শিরোনামঃ-

» সিলেটের গোয়াইনঘাটের নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে উপজেলা প্রশাসনের মতবিনিময়

প্রকাশিত: ২০. ফেব্রুয়ারি. ২০২৩ | সোমবার

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধিঃ

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দীরগাঁও ইউনিয়নে প্রধামন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় নোওয়াগাওঁ হাইলা হাওর পাড়ে ১শ টি পরিবার নিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়েছে।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) নওয়াগাওঁ আশ্রয়ন প্রকল্পের নির্মাণ শ্রমিকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন ও নন্দীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে শ্রমিকদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি একটি করে কম্বল উপহার দেয়া হয়।

এসময় এপ্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের শ্রমের কথা স্মরন করে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।পরে প্রকল্প এলাকায় সিলেট ও গোয়াইনঘাটে কর্মরত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যম নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, প্রাকৃতিক সম্পদের গর্ভধারিণী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা।

এ উপজেলাধীন নন্দিরগাও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও; যে গ্রামে বাস্তবায়িত হয়েছে নোয়াগাও আশ্রয়ণ প্রকল্প। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে “বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবেনা” প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন অর্থাৎ “ক” শ্রেণীর পরিবার পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ইতোমধ্যে ৮৯৫টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে যার মধ্যে নোয়াগাও আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মিত হয়েছে ১শ টি ঘর।

এছাড়াও বর্তমানে এ উপজেলায় আরোও ২শ ৬টি গৃহের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

এক নজরে নওয়াগাওঁ আশ্রয়ণ প্রকল্প হলো, মৌজা-লামাপাড়া, জে.এল নং-১৬৬, খতিয়ান নং-১, দাগ নং- ৪৭, ৪৯ ও ৫০ মোট জমির পরিমান ৫.৩৬ একর (দৈর্ঘ্য ৭৩০ ফুট, প্রস্থ ৩২০ ফুট), ভরাটকৃত জমির পরিমান ৩.২৫ একর (দৈর্ঘ্য ৬৩৫ ফুট, প্রস্থ ২২৫ ফুট) উক্ত জমির চতুর্পাশে খাল খনন পূর্বক জমি ভরাট করা হয়েছে।

খননকৃত খালের দৈর্ঘ্য ১৪৫০ ফুট, খালের পানিধারন ক্ষমতা, ৪.৮৮ মিলিয়ন গ্যালন, প্রকল্পে নির্মিত গৃহ সংখ্যা ১শ টি (প্রতিটি গৃহে দুটি বেডরুম, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট রয়েছে) প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৫ শ টাকা।

এতে গভীর নলকূপ সংখ্যা হচ্ছে মোট ১০টি (সাবমার্জেবল পাম্প ও ওভারহ্যাড ট্যাংক সহ), প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা,প্রতিটি গৃহে পৃথক মিটার সহ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থা সিলেট হতে গোয়াইনঘাট উপজেলাগামী পাকা সড়ক হতে প্রকল্পের সংযোগ সড়কের দূরত্ব ১কিঃমিঃ যা পাকাকরণের কার্যক্রম চলমান। স্থানীয় বাজার হতে দূরত্ব ইউনিয়ন এর প্রধান বাজার “সালুটিকর বাজার” হতে দূরত্ব ৪ কিঃমিঃ।

শিক্ষা ব্যবস্থাঃ প্রকল্পের ১ কিঃমিঃ এর মধ্যে ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল ও ১টি স্কুল এন্ড কলেজ রয়েছে। নিকটবর্তী নদী হতে দূরত্ব ৩ কিঃমিঃ।অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রকল্পের ১ কিঃমিঃ এর মধ্যে ১টি ৩তলা বিশিষ্ট বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র এবং একাধিক মসজিদ ও মন্দির রয়েছে।

গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাও গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে ৫.৩৬ একর জমির চতুর্পাশে খাল খনন পূর্বক ৩.২৫ একর জমি ৬-৭ ফুট উচ্চতায় ভরাট করে প্রায় ২বছর কম্পেকশন এর পর সেই জমিতে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ভরাটকৃত এ জমিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে ১০০টি ঘর।

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন ১শ টি পরিবারের প্রত্যেকে পাবেন ২শতক জমিসহ ১টি ঘর। এই ঘরের উপকারভোগীর নামের তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের কেউ কেউ এখনো থাকেন অন্যের জায়গায় ঘর তুলে। অনেকে আবার বসবাস করছেন খাস জমিতে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর মাধ্যমে গৃহহীন ও ভুমিহীন পরিবারগুলো পাবে আপন ঠিকানা।

নিজের জায়গায় নিজের ঘরের সামনে দাঁড়ানোর নতুন স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে তাদের মনে। অসহায় এ মানুষগুলো নিজেদের স্থায়ী ঠিকানা হচ্ছে জেনে মহাখুশি। তারা এখন নিজদের আত্মপরিচয়ে মাথা উঁচু করে নতুন জীবনে যাত্রার স্বপ্ন দেখছেন।এ প্রকল্পের কাছাকাছি স্থানে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১ম পর্যায়ে ৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছিলো।

২০২১ এর জানুয়ারি মাসে সেই ঘরগুলো পরিদর্শনে আসেন সিলেট-৪ (চার) আসনের সংসদ সদস্য, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ইমরান আহমদ। পরিদর্শনের সময় কালবৈশাখী ঝড়ে বিধ্বস্ত একটি খড়ের ঘরের পাশে নওয়াগাওঁ গ্রামের মৃত হাতিম আলীর ছেলে ইউনুস আলী (৭০)কে কান্নারত অবস্থায় মন্ত্রী মহোদয়ের চোখে পড়ে।

এসময় মন্ত্রী মহোদয় তার সাথে কথা বলে তাকে শান্তনা দেন এবং তাকে একটি সরকারি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এসময় মন্ত্রী এ এলাকায় খাস জমি শনাক্ত করে সেখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১০০টি ঘর নির্মাণ করার নির্দেশ দেন।

মন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে খাস জমি বাছাই পূর্বক মাটি ভরাটের কাজ শুরু করা হয় এবং পরবর্তীতে মাটি কম্পেকশন এর পর সেই জমিতে ঘর নির্মাণ করা হয়।নওয়াগাওঁ আশ্রয়ণ প্রকল্পটিকে মডেল গ্রাম বা সাস্টেইনেবল ভিলেজ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষে এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা, ডিপটিউবওয়েল, ওভার হ্যাড ওয়াটার রিজার্ভার নির্মাণপূর্বক ঘরে ঘরে পানি সাপ্লাই এর ব্যবস্থা সহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই আশ্রয়ন প্রকল্পের ৩ পাশে খাল খনন করা হয়েছে যা এখানকার মানুষের পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী কৃষি জমি আবাদে সহায়তা করবে। এছাড়া প্রকল্পের পূর্ব পাশ দিয়ে একটি বড় খাল খননের পরিকল্পনা করা হচ্ছে যা সরাসরি পার্শ্ববর্তী নদীর সাথে সংযোগ থাকবে। খালের উৎস মুখে সোলার সেচ পাম্প বসানোরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে যাতে করে কৃষি আবাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন “গ্রাম হবে শহর” বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই প্রকল্প একটি ভাল উদাহরণ হওয়া সম্ভব।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, গোয়াইনঘাটের সহকারী কমিশনার ভুমি তানভীর হোসেন, গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ কেএম নজরুল ইসলাম,নন্দিরগাওঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস কামরুল হাসান আমিরুল, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষেন্দু পুরকায়স্থ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল, সিলেট ইমজার সভাপতি মাহবুবুর রহমান রিপন, সাধারণ সম্পাদক গুলজার আহমদ, সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আল আজাদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবির ইকু,সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ, গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের সভাপতি এম এ মতিন, সাবেক সভাপতি মনজুর আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন, প্রতিষ্টতা সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিনহাজ উদ্দিন।

এছাড়াও সিলেট জেলা প্রেসক্লাব, সিলেট প্রেসক্লাব, সিলেট ইমজা ও গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের দায়িত্বশীল ও নির্বাহী সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ১৫৮ বার

Share Button

Callender

March 2024
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031