শিরোনামঃ-

» কল দিলেই ত্রাণ নিয়ে হাজির হবে নাট্যকর্মীরা

প্রকাশিত: ০৪. এপ্রিল. ২০২০ | শনিবার

স্টাফ রিপোর্টারঃ

মহামারী করোনা প্রতিরোধে দেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। এমন পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষতো সমস্যায় আছেন সেই সাথে মধ্যবিত্ত অনেকেই আছেন মহা বিপদে।

অনেকেই ভোগছেন খাদ্য সংকটে। এমন অবস্থায় সিলেটে সরকারি, বেসরকারি, ব্যাক্তি ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে চলছে নানাভাবে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ। কিন্তু সকল উদ্যোগ থেকে একদম ব্যতিক্রম উদ্যোগটি নিয়েছেন সিলেটের নাট্যকর্মীরা।

ফোন করলেই তারা মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্য সহায়তা।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের উদ্যোগে এ লক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তির কাছ থাকে সহায়তা সংগ্রহ করে তা নিম্ন আয়ের দিনমজুর ও মধ্যবিত্ত যারা করোনা পরিস্থিতির কারণে খাদ্য সংকটে আছেন তাদের মাঝে বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন।

তবে যাদেরকেই এসব সহায়তা দেয়া হচ্ছে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে। কয়েকটি ফোন নাম্বার দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে প্রচারণা।

একই সাথে নাট্যকর্মীরা নিজে বিভিন্নজনের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্যসামগ্রী সহায়তা।

প্রতিজনকে ৪ কেজি চাল, ১ কেজি আলু, এক কেজি ডালও একটি সাবান দেয়া হচ্ছে। গত ৩১ মার্চ থেকে তারা প্রতিদিনই শত শত মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন।

প্রথমদিকে এক হাজার মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নিয়ে তালিকা অনুযায়ী ঘরে ঘরে নিয়ে এসব খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হলেও এখন ফোন কলের মাধ্যমটিও চালু করা হয়েছে। গত ৩ দিন থেকে এ মাধ্যম চালু করা হয়েছে।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ কর্তৃপক্ষেরে সাথে আলাপ করে জানা গেছে প্রথমে এক হাজার মানুষের মাঝে তা বিতরণের লক্ষ্য থাকলেও এখন আগামী পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত অন্তত ৫ হাজার মানুষকে লক্ষ্য করা হয়েছে। তাদের এ উদ্যোগে নেয়া হচ্ছে আর্থিক এবং খাদ্যসামগ্রী সহায়তাও। কেউ কেউ বিকাশ নাম্বারে কিংবা সরাসরি পাঠাচ্ছেন আর্থিক সহায়তা, আবার কেউ কেউ বিভিন্ন পণ্য সামগ্রীও কিনে দিচ্ছেন।

সর্বশেষ ৩ দিন থেকে মুঠোফোন নাম্বার চালু করার পর থেকে সাহায্যপ্রার্থী প্রায় ২ শতাধিক মানুষ ফোন করেছেন। যাদের মধ্যে অন্তত ১ শতাধিক পরিবারকে ইতোমধ্যে সাহায্য পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

তবে ফোনকলের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবার।

যারা লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে বলতে পারছেন না। কিন্তু তারা বর্তমান সময়ে খুব কষ্টে আছেন।

তবে সাহায্য প্রদানের আগে তিনি কি করেন বা আর কোন সাহায্য পেয়েছেন কি না এমনকি বর্তমান সময়ে সত্যি তিনি সাহায্য পাওয়ার যোগ্য কি না তা ফোন কলের মাধ্যমেই বিবেচনা করা হচ্ছে।

একই সাথে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা বজায় রেখে অতিথির বেশে বাসায় গিয়ে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

সাহায্য চাওয়ার জন্য সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৪টি মুঠোফোন নম্বর চালু রাখা হয়েছে।

করোনা দুর্যোগ সামাল দিতে একদিকে যেমন চলছে সাহায্য পৌঁছে দেয়ার কাজ অন্যদিকে চলছে এসব খাদ্যসামগ্রী কেনা ও প্যাকেটিং এর কাজ।

এসব কাজে প্রতিদিন অন্তত ৪০ থেকে ৫০ জন নাট্যকর্মী অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সাহায্য পৌঁছে দেয়ার কাজে ব্যবহার হচ্ছে মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, সিএনজি কিংবা রিকশা। অপরদিকে নগরীর রিকাবিবাজারস্থ কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে প্যাকেটিং এর কাজ আর দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে সাহায্য পৌঁছে দেয়ার কাজ।

কিন্তু মানুষের সেবায় দিনরাত পরিশ্রম করেও এটাকে ক্ষুদ্র প্রয়াস হিসেবেই বিবেচনা করছেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত। তার মতে মানবকল্যাণে কাজ করাই নাট্যকর্মীদের মূল কাজ।

তারা সবসময় মানুষকে সঠিক পথের নির্দেশনা দেয়ার দায়িত্ব নেন। এবার ঘরে থাকার যুদ্ধে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বটা নিয়েছেন।

রজত কান্তি গুপ্ত সিলেট ভয়েসকে বলেন, মানুষ এখন অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এ লড়াইয়ে ঘরে থেকে করতে হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য সংকটে পড়েছেন দিনমজুর ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ। তাই তাদের সাহায্যার্থে নাট্যকর্মীদের ক্ষুদ্র এ প্রয়াস।

প্রথম দিকে আমরা ১ হাজার মানুষের মাঝে এসব খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করলেও এখন ইতোমধ্যে ১ হাজার অতিক্রম করেছে। তাই আপাতত আগামী পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত আমরা ৫ হাজার মানুষকে লক্ষ্য করেছি। একই সাথে এখন আমরা মুঠোফোন চালু করেছি।

মুঠোফোনে সাহায্য চাওয়া যাবে আবার কেউ চাইলে এসব নাম্বারে যোগাযোগ করে সাহায্য দিতেও পারবেন।

তবে যেহেতু দেশে এখন সংকট দেখা দিয়েছে তাই মানুষের অভাব সম্ভবত আগামী রমজান মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। তাই রমজান মাসকেও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। রমজানেও এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ইচ্ছা আছে বলেও জানান তিনি।

রজত কান্তি গুপ্ত আরো বলেন, আমরা মূলত সিলেট নগরী এবং নগরীর আশপাশ এলাকাগুলকেই মূলত প্রাধান্য দিচ্ছি।

কারণ যেহেতু এখন যাতায়াত সমস্যা আছে তাই দূরের কোথাও হলে পৌঁছে দেয়াটা সমস্যা হয়ে যায়। তবুও দূরের কোথাও থেকে ফোন পেলে তার কোন মানুষ শহর থেকে যাওয়ার থাকলে আমরা তার মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছি।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ থেকে উন্মুক্ত করা মুঠোফোন নাম্বারগুলো হলো- ০১৭১৭-১৯১৫৬৩, ০১৭১১-৪৬৯৭১৫, ০১৬২২-৪১১০৯১, ০১৭১১-৮১৩৯০৫।

এই নম্বরগুলোতে যে কেউ ফোন করে সাহায্য চাইতে পারেন। আবার কেই চাইলে ফোনে যোগাযোগ করে সাহায্য দিতেও পারবেন বলে জানানো হয়েছে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৩৯৬ বার

Share Button

Callender

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930