শিরোনামঃ-

» পাথর খেকো চক্রের কবলে বিলীনের পথে সিলেটের কানাইঘাটের চরিপাড়া

প্রকাশিত: ০৬. ডিসেম্বর. ২০১৬ | মঙ্গলবার

কানাইঘাট প্রতিনিধিঃ সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা নদী থেকে আইনের তোয়াক্কা না করে পাথর খেকোরা নির্বিঘ্নে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে উত্তোলন করছে পাথর। চরিপাড়া এলাকাবাসী ও ঘটনাস্থলের নিকটবর্তী লোকজন বার বার বাধা নিষেধ দেয়াকে উপেক্ষা করে পরিবেশ বিধ্বংসী যান্ত্রিক পদ্ধতিতে (বোমা মেশিন) পাথর উত্তোলন চলছে দিনরাত।

এলাকাবাসী ইতিমধ্যে ইউএনও, থানা ওসিসহ উপজেলা প্রশাসনকে একাধিকবার অবহিত করার পরও কোন কার্যকরী ভ’মিকা নেয়া হচ্ছে না। কানাইঘাটের অতি প্রাচীন জনপদ চরিপাড়া এলাকা সুরমা নদীর বুক পরিনত হয়েছে বোমাজানে।

বোমা মেশিন, ড্রেজিং মেশিন ও সেইফ মেশিন সহ বিভিন্ন রকম ইঞ্জিন দিয়ে গভীর থেকে উত্তোলিত হচ্ছে পাথর আর বালু। এমন অবস্থায় এলাকার অস্তিত্ব রক্ষায় স্থানীয়রা যেনো অসহায় হয়ে পড়েছেন।

পরিবেশ বিধ্বংসী যান্ত্রিক পদ্ধতি (বোমা মেশিন) ব্যবহার করে মানবসৃষ্ট মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা উল্লেখ করে চরিপাড়া এলাকাবাসী সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন।

কানাইঘাটের ৪নং সাতবাঁক ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার চরিপাড়ার সাহিকুল আলম, রিয়াজ, একলিম রাজাসহ বিবাদী ৯জনের নাম তুলে ধরে আবেদনে এলাকাবাসী উল্লেখ করেন, আমরা সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার অন্তর্গত চরিপাড়া গ্রামের স্থায়ী বসবাসকারী বাসিন্দা।

আমাদের গ্রামটি খরস্রোতা পাহাড়ী নদী লোভা ও সুরমা নদীর মিলিত স্থানে সুরমা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত অতি প্রাচীন জনপদ।

আমাদের বাড়ী ও ক্বারিপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন নদীর ঘাটে ও নদীর গর্ভে ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের পাথরের অস্তিত্ব যা গ্রামটিকে নদীর ভাঙ্গন থেকে যুগ যুগ ধরে রক্ষা করে আসছে।

আমরাও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নদীর তীরে অবস্থিত ক্বারিপাড়া জামে মসজিদ ও আমাদের বাড়ীর সংলগ্ন নদীর তীর রক্ষার জন্য পাথর দিয়ে নদীর ভাঙ্গন রোধ করার চেষ্ঠা করে আসিতেছি। বিগত কয়েক বছরে ভাঙ্গনে গ্রামের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের প্রায় ১ মাইল জায়গা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

বিগত ২৩/১০/২০১৬ইং তারিখ হতে আবেদনে উল্লেখিত বিবাদীগণ দলবদ্ধ হয়ে গায়ের জোরে বোমা মেশিন, ড্রেজিং মেশিন ও সেইফ মেশিন ইত্যাদি সহ বিভিন্ন রকমের ইঞ্জিন দিয়ে ঘটনাস্থল নদীতে গর্ত করে পাথর ও বালি উঠানো ও বিক্রয় অব্যাহত রেখেছে।

আমরা এলাকাবাসী ও ঘটনাস্থলের নিকটকর্তী লোকজন বার বার বাধা নিষেধ দেয়া সত্ত্বেও পাথর ও বালি খেকো চক্ররা বাধা অমান্য করে তাহা উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।

যাহা আমাদের গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে এবং পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেট বিভাগের রাষ্ট্র পক্ষে আপনি মালিক। আপনার অনুমতি ব্যতিরেকে পাথর ও বালি উত্তোলন দন্ডনীয় অপরাদ।

ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশে ও বিদেশে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য সভা, সেমিনার করে যাচ্ছেন এবং দেশে-বিদেশে ভ’য়শী প্রশংসায় প্রশংসিত হয়েছেন এবং দেশের যেকোন জায়গায় পরিবশে বিধংসীকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন।

তাই পরিবেশ বিধ্বংস থেকে রক্ষা, নদীর তীর ভাঙ্গন রোধ ও পরিবেশ বিধ্বংশকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনারের প্রতি জোর দাবী জানান এলাকাবাসী।

লিখিত আবেদন প্রদানকালে এলাকাবাসীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ আহমদ, ফয়েজ আহমদ, আবুল মালিক, নুরুল ইসলাম, আবিদুল্লাহ, আশিকুর, রুহুল আমিন, আব্দুল ওয়াকিল, আব্দুল মুমিন, মো. জাফর হোসেন প্রমুখ।

চরিপাড়া এলাকার সাধারণ লোকজন জানান, যুগ যুগ ধরে পূর্ব পুরুষসহ আমরা এই এলাকায় বসবাস করে আসছি। আমাদের বাপ-দাদার ভিটা-মাটি ছেড়ে কোথায় যাবো। আমাদের কথা কেউ শুনেনা। বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। বিগত কয়েক বছরে ভাঙ্গনে গ্রামের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের প্রায় ১ মাইল জায়গা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

এখনো এই ভাঙ্গনের আশংকায় এলাকার মানুষের নিরব কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। স্থানীয়রা জানান, তাদের এখন একটাই আবেদন কানাইঘাটের এই প্রাচীন জনপদ চরিপাড়া রক্ষা করতে যেন, প্রশাসনিক ভাবে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান রাতে মেশিনের শব্দে মাটি কেঁপে উঠে। পড়া লেখায় ব্যঘাত ঘটে। এনিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখা-লেখি হচ্ছে, এলাকার লোকজনও উচ্চ পযার্য়ে আবেদন নিবেদন করেছেন। কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। তাই বিলিন হওয়ার পথে এই গ্রামটিকে রক্ষা করতে সরকারের ঊধর্ক্ষতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন শিক্ষার্থীরা।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৭২ বার

Share Button

Callender

May 2024
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031