠী। কুশিয়ারা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন থেকে ঐতিহ্যবাহী দীঘলবাক এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে সরকারের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করে ইতিপুর্বে বিশাল মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করেছিল দীঘলবাকবাসী।

জানা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা রোধ কল্পে সামান্যতম হলেও সরকারী নানা পদক্ষেপ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও সাহায্য সহযোগিতা করা হয়ে থাকে। কিন্তু নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউপির জনগণকে কোন সরকারী সাহায্য বা পুনর্বাসন করা হয়নি, এমনকি যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই ভাঙ্গনের তীব্রতা রোধকল্পে বাস্তব সম্মত পদক্ষেপও নেওয়া হয়নি। যার ফলে উল্লেখিত জনপদের বিভিন্ন পেশার লোকজন চাষাবাদযোগ্য জমি, বাসগৃহ, বনজসম্পদ বারবার হারানোর বেদনায় এলাকার বাতাসে দুঃখ ও হতাশার করুণ ধ্বনি ভেসে বেড়াচ্ছে।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে দীঘলবাক বাজার, হাইস্কুলসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্টান একাধিকবার নদী গর্ভে বিলিন হওয়ায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। নদী ভাঙ্গনে অনেকের বাড়ী-ঘর হারিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে। কেউ কেউ অন্যের বাড়িতে আশ্রিতা হিসেবে জীবন করে আসছে। সব মিলিয়ে এলাকাবাসী কঠিন জীবন সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৮৯ বার

Share Button

Callender

May 2024
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031