শিরোনামঃ-

» ৪ মাস আগে নিবরাসসহ ৭ জন একসঙ্গে তুরস্ক থেকে দেশে আসে

প্রকাশিত: ১০. জুলাই. ২০১৬ | রবিবার

সিলেট বাংলা নিউজ ক্রাইম ডেস্কঃ গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলায় অংশ নেওয়া নিব্রাস ইসলামসহ বাংলাদেশি ৭ তরুণ ৪ মাস আগে তুরস্ক থেকে জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফেরে।
বিমানবন্দরেই এদের ৩ জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে পুলিশ। তবে অন্য ৪ জন চলে যায়। কিছুদিনের মধ্যেই ওই ৩ তরুণ কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পায়। এই তরুণরা ভ্রমণ ভিসায় তুরস্ক গিয়েছিল।
তাদের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্ক দিয়ে সিরিয়ায় যাওয়া। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় তুরস্কেই একটি স্থানীয় জঙ্গি শিবিরে কিছুদিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।
তবে এই ৭ তরুণের ক’জন গুলশানের হামলায় অংশ নিয়েছে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শুধু নিব্রাসের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দারা। রোহান ইবনে ইমতিয়াজও ওই গ্রুপে ছিল বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। তবে গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে চাচ্ছেন না। তারা বলছেন, আরো হামলার আশঙ্কা রয়েছে। তাই সব তথ্য বলা যাচ্ছে না।
গুলশানের ঘটনার তদন্ত তদারকি করছে এমন একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, হলি আর্টিজান বেকারির ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার পুরনো ফুটেজ থেকে দেখা যায়, হামলার আগে অন্তত ২ বার ৩ জন করে ওই বেকারিতে গিয়েছিল।
সর্বশেষ ২ দিন আগে হামলাকারী ৩ যুবক আর্টিজানে যান। বেকারির বাবুর্চির সহকারী শাওনের সঙ্গে তাদের কথা বলার দৃশ্য সিসিটিভিতে রয়েছে। যে কারণে শুরু থেকেই শাওনকে সন্দেহে রেখেছিলেন গোয়েন্দারা।
পরে অবশ্য চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাওন মারা যান। হামলাকারীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলেও শেষ পর্যন্ত দেখা যায় ৫ জন হামলাকারীই বেকারিতে ঢুকেছিল। যাদের সবাই কমান্ডো অভিযানে গুলিতে মারা গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হামলার ২ মাস আগে বনানীতে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বাড়ির একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় তরুণরা। সেখান থেকেই তারা হামলার ছক কষে। এই প্রভাবশালীর সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা।
কেন তিনি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার তথ্য পুলিশকে জানাননি। জবাবে তিনি বলেছেন, কেয়ারটেকারই ভাড়া দিয়েছিল। ওই কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দারা। তবে তার কাছ থেকে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারীরা প্রথমে টার্গেট করেছিল একটি ৫ তারকা হোটেল।
কিন্তু হোটেলের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ভেতরে ঢোকার পর কতজন বিদেশি পাওয়া যাবে সেটা নিয়ে নিশ্চিত হতে পরেনি তারা। তাই অপেক্ষাকৃত বেশি বিদেশি পাওয়া যায় এমন রেস্টুরেন্ট পছন্দ করে। এমন আরো দু’টি ৩টি রেস্টুরেন্ট রেকি করলেও শেষ অবধি বেছে নেয় হলি আর্টিজানকে। কারণ সন্ধ্যার পর এই রেস্টুরেন্টে বিপুল সংখ্যক বিদেশি অবস্থান করেন। সেটা নিশ্চিত হয়েই তারা হামলা চালায়।
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, তুরস্ক ফেরত যুবকদের কয়েকজন এখনও পলাতক।
এছাড়া মালয়েশিয়া থেকে কয়েকজন ছাত্র দেশে ফিরে এসেছে। তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিদের যোগাযোগ রয়েছে। এই পলাতক জঙ্গিদের খোঁজার চেষ্টা চলছে। আবার বিমানবন্দরে ধরা পড়ার পর কিভাবে জঙ্গিরা জামিনে ছাড়া পেল, আদালতে তাদের নেটওয়ার্ক খুঁজছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
এসব তথ্য জানার পরই আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল বিচারকদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করে বলেছেন, জঙ্গিদের জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারকদের আরো কঠোর হতে হবে। জঙ্গিদের জামিনের ব্যাপারে বিচারকদের সতর্ক হওয়ার আহবান জানান তিনি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন জানান, গত মার্চের শেষ দিকে গুলশানে হামলাকারী জঙ্গি ইমতিয়াজ খান বাবুলের ছেলে রোহান ইবনে ইমতিয়াজ আগারগাঁওয়ে কম্পিউটার সিটিতে গিয়েছিলেন একটি কম্পিউটার কিনতে। তাকে একটি দোকানে দেখে বাবুলকে ফোন করেন তার এক প্রতিবেশী। পরে বাবুল সেখানে গেলেও রোহানকে খুঁজে পাননি।
কম্পিউটার সিটির সিসিটিভির ফুটেজে রোহানের কম্পিউটার কিনে বের হওয়ার দৃশ্য পাওয়া যায়। গোয়েন্দারা ধারণা করছেন, তুরস্ক থেকে ফিরে কম্পিউটার কিনতে গিয়েছিলেন রোহান ইমতিয়াজ।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশীদ বলেন, ‘পরপর দু’টি হামলায় জঙ্গিদের যে উদ্দেশ্য ছিল সেটি পরাভূত হয়েছে। একটি হলো আতঙ্ক ছড়ানো।
কিন্তু আমি দেখলাম বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এই হামলার পর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এবং তারা খুব সোচ্চার।
এদিক থেকে তারা যে ভয় দেখিয়ে জয় করতে চেয়েছিল সেটা সম্ভব হলো না। আরেকটি হলো বিদেশিদের হত্যা করে বিদেশিদের অনুকম্পা পেতে চেয়েছিল কোন রাজনৈতিক গোষ্ঠী। সেখানে বিদেশিদের যে অবস্থান বাংলাদেশের জঙ্গি বিরোধী তৎপরতায় তারা পাশে থাকবে।
ফলে তাদের এই উদ্দেশ্যটাও সফল হয়নি। সেক্ষেত্রে এই উদ্দেশ্য সফল না হওয়ার জন্য আমরা পরবর্তী সময়ে কিশোরগঞ্জে হামলা হতে দেখলাম।
আমার মনে হয়, সেখানেও উদ্দেশ্য খুব একটা সফল হয়নি। সেই কারণে তাদের বেপরোয়া অবস্থান থেকে আরো হয়তো হামলা করার চেষ্টা তারা করবে।’
হলি আর্টিজানের ঘটনার তদন্ত করছেন এমন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জঙ্গিদের ব্যবহার করা একটি পাজেরো জিপ ঘটনার পর থেকে সেখানে ছিল। কমান্ডো অভিযানের সময় জিপটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর থেকে জিপটি পাওয়া যাচ্ছে না।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিপটি আসলে কোথায় গেল সে রহস্যের কিনারা হচ্ছে না। পাশাপাশি ওই দিন হলি আর্টিজানের বাইরে যে গাড়িগুলো ছিল সেগুলো কারা নিয়েছিল সে বিষয়েও খোঁজ-খবর করা হচ্ছে।’

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৩৮ বার

Share Button

Callender

May 2024
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031