শিরোনামঃ-

» আজ মাশরাফি ও তার ছেলে সাহেল মর্তুজার জন্মদিন!

প্রকাশিত: ০৫. অক্টোবর. ২০১৬ | বুধবার

সিলেট বাংলা নিউজ স্পোর্টস প্রতিনিধিঃ ১৬ কোটি বাঙ্গালীর হৃদয়ের স্পদন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সর্বকালে সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মতুর্জা ও তার একমাত্র পুত্র সাহেল বিন মতুর্জার জন্মদিন। বাপ-বেটার জন্মদিনে সিলেট বাংলা নিউজ ডটকম’র পক্ষ থেকে তাদের জন্য রইল ফুলেল শুভেচ্ছা ও অনেক অনেক শুভকামনা।
একই দিনে জন্মদিন উৎযাপন করবে পিতা-পুত্র। কারণ এক দিনেই তাদের জন্ম। ভাবতে ভালোই লাগে সেই ভাগ্যবান পিতা-পুত্রের কথা! ১৫ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে বল হাতে তিনি যেমন সফল, তেমনি সফল নেতৃত্বেও। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ আইসিসির ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের উন্নতি।
অন্য সবার জন্য তার জীবনের গল্পটাও দারুণ অনুপ্রেরণার। ২ হাঁটুতে সাত-সাতটি অস্ত্রোপচারও তাকে পারেনি দমাতে। অদম্য মানসিকতা নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন বারবার, লড়াই করেছেন বুক চিতিয়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গেছেন সম্মানজনক এক উচ্চতায়। সেই লড়াকু সৈনিক মাশরাফি বিন মতুর্জার জন্মদিন আজ (বুধবার)। ৩৪ বছরে পা রাখলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল এই অধিনায়ক।
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট দলের নেতীত্ব দিচ্ছেন। তার হাত ধরেই এসেছে টাইগারদের শততম জয়। কোটি ভক্তের ভালোবাসায় ৭ বার অপরেশানের পরও নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছেন দেশের ক্রিকেটে।

১৯৮৩ সালের আজকের দিনে জন্ম তার নড়াইলে। ডাকনাম তার কৌশিক। মজার ব্যাপার হলো তার ছেলে সাহেলের জন্মদিনটাও একই! ভাগ্যবান বাবাই বলতে হবে তাকে, মাশরাফি অবশ্য অনেকবারই বলেছেন কথাটা। ২০১৪ সালের এই দিনে ঢাকায় জন্ম সাহেলের।

মাশরাফির ছোট বেলাটা কেটেছে দস্যিপনায়; স্কুল পালিয়ে চিত্রা নদীতে সাঁতার কেটে, ফুটবল আর ব্যাডমিন্টন খেলে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পাওয়ার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলিং কোচ অ্যান্ডি রবার্টস তাকে করেছেন আরও ধারালো। প্রথম শ্রেণির কোনও ম্যাচ না খেলেই টেস্টে অভিষেক হয়েছিল তার। বৃষ্টি বিঘ্নিত সেই ম্যাচে এক ইনিংস বল করে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন মাশরাফি।
এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’কে। চট্টগ্রামে কিংবা পোর্ট অব স্পেন-ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম দুটি জয়েই ম্যাচসেরার পুরস্কার তার। শুরুতে শুধু বোলার হিসেবে পরিচয়টা সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তাকে অলরাউন্ডার বললেও ভুল হবে না। ৩৬ টেস্টে ৭৮ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ৩ হাফ সেঞ্চুরিসহ ৭৯৭ রানও আছে তার নামের পাশে। আর ১৬৩ ওয়ানডেতে উইকেট পেয়েছেন ২০৮টি, আর রান ১,৪৫০। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হিসেবে সাকিবের পরই তার অবস্থান।

আক্রমণাত্মক ও গতিময় বোলিং দিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে থাকতেই তিনি নজর কেড়েছিলেন সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসের, যিনি তখন ছিলেন দলটির অস্থায়ী বোলিং কোচের দায়িত্বে। রবার্টসের পরামর্শে মাশরাফিকে বাংলাদেশ ‘এ’ দলে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে মাত্র একটি ম্যাচ খেলেই জাতীয় দলের দরজা খুলে যায় মাশরাফির। ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক।

বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচটি ড্র হলেও মাশরাফি অবশ্য অভিষেকেই তার জাত চিনিয়েছিলেন ১০৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে। মজার ব্যাপার হলো মাশিরাফির প্রথম শ্রেণির ম্যাচও ছিল এটি। ক্রিকেটের বিরল এই ঘটনার সাক্ষী হন তিনি ৩১তম খেলোয়াড় হিসেবে, যা ১৮৯৯ সালের পর তৃতীয়।
একই বছরের ২৩ নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে মাশরাফির অভিষেক হয় ফাহিম মুনতাসির ও তুষার ইমরানের সঙ্গে। অভিষেক ম্যাচে মোহাম্মদ শরীফের সঙ্গে বোলিং ওপেন করে তিনি ৮.২ ওভারে ২৬ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। ওয়ানডে ও টেস্ট ক্রিকেটে দুই ফরম্যাটেই গ্রান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন মাশরাফির প্রথম শিকার!

নিজের তৃতীয় টেস্ট খেলার সময় তিনি আঘাত পান হাঁটুতে। তাতে প্রায় দুই বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে হয় তাকে। ফিরেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬০ রানে ৪ উইকেট নেওয়ার পর আবার আঘাত পান হাঁটুতে। এ যাত্রায় তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হয় প্রায় বছরখানেক।

২০০৬ সালে এক বর্ষপঞ্জিকায় মাশরাফি ছিলেন একদিনের আন্তর্জাতিক খেলায় বিশ্বের সর্বাধিক উইকেট শিকারি বোলার। তিনি ওই বছর নিয়েছিলেন ৪৯ উইকেট। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যে আলো ছড়িয়েছিলেন মাশরাফি, তাতে নিষ্ঠুর চোট তার শত্রু হয়ে না দাঁড়ালে উইকেট সংখ্যায় অনন্য এক উচ্চতায় যে তিনি উঠতেন, সেটা বলাই যায়।
ক্যারিয়ারের চলার পথে আঘাত এসেছে অনেক। কষ্টের অথৈ সাগরে পড়লেও কখনও ডুবে যাননি, সাঁতার কেটে ঠিকই উঠেছেন তীরে। সব কষ্টকে জয় করে ফিরেছেন বীরের বেশে। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কার কথা যদি বলা যায়, তাহলে সেটা ২০১১ সালের বিশ্বকাপ খেলতে না পারা। নিজেকে সেবার ধরে রাখতে পারেননি মাশরাফি। মনের দেয়াল ভেঙে কষ্টের চোরাস্রোত সামনে এসে বয়েছিল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামসংলগ্ন একাডেমি মাঠে। চোখের জলে অন্য এক মাশরাফি ধরা দিয়েছিল সেদিন। যে দৃশ্যটা এখনও ভুলতে পারেননি অনেক সাংবাদিক।
যদিও সেই কষ্ট কিছুটা হলেও কমেছিল চার বছর পর। তাঁর নেতৃত্বেই যে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপে গিয়েছিল বাংলাদেশ। শুধু কি যাওয়া, তার অধিনায়কত্বে দেখা মেলে অন্য এক বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের বাংলাদেশের ক্রিকেট এমন সাফল্য পায়নি কখনও, কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে অমন বিতর্কিত কয়েকটি সিদ্ধান্তের জন্ম না নিলে আরও অনেক দূরই যেতে পারতো টাইগাররা। শুধু বিশ্বকাপে সাফল্য নয়, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বদলে দেওয়াতেও তার ভূমিকা অনেক।
ওয়ানডে অধিনায়কটা তার পাওয়া বছর দুয়েক আগে ৩০ সেপ্টেম্বর। জন্মদিনের কয়েক দিন আগে। আর মিশন শুরু ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ওই সিরিজই মাশরাফির দলের স্বপ্নযাত্রার সূচনা। এর পর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা এবং সেখানে ভারতের কাছে বিতর্কিত হার। দেশে ফিরে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়েকে টানা ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। আর সবশেষ যোগ হলো আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়।
ছুটছেই বাংলাদেশের জয়রথ। যে রথের চালকের আসনে মাশরাফি। যার নেতৃত্বে উঠেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন সূর্য। লড়াকু সেই মানুষটির জন্মদিনে কোটি ভক্তের চাওয়া একটাই, ‘ভালো থাকো মাশরাফি’!

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৬৩ বার

Share Button

Callender

May 2024
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031