শিরোনামঃ-

» নিরব গুঞ্জণ, বিকট বিস্ফোরণ : আনিস রহমান

প্রকাশিত: ২৭. আগস্ট. ২০১৮ | সোমবার

সিলেট বাংলা নিউজ বিশেষ রিপোর্টঃ ১৫ই আগস্ট শোক দিবসে জাতির পিতা ও শহীদদের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। ১৫ই আগস্টের মধ্য দিয়ে যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হবার নয় তারপরও শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমাদেরকে চলতে হবে।

গত ৩০ জুলাই ২০১৮ইং তারিখ দেশে ৩ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ছোট খাটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন ও আমজনতা মনে করেন। রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগের বিজয়ী প্রার্থী ও বিশাল সংখ্যক জনতা আগে থেকেই বলে আসছে বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় নিশ্চিত, বাস্তবে তাই হলো।

অপরদিকে সিলেট বিভাগের নির্বাচনী এলাকার আমজনতা শুরু থেকে নিরব বিপ্লব ঘটাবেন বলে যে নিরব গুঞ্জন শুরু করেন তার ফলাফলে ধানের শীষের বিস্ফোরণ ঘটে। কেন এমন নিরব বিপ্লবের আবির্ভাব। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে এত উন্নয়ন এনে দিয়েছে যা এই স্বল্পতে বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে বর্তমান সরকার তথা আওয়ামীলীগ সরকার বার-বার দরকার বলে খোদ সিলেটের অধিকাংশ জনতা মনে করেন। তবে কেন আওয়ামীলীগ প্রার্থীর এমন পরাজয়। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে বেড়িয়ে এসেছে সিলেটের অধিকাংশ জনতা ধানের শীষকে ভোট দেয়নি, তারা ব্যক্তি আরিফুল হক চৌধুরীকে ভোট দিয়েছে। ফলে আওয়ামীলীগ তার সিলেট সিটি কর্পোরেশন মেয়র পদটি হারায়। দলীয় কোন্দল, প্রার্থী অপছন্দ ও প্রথম সারির একজন নেতার উল্টা-পাল্টা বক্তব্য এবং স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মীর অসহযোগিতা, দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা, অধিক আত্ম-অহংকার ইত্যাদির কারণ আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে বলে সিলেটবাসী মনে করেন।

এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে সিলেটবাসী প্রমান করেছে সিলেটে নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন। যে কিনা সততার দিক দিয়ে, ব্যক্তি ও পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক দিক দিয়ে সিলেটবাসীর কাছে প্রিয়। একমাত্র তার নেতৃত্বে-ই পারে সিলেটের আধ্যাত্বিক আসনের আওয়ামীলীগের ঐক্য ও নৌকার বিজয় ধরে রাখতে। বর্তমান আওয়ামীলীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সিলেট ১ আসনে ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে বেছে নিয়েছেন বলে আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে।

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বানকিমুন ড. মোমেনকে আন্ডার সেক্রেটারী হওয়ার অফার দেয়। কিন্তু ড. মোমেন সেই অফারকে অগ্রাহ্য করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে এত বড় অফারকে ফিরিয়ে দিয়ে দেশে চলে আসেন। সিলেটবাসী ও সিলেটের প্রবাসীরা জননেত্রীর এই বিচক্ষণ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এর সুফল সিলেটবাসী জাতীয় নির্বাচনে দেখাবে বলে অনেকে মনে করেন। ড. মোমেন দীর্ঘদিন দেশের বাহিরে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদুত হিসেবে কাজ করেন। তিনি বাংলাদেশকে সবসময় বিশ্ব দরবারে তোলে ধরেছেন। তার বিভিন্ন লেখনী প্রমাণ করে তিনি দেশকে, দেশের মানুষকে কত ভালবাসেন।

ড: মোমেনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

শিক্ষাঃ পি.এইচ.ডি (অর্থনীতি) যুক্তরাষ্ট্র, এম.পি.এ, (হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়) যুক্তরাষ্ট্র, এম.বি.এ যুক্তরাষ্ট্র্র, এম.এ, এলএল.বি, বি.এ (অনার্স) অর্থনীতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

কর্মজীবনের সাফল্যঃ স্বাধীন পরবর্তী বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী দেওয়ান ফরিদগাজীর একান্ত সচিব হিসেবে বাংলাদেশের ওয়েজ আর্নার স্কীম চালু। এটি বঙ্গবন্ধু সরকারের উল্লেখযোগ্য অবদান।

অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের একান্ত সচিব থাকা অবস্থায় অনেক ঝক্কি ঝামেলা মোকাবেলা করে চা বাগানগুলো ব্যক্তি মালিকানায় দেয়া। তা না হলে আজ বাংলার এই জমিনে এক ইঞ্চি মাটিও বাগানের থাকতো না। চা গাছগুলি চুলার ছাই হয়ে বাতাসে বেড়াতো।

১৯৮৮-৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্সিয়াল পদপ্রার্থী মাইকেল ডুকাকিসের উপদেষ্ঠা।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসীদের ‘‘মহাসম্মেলন বাংলাদেশ’’ এর প্রতিষ্ঠাতা এবং বোস্টনে ফোবানার তৃতীয় মহাসম্মেলনে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন।

স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রত্যেক গণতান্তিক দল একযোগে এরশাদ সরকার হটাও আন্দোলন করে যখন আশানুরুপ ফলপাওয়া যাচ্ছে না তখন ড.মোমেন১৯৮৮সালে ইউ.এস কংগ্রেসে এরশাদ সরকারের ওপর এক শুনানীর আয়োজন করেন। ফলে এরশাদ পতনের শুভসূচনা ঘটে।

ড. মোমেনের প্রচেষ্ঠায় ১৯৮৯ সালে ইউ.এস, কংগ্রেসে বন্যার উপর একটি শুনানি হয়। ফলে বাংলাদেশের জন্য ১৫০ মিলিয়ন ডলার সাহায্য বরাদ্ধ হয়।

১৯৮৯ সালে ‘‘ম্যাসাচুচেস্ট সিনেট’’ গভর্ণর ড. মোমেনের বাংলার মানুষ ও মানবতার কাজের জন্য ‘‘এম্বাসেডর অব গুডউইল’’ উপাদি প্রদান করেন।

১৯৯০ সালে বাংলাদেশে ভয়াবহ ঘুর্র্ণিঝড় ও বন্যা হলে আমেরিকার বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠানে ড. মোমেনের বক্তব্যে ৪৫ হাজার মার্কিন ডলার সাহায্য সংগ্রহ করে দেশে প্রেরণ করা হয়।

এছাড়া ‘‘ম্যাসাচুচেস্ট সিনেট’’বাংলাদেশে অধিক সাহায্য পাঠানোর প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং জর্জ বুশ বাংলাদেশে মেরিনদের সাহায্য দাতা হিসেবে পাঠায়।

১৯৯০ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি হলে ড.মোমেন অনেক শ্রম, অনেক চেষ্ঠা, অনেক তদবিরের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ মওকুফ করান।

এছাড়া বিল ক্লিনটন সরকারকে দিয়ে আরও ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ মওকুফ করান। শুধু তাই নয় আরও ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ মওকুফের জন্য তৎকালীন এরশাদ সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রে পত্র প্রেরণের জন্য অনুরোধ করেন।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো ১৯৮২ সালে এই এরশাদ সরকার ড. মোমেনকে জোরপূর্বক অবসর প্রদান করে। এরপরও ড. মোমেন দেশের অসহায় দুর্গত মানুষের কথা চিন্তা করে অনেক মান অপমান সহ্য করে যুক্তরাষ্ট্রের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঋণ মওকুফ ব্যবস্থা করে দেন। যা একজন দেশপ্রেমিকের দ্বারাই সম্ভব।

ড. মোমেন একজন মানবতাবাদী মানবদরদী। তার প্রমাণস্বরুপ বলা যায় যে, তিনি বাংলাদেশের নারী ও শিশু পাচার বন্ধে বিশ^জুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলেন। যার ফলে ১৯৯২ সালে বোম্বে থেকে ২৫টি শিশু এবং পাকিস্তান থেকে অসংখ্য মেয়েকে ফিরিয়ে আনেন। নারী ও শিশু পাচার বন্ধ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের খৎনা, শিশুদের উটের ঝকি বন্ধকরণ সহ বিশ্বে জনমত গড়ে তোলেন। যার প্রেক্ষিতে ড. মোমেনের বলিষ্ট ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৯৯৪ সালে দুটি বিল পাশ করে। ড. মোমেনের এই উদ্যোগ বিশ্ব মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ১৯৯৪ সালে বিল ক্লিনটন সাক্ষাৎ করে অনুপ্রেরণা যোগান। ড. মোমেন বোস্টনের ‘‘উইম্যান এন্ড চিলড্রেন’’ মানবিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। সিনেটর কেনেডির পত্র নিয়ে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করে নারী ও শিশু পাচার বন্ধ ও  ভূক্তভোগীদের পুনর্বাসনের জন্য তহবিল গড়ার আহবান জানান।

ড. মোমেন ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মানব কল্যাণে অবদানের জন্য মার্কিন পত্রিকা ঈগল ট্রাইবুন ‘‘হোম টাউন হিরো’’, মেডিকেল এসোসিয়েশন ‘‘হিউমেনিটারিয়ান এ্যাওয়ার্ড’’ও নিউ ইয়র্কের প্রবাসী সংস্থা ‘‘ফ্রেন্ডস অব দি পুওর’’ উপাধিতে ভূষিত করে।

ড. মোমেন ঢাকার ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্সটিটিউট হাসপাতালে কয়েক কোটি টাকার সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে দেন।

এছাড়া সন্দ্বিপে স্কুল কাম সেন্টার স্থাপনে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার দানে প্রধান ভূমিকা রাখেন। ঢাকার মহিলা পরিষদের আবাসিক, গ্রামীণ ব্যাংকের ফান্ড, ব্র্যাকের বিভিন্ন সেবা কাজে, ঢাকা মেট্রোপলিটান লায়ন্স ক্লাবকে শিক্ষা ও চক্ষু প্রজেক্ট বাস্তবায়ন, গাজীপুরে কিশোরী মেয়েদের সেবা হোম সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাহায্য সহযোগিতা করেন।

দেশের জন্য ড. মোমেনের যে অবদান তা এই স্বল্প পরিসরে লিখে শেষ করা যাবে না। ড. মোমেনকে বিশ্বের অনেক সংস্থা, অনেক ব্যক্তি বিভিন্ন সর্ম্মাননা প্রদান করে। এমনকি উনার কাজে মুগ্ধ হয়ে লেবাননের কবি নোবেল বিজয়ী খলিল জিবরান একটি সুন্দর কবিতা লিখেন। কিন্তু আমরা বাংলাদেশীরা বিশেষ করে সিলেটবাসীরা উনার জন্য কি করতে পেরেছি বা পারব।

তাই সময় হয়েছে, আসুন দলমত নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে দেশের উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করি। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হলে ড: মোমেনের মত একজন মানবদরদী মানুষ খুব প্রয়োজন। ড. মোমেনের কর্মের প্রতি সিলেটবাসী কতটুকু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে আগ্রহী তা দেশবাসী দেখার অপেক্ষায় তাকিয়ে আছেন।

আওয়ামীলীগের বিজয় ও ঐক্য অক্ষুন্ন রাখতে সিলেটবাসী মনে করেন সিলেট এক আসনে নিরব গুঞ্জন বিকট বিস্ফোরণ ঠেকাতে নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন। তা না হলে জাতীয় নির্বাচনে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের গত নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।

লেখকঃ কলামিস্ট

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫৮৬ বার

Share Button

Callender

May 2024
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031