শিরোনামঃ-

» জাল দলিলে জমি কেনাবেচা

প্রকাশিত: ০৩. আগস্ট. ২০১৬ | বুধবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ জাল দলিল দিয়ে গুলশানের ২২ কাঠারও বেশি জমি বিক্রি করেছেন আলোচিত-সমালোচিত ব্যবসায়ী রাগীব আলী। আর মূল্যবান এই সম্পত্তিটি কিনেছেন এ সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদার। অথচ জমিটি অগ্রণী ব্যাংকের কাছে বন্ধক দেওয়া।

আবার রাষ্ট্রমালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংক এখন নজরুল ইসলাম মজুমদারকে জমি পাইয়ে দিতে নানা ধরনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। সরকারের একটি প্রভাবশালী অংশও চাইছে গুলশানের এই দামি সম্পত্তি নজরুল ইসলাম মজুমদারেরই হোক। যদিও সর্বোচ্চ আদালত থেকে বলা হয়েছে জমির দলিলটাই জাল। দলিল জাল করেছেন রাগীব আলী। ব্যাংকের সহায়তায় অন্যের বন্ধকি জমি কেনাবেচা করার এই ঘটনা ব্যাংকিং ইতিহাসে বিরল বলেই জানাচ্ছেন ব্যাংকাররা।

নজরুল ইসলাম মজুমদার বেসরকারি ব্যাংক এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান। একই সঙ্গে তিনি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসেরও (বিএবি) চেয়ারম্যান। সরকারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেই ব্যবসায়ী মহলে তাঁর পরিচিতি রয়েছে। ব্যাংক ব্যবসা ছাড়াও তিনি একজন তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী।

অন্যদিকে ভুয়া দলিল দিয়ে জমি বিক্রি করা রাগীব আলী বেসরকারি সাউথইস্ট ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান। রাগীব আলী যে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সম্পত্তি দখল করে থাকেন, সুপ্রিম কোর্টের অন্য এক রায়েও তা প্রমাণিত হয়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ একটি বেঞ্চ গত ১৯ জানুয়ারি এক রায়ে বলেছেন, নিজের নামে চা-বাগানের সম্পত্তি ইজারা দেখাতে রাগীব আলী ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহ ইমদাদুল হকের স্বাক্ষর জাল করে প্রায় এক যুগ সিলেটের তারাপুর চা-বাগান (দেবোত্তর সম্পত্তি) দখলে রাখেন।

গুলশানের মূল্যবান ২২ কাঠা ২ ছটাক জমির মূল মালিক এ আর এ জুট ট্রেডিং করপোরেশন। এই প্রতিষ্ঠানটির নেওয়া ঋণের বিপরীতেই  অগ্রণী ব্যাংকের কাছে জমিটি বন্ধক রয়েছে। আর এ অবস্থাতেই জাল দলিল দিয়ে ওই সম্পত্তি বেচাকেনা করেছেন প্রভাবশালী ওই দুই ব্যবসায়ী। অর্থ মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংক, সুপ্রিম কোর্ট এবং অগ্রণী ব্যাংক থেকে পাওয়া বিভিন্ন চিঠি ও স্মারকলিপি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এ বিষয়ে চেষ্টা করেও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখতের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

যেভাবে শুরু: অগ্রণী ব্যাংকের পর্ষদ বৈঠকে উপস্থাপিত নথি অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ কোর্ট রোড শাখা থেকে ২৬ বছর আগে, ১৯৯০ সালে ৫ কোটি ১২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল এ আর এ জুট ট্রেডিং। ঋণের বিপরীতে বন্ধক ছিল গুলশানের ১ বিঘা ২ কাঠা ২ ছটাক জমিসহ রাজধানীর তেজতুরীবাজারের ৫ কাঠা ও সেনপাড়া পর্বতার ১০ কাঠা ১৩ ছটাক জমি এবং খুলনার দৌলতপুরের একটি ফ্ল্যাট।

কিন্তু ৭২ লাখ টাকা পরিশোধের পর খেলাপি হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর সুদাসলে ১৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা আদায়ে ১৯৯৭ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে অগ্রণী ব্যাংক। রায় পক্ষে এলে ২০০১ সালে গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যাংক ডিক্রি জারি মামলা করে। এবার ব্যাংকের দাবি ২৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। সর্বশেষ ব্যাংকের দাবি বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। পরবর্তী সময়ে আদালতের সিদ্ধান্তে গত বছর, ২০১৫ সালে ৪০ কোটি ৩২ লাখ টাকা মওকুফ পায় এ আর এ জুট ট্রেডিং। ফলে প্রতিষ্ঠানটির চূড়ান্ত দেনা দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

সব সম্পত্তি অবমুক্ত করতে অগ্রণী ব্যাংককে ১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে—আদালত এমন রায় দেওয়ার পর এ আর এ জুট ট্রেডিং টাকা জমা দিতে ব্যাংকে যায়। ব্যাংক তখন প্রতিষ্ঠানটিকে জানায়, টাকা দিতে হবে না, বরং নজরুল ইসলাম মজুমদারের নামে গুলশানের জমিটি লিখে দিতে হবে।

কেন নজরুল ইসলাম মজুমদার: এ আর এ জুট ট্রেডিংয়ের সঙ্গে কোন ধরনের সম্পর্ক না থাকলেও পুরো ঘটনায় নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রবেশ করেন ২০১২ সালে। এ নিয়ে ব্যাংকের নথিতে লেখা আছে, নজরুল ইসলাম মজুমদারের কাছে রাগীব আলী নিজের জমি দেখিয়ে তা বিক্রি করেন ২০১২ সালের ২২ মে। অথচ ২০০৪ সাল থেকেই রাগীব আলীর বিরুদ্ধে জমির মালিকানা নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের মামলা চলমান। তবে মামলা চলাকালে জমি কেনাবেচা কীভাবে করা হলো এর কোন সদুত্তর ব্যাংকও দিতে পারেনি।

নথিপত্র অনুযায়ী, অগ্রণী ব্যাংকের করা মামলায় জজ কোর্টের পর হাইকোর্টের রায়ও যায় রাগীব আলীর বিরুদ্ধে। তারপরও তিনি জমি বিক্রি করেন নজরুল ইসলাম মজুমদারের কাছে। বিক্রির পর রাগীব আলী আপিল করেন সুপ্রিম কোর্টে। ২০১৩ সালের ৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টেও রাগীব আলীর দলিল বাতিল হয়। এ বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে পুনঃশুনানি হলে সেখানেও হেরে যান তিনি।

যোগাযোগ করলে কোম্পানি আইন নিয়ে কাজ করা আইনজীবী তানজীব-উল-আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনা হচ্ছে ব্যাংকের সঙ্গে এ আর এ জুট ট্রেডিংয়ের। নজরুল ইসলাম মজুমদার এখানে কিছুই নয়।’ তিনি বলেন, ‘আদালতে যেহেতু রাগীব আলীর দলিল টেকেনি, খুবই স্বাভাবিক যে নজরুল ইসলাম মজুমদারের দলিলও অবৈধ হবে।’

এ আর এ জুট ট্রেডিংয়ের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল আজিম খান ২০১৫ সালের জুলাইয়ে মারা যাওয়ার পর তাঁর ছেলে শামসুল আরেফিন খান চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।

কার টাকা কে দেয়: রাগীব আলীর কাছ থেকে কেনার কথা বললেও নজরুল ইসলাম মজুমদার একই জমির জন্য টাকা দিয়েছেন অগ্রণী ব্যাংককেও। টাকা দিয়েছেন আবার এ আর এ জুট ট্রেডিংয়ের নামে। অন্যদিকে এ আর এ জুটের চেয়ারম্যান শামসুল আরেফিন খান দেনা পরিশোধে গত ফেব্রুয়ারিতে অগ্রণী ব্যাংকে গেলে ব্যাংক তখন তাঁকে জানায়, জমির বিপরীতে নজরুল ইসলাম মজুমদারের কাছ থেকে টাকা পেয়ে গেছে ব্যাংক।

তারপরও গত ২৫ জুলাই অগ্রণী ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ কোর্ট রোড শাখায় এ আর এ জুট ট্রেডিং ১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা জমা দিয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক এখন টাকা পেয়েছে দুই জায়গা থেকে। জানা গেছে, ব্যাংক শুরুতে অর্থ নিতে অনিচ্ছুক ছিল। পরে আইনগত কারণে অর্থ জমা নিতে বাধ্য হয়।

এক সপ্তাহেই পাল্টে যায় সব: দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে এ আর এ জুট ট্রেডিং নিয়ে মামলা ও নথি চালাচালি হলেও নজরুল ইসলাম মজুমদারের পক্ষে অগ্রণী ব্যাংক নানা তৎপরতা শুরু করে গত বছরের শেষের দিকে এসে।

২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর অগ্রণী ব্যাংকের এমডি (বর্তমানে অপসারিত) সৈয়দ আবদুল হামিদ স্বাক্ষরিত পর্ষদ স্মারকে দেখা যায়, তিন মাসের মধ্যে ১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা পরিশোধ করলে এ আর এ জুটের সব সম্পত্তি অবমুক্ত করা হবে। সে হিসেবে এ আর এ জুটের ঋণ পরিশোধের শেষ সময় ছিল ২২ মার্চ।

কিন্তু পরের সপ্তাহ ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পর্ষদ বৈঠকেই পাল্টে যায় সব। এই বৈঠকে পাঁচটি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে পর্ষদ। এগুলো হচ্ছে ঋণগ্রহীতা মৃত, ব্যবসা বন্ধ, ঋণ হিসাবটি দীর্ঘদিন শ্রেণীকৃত, মামলাকৃত ও অবলোপনকৃত, বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রির জন্য নিলাম ডাকা হলেও কোনো দরদাতা পাওয়া যায়নি এবং আদালতের মাধ্যমে ঋণ আদায় সময়সাপেক্ষ।

বৈঠকের ঠিক পরের দিন ৩১ ডিসেম্বরই এক্সিম ব্যাংকের একটি চেকে পে-অর্ডার করে অগ্রণী ব্যাংককে ১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা দেন নজরুল ইসলাম মজুমদার, কিন্তু টাকা জমা করা হয় এ আর এ জুট ট্রেডিংয়ের নামে। অগ্রণী ব্যাংকই এ ব্যবস্থা করে দেয়।

গত ২৩ জুন তেজগাঁওয়ে নাসা গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে নজরুল ইসলাম মজুমদারের সঙ্গে এ নিয়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি রাগীব আলীর কাছ থেকে জমি কিনেছি ৭০ কোটি টাকায়। ৬০ কোটি টাকায় দলিল হয়, ১০ কোটি টাকা দিয়েছি নগদ। জমিটি যেহেতু ব্যাংকের কাছে দায়বদ্ধ, সেটা পরিষ্কার করতেই ব্যাংককে টাকা দিয়েছি।’

জনাব মজুমদার আরও বলেন, ‘আসল কথা হচ্ছে, এ আর এ জুটের লোকেরা আমার কাছে ১০ কোটি টাকা চাঁদা চেয়েছিল। কিন্তু আমি চাঁদা দেওয়ার লোক নই।’

জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি কাজী সানাউল হক এ বিষয়ে গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নজরুল ইসলাম মজুমদারের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার পর এ আর এ জুটের কাছ থেকেও টাকা নেওয়া হয়েছে। কেন নেওয়া হয়েছে, সে ব্যাখ্যা আমি এখন দিতে পারব না।’

ব্যাংকের স্ববিরোধিতা: যে সম্পত্তির বিপরীতে নজরুল ইসলাম মজুমদারের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক, তার জন্য কোনো নিলামই অনুষ্ঠিত হয়নি। ব্যাংকের স্মারকেই লেখা রয়েছে, ২০০৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর মানবজমিন এবং ১৭ ডিসেম্বর আল-মোজাদ্দেদ পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। ২০০৪ সালের ৪ জানুয়ারি নিলাম অনুষ্ঠানের তারিখ থাকলেও তা অনুষ্ঠিত হয়নি। অথচ গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় বলা হয়েছে, ‘বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রির জন্য নিলাম ডাকা হলেও কোনো দরদাতা পাওয়া যায়নি।’

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংককে গত ৫ এপ্রিল এক চিঠিতে অগ্রণী ব্যাংক জানায়, রাগীব আলী যে নজরুল ইসলাম মজুমদারের সঙ্গে একটি ভুয়া বায়না দলিল করেন, ব্যাংক তা জানে না। এ আর এ জুটের নামে কে বা কারা টাকা জমা দিয়েছে, তাও জানে না ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমতি দিলে নজরুল ইসলাম মজুমদারের কাছ থেকে নেওয়া টাকা বাজেয়াপ্ত করে এ আর এ জুট ট্রেডিংয়ের কাছ থেকেই টাকা নেওয়া হবে।

যদিও পরের সপ্তাহেই বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত নেয় অগ্রণী ব্যাংক। ১৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ৪৫২তম পর্ষদ বৈঠকের পর ১৭ এপ্রিলের স্মারকে বলা হয়, ‘বন্ধকদাতা যেহেতু ব্যাংকের অগোচরে রাগীব আলীর কাছে সম্পত্তি বিক্রি করেছেন, সেহেতু এ সম্পত্তির ওপর উত্তরাধিকারীদের কোনো অধিকার থাকে না।’

অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদ গত ৩০ জুন অনিয়মের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে অপসারিত হয়েছেন। তার আগে ২৭ জুন তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি অনেক জটিল। আইনি মতামত পেয়েই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

রাগীব আলী কীভাবে এখানে: পুরো ঘটনায় রাগীব আলীর প্রবেশও হঠাৎ করে। এ নিয়ে গত ২২ ডিসেম্বরের পর্ষদ বৈঠকের পর ২৩ ডিসেম্বর তৈরি অগ্রণী ব্যাংকের এক স্মারকে বলা হয়, ২০০৪ সালে ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকায় গুলশানের জমিটি বিক্রির জন্য রাগীব আলীর সঙ্গে চুক্তি করে এ আর এ জুট ট্রেডিং। অগ্রণী ব্যাংক তখন রাগীব আলীর বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই মামলায় শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টেও হেরে যান রাগীব আলী, বাতিল হয় জমির দলিল।

রাগীব আলীর দলিল তো বাতিল হয়ে গেছে, আপনার দলিল কীভাবে বৈধ হয়, এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাগজপত্র দেখেই কিনেছি। মাঝখানে যে ব্যাংক মামলা করে রেখেছে, তা রাগীব আলী আমার কাছে গোপন করেছেন।’ জটিলতা দেখা দিলে এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাহায্যও নিয়েছেন বলে দাবি করেন নজরুল ইসলাম মজুমদার।

তবে গত ৭ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংককে এক চিঠিতে এ আর এ জুট জানায়, রাগীব আলীর কাছে জমি বিক্রি করা হয়নি।

সব আদালতে আপনার দলিল বাতিল হয়ে গেছে, নজরুল ইসলাম মজুমদারের কাছে জমি বিক্রি তো তাহলে অবৈধ, জানতে চাইলে গত ১৮ জুলাই রাগীব আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাগজপত্র না দেখে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে বিক্রির পর আদালতে মোকদ্দমার সব বিষয় নজরুল ইসলাম মজুমদারের দেখার কথা।’ এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য নেই বলেও জানান রাগীব আলী।

এ আর এ জুটের যত অভিযোগ: এ বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদের কাছে এক আবেদনে শামসুল আরেফিন খান বলেন, ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জের শাখা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে যোগসাজশ করে কেউ তাঁদের জমি আত্মসাতের চেষ্টা করছেন। জমি যাতে লিখে না নিতে পারে, সে জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (রাজউক) গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আবেদন করেন তিনি।

এরপর গত ৬ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানের কাছে এক আবেদনে শামসুল আরেফিন খান বলেন, ‘ব্যাংক কর্মকর্তারা নজরুল ইসলাম মজুমদারের নামে জমি লিখে দিতে চাপ দিচ্ছেন।’

নতুন গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে গত ৬ এপ্রিল এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ে ১২ এপ্রিল একই আবেদন করেন শামসুল আরেফিন খান।

দুদকেও এক ভিন্ন আবেদনে বলেন, বড় অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে গোপনে তাঁদের সম্পত্তি অন্যের হাতে তুলে দিয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত ১৭ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরকে বিষয়টি সুরাহা করে মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলেছে।

অগ্রণী ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখার উপমহাব্যবস্থাপক জহিরুল ইসলাম মোল্লা গত ৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ অর্থঋণ আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য এক আবেদন করেন। ১০ আগস্ট এর শুনানি।

আইনজীবী তানজীব-উল-আলম সামগ্রিক বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার মনে হয় এই ঘটনায় অগ্রণী ব্যাংক, রাগীব আলী ও নজরুল ইসলাম মজুমদার—সবারই ভুল রয়েছে। তবে প্রতারণা করায় রাগীব আলীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। আর অগ্রণী ব্যাংকের উচিত হবে এ আর এ জুটের কাছ থেকে টাকা নেওয়া।’

এ আর এ জুটের চেয়ারম্যান শামসুল আরেফিন খান ৩১ জুলাই প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জালিয়াতির শিকার। উচ্চ আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও আমরা বঞ্চিত। এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যায়বিচার চাচ্ছি।’

দৈনিক প্রথম আলোর রিপোর্ট, ০৩/০৮/২০১৬ইং

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫৮৪ বার

Share Button

Callender

March 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031