শিরোনামঃ-

» কে রোধে তাহার বজ্রকণ্ঠ; বঙ্গবন্ধু অবিসংবাদিত নেতা

প্রকাশিত: ০৭. মার্চ. ২০২২ | সোমবার

আল-আমিনঃ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ থেকে শত বছর আগে জন্মগ্রহণ করেছেন এই বাংলায় এবং তাঁর নেতৃত্বে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য লাল-সবুজের পতাকা এবং স্বাধীন মানচিত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাঙালির মানসজগতের চিন্ময় পুরুষ স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের প্রতিদিনের জীবনে এমনভাবে ব্যাপ্ত হয়ে আছেন তাঁকে চাইলেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এই বিশ্বনেতার জন্মের শতবর্ষ উদযাপিত হয়েছে ১৭ মার্চ ২০২০ সাল। এ আনন্দ ছিল আমাদের সকলের। তাঁর জন্মের জন্য ধন্য হয়েছে এই বাংলার আকাশ মাটি ও পথ। মুজিব জন্মশতবর্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের প্রণতি ও ভালােবাসার এক অপূর্ব বহিঃপ্রকাশ। বাংলা ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ এবং বাহাত্তরের সংবিধান তাঁর নেতৃত্বেই অর্জন হয়েছে।

সাত মার্চ রেসকোর্স ময়দানে কবি জনতার মঞ্চে এসে তার অমর কবিতাবিতাখানি শুনালেন। লক্ষ জনতা হৃদয়ে ধারণ করে সেই দিন প্রস্তুত হয়েছিলেন মুক্তির সংগ্রামে।
এসো বীর,
এসো জনতা,
এসো কবি,
আমরা বাঙালী,
আমরা স্বাধীনতার গল্প শুনি।
মন্ত্রটি ছিল এরুপ। ঐতিহাসিক সাত মার্চ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুক্তির সংগ্রামে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা স্মরণীয় দিন। বসন্তের শুকনো এদিনে একটি জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করার জন্য রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই শুদ্ধ ভাষণটি দিয়েছিলেন। এই ভাষণ ছিল স্বাধীনতার যুদ্ধের বিজয়ের প্রধান চাবি। এই ভাষণে সমগ্র বাঙালি জাতি স্বাধীনতার সংগ্রামের জন্য উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। সমগ্র বাঙালি জাতি অনুপ্রানিত হয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যতদিন বাঙালির জাতিসত্ত্বা বেঁচে থাকবে ততদিন এই ভাষণটি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বহমান রবে।

সাত মার্চের ভাষণ শুধু একটি ভাষণ নয়। এর প্রতিটি বাক্য একটি করে কবিতা। এই কবিতাগুলো প্রেরণার, বাঙালি জাতির মুক্তির এবং চেতনার। উত্তাল জনসমুদ্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক-
‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’। এই তেজোদীপ্ত ঘোষণায় বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ।
‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না।
আমরা এদেশের মানুষের অধিকার চাই।’ বঙ্গবন্ধুর এই কথা থেকে আজ তরুণ প্রজন্ম শিক্ষায় সমৃদ্ধ ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সাত মার্চ বাঙালি জাতির একটি ঐতিহাসিক দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল সমাবেশে ভাষণ দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পথ রচনা করেছিলেন। এদিন থেকে ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে ভূমিকা রচিত হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের।

পাকিস্তানের চব্বিশ বছরের ইতিহাস ছিলো শোষণ বঞ্চনার ইতিহাস। দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রটি তার বাঙালি বিরুপ প্রতিক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। তবে বাঙালি তার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে গেছে যুদ্ধ পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত। বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল বিজয়ের পরই এটা স্পষ্ট হয়েছে, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তারা নানা কৌশলে কালক্ষেপণ করছিল আর বাঙালির বিরুদ্ধে হামলে পড়ার জন্য সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। তাই সাত মার্চের ভাষণে তিনি বাঙালি জাতিকে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতির নির্দেশনা দিয়েছেন। পৃথিবীর সেরা রাজনৈতিক ভাষণের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণ ছিল ব্যতিক্রমী এবং অনন্য। তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার মনের কথা জনতার উদ্দেশ্যে বলেছেন।

সাত মার্চের ভাষণের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণ ছিল একটি অগ্নিমশাল; যা প্রজ্জ্বলিত করেছিলো মুক্তিযুদ্ধের দাবানল, যার কাছে টিকে থাকতে পারেনি হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণটি বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে এবং সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এ ভাষণের মধ্য দিয়ে সমগ্র বাঙালি জাতিকে মুক্তির পথে দাঁড় করিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এই ভাষণের মধ্য দিয়েই মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক দিকনির্দেশনা প্রস্ফুটিত হয়েছে। সামরিক আইন প্রত্যাহার, সেনাবাহিনীকে ক্যাম্পে ফিরিয়ে নেওয়া, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা এবং যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করার দাবি জানিয়ে কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করার কথা বলেছেন। সাত মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণ মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় মানুষকে উজ্জীবিত করে রেখেছে। এই ভাষণটি ছিল জাতীয় জীবনের অনুপ্রেরণা। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা আজও বহমান। আমাদের জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে এই ভাষণটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পথ হারানোর ক্ষণে কিংবা দেশবিরোধী শত্রুদের ষড়যন্ত্র আর আফালের দিশেহারা মুহূর্তে যেন বেজে ওঠে সেই বজ্রকণ্ঠ। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে বিশ্বের বিখ্যাত ভাষণগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভাষণ গ্যাটিস বার্গের আব্রাহাম লিংকনের ভাষণের সাথে তুলনা করা হয়েছে। ইউনেস্কো এই ভাষণকে ‘মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড’ নামে ঘোষণা করেছেন। ইউনেস্কোর এই ঘোষনায় বাংলাদেশ গর্ববোধ করছে।

এদেশের এখনকার সময়ের তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি, সেই দিন রেসকোর্স ময়দানে দেওয়া ভাষণ শুনেনি। তবু তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভাষণকে অনুভব করে। এই ভাষণকে চেতনায় ধারণ করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ নির্মানের জন্য উজ্জীবিত হয়। বঙ্গবন্ধুর মতো একজন নেতা পেয়ে বাংলাদেশ আনন্দবোধ করছে, স্বাধীনতার প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।

বাংলা ও বাঙালির হৃদয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সূর্যের মত দীপ্তিমান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের প্রতিটি শাখায় তাঁর অসামান্য প্রতিভার স্পর্শে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। তিনি বিশ্ব দরবারে বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশকে করেছেন নিজস্ব আসনে সমৃদ্ধ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেতনায় ঘুছে যাবে প্রেতাত্মাদের হৃদয়ের সকল কূপমণ্ডূকতা। জাগ্রত হবে প্রতিটি প্রজন্মের হৃদয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। এই রাজনীতির মহাকবি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। তাঁর আদর্শ চাইলেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। স্বাধীনতা সূচনা সাত মার্চ উত্তাল ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ।
‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ তৎকালীন নিরস্ত্র বাঙালির মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির জন্য রক্তদানের সাহস যুগিয়েছে এবং পাকিস্তানের শোষণের প্রতিবাদে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলন এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে স্বাধীনতাকে অর্জন করার প্রেরণা যুগিয়েছে। একাত্তর এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় বীর বাঙালির এক অনন্য ইতিহাস। বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর এক বীরত্বগাঁথা গল্প। এই ঐতিহাসিক গল্পের সূচনার ফলেই ধারাবাহিকভাবে একটি আধুনিক উন্নত বাংলাদেশের আবির্ভাব হয়েছে।

লেখক: কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ১৯৫ বার

Share Button

Callender

March 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31