শিরোনামঃ-

» বিশ্বনাথে ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারের ধস্তাধস্তি; মধ্যস্থতাকারী মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৩. জুলাই. ২০১৭ | সোমবার

বিশ্বনাথ প্রতিনিধিঃ সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার রাপমাশা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর ও একই পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের ৫ বারের নির্বাচিত মেম্বার ইমাম উদ্দিনের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি সোমবার বিকেল ৩টার দিকে রামপাশা ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সের ভিতর সংঘটিত হয়েছে। আলমগীর-ইমাম গংদের ধস্তাধস্তি আটকানোর মধ্যস্থতাকারী একই পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার তাজ উল্লাহ মৃত্যুবরণ করছেন।

পরিষদের বিভিন্ন বরাদ্ধ বন্টন, আধিপত্য বিস্তার ও ইমাম উদ্দিন মেম্বারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার জের ধরে ঘটনাটি ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে তাজ উল্লাহ’র মৃত্যু নিয়ে এলাকায় নানান জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়েছে। পাওয়া যাচ্ছে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। নিহত তাজ উল্লাহর আত্মীয়-স্বজনের দাবি তাকে (তাজ) হত্যা করা হয়েছে। অন্য দিকে ঘটনাস্থলে থাকা পরিষদের একাধিক সদস্য/সদস্যা জানান ঘটনাস্থলে চেয়ারের কোন বাড়াবাড়ি হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসার কিছু সময় পর হৃদরোগে (হার্ট এ্যাটাক) আক্রান্ত হয়ে তিনি (তাজ উল্লাহ) মৃত্যুবরণ করেছেন।

অন্যদিকে রাত ৮টার দিকে তাজ উল্লাহ লাশটি ময়না তদেন্তের জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তাজ উল্লাহ’র মৃত্যুর সংবাদ শুনে বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী, দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমির আলী, অলংকারী ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল, খাজাঞ্চী ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার গিয়াস উদ্দিন, সাবেক চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী’সহ সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা হাসপাতালে ছুটে যান। এসময় তারা সেখানে শোকাহত পরিবারের সদস্যদের শান্তনা প্রদান করে নিহতের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।

পরিষদের সদস্য/সদস্যা সূত্রে জানা গেছে, বন্যার্থদের মধ্যে মঙ্গলবার (আগামীকাল) চাল বিতরণ করা নিয়ে সোমবার বিকেলে রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়ে। এসময় পরিষদের সদস্যরা ইউপি মেম্বার ইমাম উদ্দিনের কাছে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও মামলা করার পায়তারার কারণ জানতে চান চেয়ারম্যান। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়ে। এক পর্যায়ে ইমাম উদ্দিন মেম্বার গালিগালাজ শুরু করেন ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীরকে। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীরও নিজের পায়ের জুতা খুলে ইমাম উদ্দিন মেম্বারকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারেন। উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সাথে সাথে মধ্যস্থতা শুরু করেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা একই পরিষদের মেম্বার তাজ উল্লাহ, ইছাক আলী, আবুল কাশেম’সহ পরিষদের সদস্যরা।

এব্যাপারে ইমাম উদ্দিন বলেন, চেয়ারম্যান পূর্ব পরিককল্পনা অনুযায়ী সন্ত্রাসীদের নিয়ে আমার উপর হামলা করেছে। তার পক্ষের আবুল কাশেম মেম্বারের চেয়ারের আঘাতে আমার (ইমাম) হাত ভেঙ্গেছে।

নিহত তাজ উল্লাহর ভাগনা স্বপন রাজ বলেন, হাপাতালে নেওয়ার পথিমধ্যে আমার মামা (তাজ) আমাকে বলেছেন চেয়ারম্যান আলগমীর ও কাশেম মেম্বার আমাকে শেষ করে দিয়েছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা রামপাশা ইউপির ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্যা রুসনা বেগম বলেন, চেয়ারম্যানের কক্ষে চেয়ার দিয়ে বাড়াবাড়ি (মারামারি) আমার চোখে পড়েনি। তবে চেয়ারম্যান ও ইমাম উদ্দিন উত্তপ্ত হয়ে পড়লে তাজ উল্লাহ-ইছাক মেম্বাররা ইমাম উদ্দিনকে বাইরে নিয়ে যান এবং সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য চেয়ারম্যানকে আমরা তার রুমে আটকে রাখি। পরবর্তিতে লোকমুখে শুনেছি পরিষদের বাইরে যাওয়ার পর এক দোকানে পানি খেয়ে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। এরপর তিনি (তাজ) মৃত্যুবরণ করেছেন।

চেয়ারম্যানের কক্ষে চেয়ার দিয়ে কোন বাড়াবাড়ি (মারামারি) দাবি করে একই পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার ইছাক আলী বলেন, চেয়ারম্যান ‘ইমাম উদ্দিন মেম্বার’কে লক্ষ্য করে ছুতা ছুড়ে মারার প্রতিবাদে আমরা মেম্বাররা অন্যত্র মিটিং করার জন্য ইমাম উদ্দিনকে সাথে নিয়ে তাজ উল্লাহ ভাই’সহ পরিষদের মেম্বাররা পরিষদের বাইরে চলে যাই। পথিমধ্যে হঠাৎ করে তাজ উল্লাহ মেম্বার অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি মারা যান।

এব্যাপারে রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ইমাম উদ্দিন মেম্বারের সাথে আমার বাকবিতন্ড হয়েছে। কোন মারামারি বা চেয়ার দিয়ে বাড়াবাড়ির ঘটনা ঘটেনি। আমার ও পরিষদের সদস্য/সদস্যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ উত্তাপন করায় ও মামলা করার পায়তারার কারণ জানতে গিয়েই ইমাম উদ্দিনের সাথে এই বাকবিতন্ডা হয়।

বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম পিপিএম বলেন, আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি রামপাশা ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর ও মেম্বার ইমাম উদ্দিনের বাকবিতন্ডা বন্ধ করতে মধ্যস্থতা করে তাজ উদ্দিন মেম্বার। এক পর্যায়ে তিনি হৃদরোগে (স্টোক) আক্রান্ত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অমিতাভ পরাগ তালুকদার বলেন, ইউপি সদস্য তাজ উল্লাহ’র মৃত্যুর আসল কারণ জানতে ও সকল বিকর্ত এড়ানোর জন্য মৃত দেহটির ময়না তদন্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৬৬ বার

Share Button

Callender

May 2024
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031