শিরোনামঃ-

» আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

প্রকাশিত: ১০. অক্টোবর. ২০১৬ | সোমবার

সিলেট বাংলা নিউজ প্র্রতিনিধি মো. আজিজুর রহমানঃ আজ সোমবার বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। সারা বিশ্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে প্রতিবছর ১০ অক্টোবর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই দিবস পালন করা হয়।

‘মানসিক স্বাস্থ্যে মর্যাদাবোধ-সবার জন্য প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা’ প্রতিপাদ্যে নানা আয়োজনে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।

দিবসটি উপলক্ষে সোমবার সকাল ১০টায় জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শেরেবাংলা নগরে শোভাযাত্রা ও বিকেলে মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আলোচনা ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় উপস্থিত থাকবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী  মোহাম্মদ নাসিম। স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মনজুরুল হক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ।

এ ছাড়া দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ঢাকা, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- র‌্যালী, রোড শো, আলোচনা সভা, লিফলেট ও পোস্টার বিতরণ এবং ব্যানার প্রদর্শনী।

সম্প্রতি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (এনসিডিসি) উদ্যোগে প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ওপর কমিউনিটিতে পরিচালিত এক গবেষণায় প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বে বৃদ্ধি পেয়েছে, মানসিক স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের প্রকোপও। নগরায়ন, আর্থসামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ, বংশগতি ও অন্যান্য শরীরবৃত্তিক কারণ ও মনোসামাজিক কারণ মানসিক রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৬ ভাগ ও শিশু-কিশোরদের মধ্যে শতকরা ১৮ ভাগ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্যাক্ট ফাইল বলছে, বিশ্বে প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ বিষণ্নতায় ভোগে। এ ছাড়া, দুই কোটি দশ লাখ মানুষ শুধু সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। আর বেশির ভাগ মানুষই মানসিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।

তবে বিশাল এই জনগোষ্ঠীর উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য এখনো দেশে নেই কোন সুব্যবস্থা। নগরজীবনের এ রকম নানা অব্যবস্থাপনায় মানসিক টানাপোড়নে পরা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। এই অবস্থায় স্কুল পর্যায় থেকে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগের পাশাপাশি শিক্ষকদের প্রশিক্ষিত করে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই প্রেক্ষাপটে মনোবিশ্লেকরা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে ছোটবেলায় থেকেই পারিবারিক যত্নের পাশাপাশি সরকারকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। মনের যেমন সুখ আছে, তেমনি অসুখও থাকবে এটা স্বাভাবিক। তবে কারো মানসিক সমস্যা যাতে সমাজে প্রভাব না ফেলে তা নিশ্চিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে দেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতাল পাবনার হেমায়েতপুরে অবস্থিত। যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে হাসপাতালটি এখন অসুস্থ প্রায় অবস্থা। ৫শ’ শয্যার এই হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসা সেবা চলছে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক দিয়ে। এমন বাস্তবতায় আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বজনদের অবহেলা আর ভুল ঠিকানা দেয়ার কারণে সুস্থ্য হয়েও বাড়ি ফিরতে পারছেন না পাবনা মানসিক হাসপাতালের ২০ জন রোগী। এদের মধ্যে কেউ আছেন ২০ বছর ধরে, কেউ আছেন ২৫ বছর ধরে। ফলে হাসপাতালের চার দেয়ালের মাঝেই তাদের কেটে যাচ্ছে বছরের পর বছর। মারা গেলে মরদেহটিও গ্রহণ করতে চাননা পরিবার। অপরদিকে পাশাপাশি দীর্ঘ পাঁচ দশকেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দেশের মানসিক রোগের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘পাবনা মানসিক হাসপাতাল’-এ। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সংকটে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের রোগী তথ্য প্রেরণ কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন হোসেন সময়ের কণ্ঠস্বরকে জানান, রোগী ভর্তির সময় নেয়া তথ্য তাৎক্ষনিকভাবে ঠিক থাকলেও পরবর্তীতে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়না। এমনকি কোনো রোগী মারা গেলে মরদেহটিও নিতে চাননা স্বজনরা। এর পেছনে রয়েছে আর্থিক, সামাজিক ও সম্পত্তি জনিত নানা কারণ।

এক্ষেত্রে রোগীর স্বজনদের আন্তরিকতার অভাবকেই দায়ী করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর মার্যাদাবোধ নিয়ে তাদের মানসিক অবস্থা ও চিন্তা চেতনার পরিবর্তন করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস জানান, রোগীকে ভর্তির পর থেকে তাদের স্বজনরা আন্তরিক থাকেন না। শুধু তাই নয়, কোনো রোগী মারা গেলে মরদেহটি নিতেও তাদের কোনো আগ্রহ থাকে না। ধর্ম অনুযায়ী লাশের দাফন আমাদেরই করতে হয় বেশিরভাগ সময়।

পাবনা মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও মানসিক হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডাঃ শাফ্কাত ওয়াহিদ বলেন, রোগীর স্বজনদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। মানসিক রোগীর মর্যাদাবোধ সম্পর্কে আন্তরিক থাকতে হবে। তাদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। বর্তমানে মাত্র ৫ জন মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল কলেজের দুই জন সহকারি অধ্যাপক দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। মঞ্জুরীকৃত মোট ৫৪২টি পদের মধ্যে শুন্য রয়েছে ১৮৯টি। চিকিৎসক বাড়ানোর পাশাপাশি একটি হাফওয়ে হাউজ নির্মাণ করা গেলে ৫শ’ শয্যার ওপর চাপ কমবে বলে মনে করেন হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ তন্ময় প্রকাশ বিশ্বাস।

দেশের মানসিক রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই হাউজে অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয় পাবনা মানসিক হাসপাতাল। এর দুই বছর পর ১৯৫৯ সালে শহরের হেমায়েতপুরে ১১১ দশমিক ২৫ একর জায়গার উপরে স্থানান্তর করা হয় হাসপাতালটি। প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ছিলো ৬০টি। সময়ের চাহিদায় যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ শয্যায়।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৫৫ বার

Share Button

Callender

May 2024
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031