» সিলেটের এসপি’র উদ্যোগে চেয়ারে বসিয়ে ত্রাণ গ্রহীতাদের ত্রাণ বিতরণ

প্রকাশিত: ০১. এপ্রিল. ২০২০ | বুধবার

সাইফুল আলমঃ

সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বে মহামারি আকার ধারন করছে করোনা ভাইরাস। বাংলাদেশও এ শংকার বাইরে নয়। ইতিমধ্যে ৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছে যার মধ্যে ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যালোচনা অনুযায়ী বাংলাদেশ করোনা ভাইরাস সংক্রমনের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাংলাদেশে যেন করোনা ভাইরাসের সংক্রমন মহামারি আকার ধারন করতে না পারে সেজন্য করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে সর্বস্তরের জনসাধারণকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে যার যার বাড়িতে অবস্থান করতে সরকারী নির্দেশনা রয়েছে। পাশাপাশি জরুরী সেবা ব্যতিত সব সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

সরকারের এরুপ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পুলিশ সহ অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মাঠে সার্বক্ষনিক কাজ করছে।

ফলে মানুষ নিজের সচেতনতাবোধ থেকে কেউবা বাধ্য হয়ে যার যার বাড়িতে অবস্থান করতে হচ্ছে।

এতে সবচেয়ে বিপাকে পরেছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। আশার বানী হল এরকম মানুষদের অনাহারে কিংবা অর্ধাহারে থাকতে না হয় সেজন্য ইতিমধ্যে সরকারী উদ্যোগ থেকে শুরু করে সামাজিক রাজনৈতিক বিভিন্ন সংঘটন এমনকি ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকেই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে যা সত্যিই প্রশংসনীয়।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমন প্রতিরোধে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে যার যার ঘরে রাখতে কাজ করছে পুলিশ।

পুলিশের জন্য এ কাজটি কখনো সুখকর নয়।

কারন করোনা ভাইরাসের মহামারি ঠেকাতে বৃহত্তর স্বার্থে মানুষকে ঘরে রাখতে পুলিশ কাজ করলেও তাতে এক শ্রেনীর মানুষের আয় বন্ধ হয়ে গেছে সেটি আমরা খুব ভাল করেই উপলব্ধি করতে পেরেছি। হয়তো এরকম উপলব্ধি থেকেই বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেকটি ইউনিট সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নিজস্ব উদ্যোগে আর্ত মানবতার সেবায় এগিয়ে আসছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম স্যার জেলা পুলিশের কল্যান তহবিল (যেটি পুলিশ সদস্যদের মাসিক সামন্য চাঁদা দিয়ে গঠিত) থেকে জেলার প্রত্যেকটি থানায় করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারনে যেসব নিম্ন আয়ের মানুষ অতি কষ্টে জীবন যাপন করছে তাদের জন্য কিছু নিত্যপন্য খাদ্য দ্রব্য পৌছে দেবার পরিকল্পনা করেছেন। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) বিকালে জৈন্তাপুর থানা প্রাঙ্গনে ২০০ পরিবার এবং সাঁড়িঘাটস্থ বেদে পল্লীতে ৫০ পরিবারের নিকট খাদ্য দ্রব্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়।

অবাক করার বিষয় হল এসপি স্যারের নিজস্ব পরিকল্পনায় এসব আয়োজনে ছিল ব্যতিক্রম কিছু শিক্ষনীয় বিষয়।

সাধারণত গতানুগতিক ধারা অনুযায়ী ত্রাণ বিতরন কার্যক্রমে সবসময় যেটা দৃশ্যমান হয় সেটি হল সাহায্য প্রত্যাশীরা অনেক দুর থেকে নির্দিষ্ট স্থানে এসে দীর্ঘ্য সময় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়।

আয়োজক এবং অথিতিদের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাহায্য প্রার্থীরা তাদের প্রত্যাশিত সাহায্য পেয়ে থাকে। এটা দোষের কিছু না কারণ দীর্ঘদিন থেকে আমাদের সমাজে এরকম রীতি চলে আসছে।তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এরকম রীতি যে ভাঙ্গাও যায় আজকে তা প্রত্যক্ষ করলাম।

পুলিশ সুপার মহোদয়ের পরিকল্পনায় জৈন্তাপুর থানা প্রাঙ্গনে আজকের আয়োজন ছিল এরকমই ব্যতিক্রম কিছু। যেমন স্যারদের বসার জন্য কোন চেয়ার না থাকলেও সাহায্য প্রার্থী প্রত্যেকের বসার জন্য চেয়ার ছিল। থানা প্রাঙ্গনে আসার সাথে সাথে সাহায্য প্রার্থী প্রত্যেককের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান দিয়ে হাত ধুয়ার ব্যবস্থা করা হয়।তারপর প্রত্যেকের মুখে মাস্ক পরিয়ে দিয়ে পরস্পর সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে চেয়ারে বসতে দেয়া হয়।সাথে সাথে থানার অফিসাররা খাদ্যদ্রব্য ভর্তি ব্যাগ সবার চেয়ারের সামনে পৌছে দেয়।

নির্দিষ্ট সময়ের মিনিট বিশেক আগেই পুলিশ সুপার সহ অন্য স্যাররা এসে পৌঁছেই পুলিশ সুপার স্যার দাঁড়িয়ে হ্যান্ড মাইকে সাহায্য প্রার্থীদের স্বাস্থ্যের খুঁজ খবর নেন।

করোনা ভাইরাস সংক্রমন থেকে প্রত্যেকে নিরাপদ থাকতে মিনিট দুয়েক সচেতনতা মূলক বক্তব্য প্রদান করেন।থানায় আগত সাহায্য প্রার্থী সবাইকে নিজের মেহমান হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন- আজকে এখানে যারা এসেছেন আপনরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে এখানে সাহায্যের জন্য আসছেন।করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দেশে এখন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।যার কারনে আপনি নিজের কিংবা পরিবারের আয় করা অন্য সদস্যদের দৈনিক আয় বন্ধ হয়ে গেছে।

এরকম পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে আপনারা এখানে এসেছেন।স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলে আপনাদের হয়তো অন্যের সাহায়্যের উপর নির্ভর করতে হত না।

কাজেই আমাদের সবার উচিত আপনাদের সম্মান করা” কাউকে না খেয়ে কষ্ট করতে হবে না উল্লেখ করে পুলিশ সুপার স্যার বলেন- সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজি রাজনৈতিক সংগঠন আপনাদের পাশে এগিয়ে এসেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত সবাইকে যার যার ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন সবাই সচেতন হয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় থাকলে করোনা

ভাইরাসের সংক্রমন হতে আমরা নিরাপদে থাকতে পারব ইনশাল্লাহ।পরে সাঁড়ি নদীর পাশে ভাসমান বেদে পল্লীতেও প্রত্যেক তাবুতে বেদে ভাই বোনদের কাছে নিজে খাবার ভর্তি ব্যাগ পৌছে দেন পুলিশ সুপার।

স্যারের এরকম ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজনে উপস্থিত সাধারন লোকজন, সাংবাদিক সহ আমি নিজেও মুগ্ধ হয়েছি।

ব্যতিক্রমী এ আয়োজনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মাহবুবুল আলম,সহকারী পুলিশ সুপার (কানাইঘাট) সার্কেল আব্দুল করিম স্যার গন।ধন্যবাদ অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিক স্যার সহ টিম জৈন্তাপুর কে চমৎকার আয়োজনে আন্তরিকতার জন্য।

সামাজিক রাজনৈতিক বিভিন্ন সংগঠন সহ সমাজে অনেকেই নিজের দায়িত্ববোধ থেকে বিভিন্ন ক্রান্তি কালে অসহায় নিপিড়িত মানুষের পাশে এগিয়ে আসেন তাদের জন্য স্যারের এরকম ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন একটা নতুন বার্তা হতে পারে। সাহায্য যারা নিতে আসেন তারা যেন সম্মানের সহিত সাহায্য নিয়ে এই সমাজ এবং দেশকে নিয়ে গর্ব করে বলতে পারে ‘সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি’।

লেখক- সহকারী মিডিয়া অফিসার, সিলেট জেলা পুলিশ ও ওসি, ডিবি (উত্তর)।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৬৮৫ বার

Share Button

Callender

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930