শিরোনামঃ-

» ৬৩ বছর বয়স্ক বাসিরন এবার পিএসসি পরীক্ষা দিলেন

প্রকাশিত: ২০. নভেম্বর. ২০১৬ | রবিবার

এডুকেশন ডেস্ক:: প্রাথমিক সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষা দিলেন ৬৩ বছর বয়সী নারী বাসিরন খাতুন। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া-মহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাঁর পরীক্ষা কেন্দ্র।
মেহেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দুরে গাংনী উপজেলার হোগলবাড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়ায় তাঁর বাড়ি। ৩৫ বছর আগে হারিয়েছেন স্বামী রহিল উদ্দিনকে। এরপর মানুষ করেছেন ১ ছেলে ও ২ মেয়েকে।
এখন একমাত্র ছেলে মহির উদ্দিনের সাথে থাকেন বাসিরন। বড় হয়েছে তাঁর নাতি-নাতনিরাও। তাঁরাও এখন বিভিন্ন কলেজে ও বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন।
লেখাপড়ার প্রচণ্ড আগ্রহ থেকে এই বয়সে এসে আবার শুরু করেন বাসিরন। বাড়ি থেকে প্রতিদিন ১ কিলোমিটার মেঠোপথ হেঁটে বিদ্যালয়ে যান তিনি।
এমনকি স্কুলের টিফিন বিরতিতে সহপাঠীদের সাথে নানারকম খেলাধুলায়ও অংশ নেন বাসিরন। কখনো এক্কা দোক্কা, কখনো কপাল টোক্কা খেলতে পছন্দ করেন তিনি। দাদির বয়সী এই সহপাঠীকে পেয়ে খুশি অন্য শিক্ষার্থীরাও।
রোববার পরীক্ষার প্রথম দিন অনুষ্ঠিত ইংরেজি পরীক্ষা ভালোভাবেই দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাসিরন।
শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাসিরন খাতুন দেশের সবচেয়ে বেশি বয়সের পিএসসি পরীক্ষার্থী। গত ১৬ তারিখ বাসিরনকে নিয়ে নিউজ প্রচারিত হওয়ার পর সারা দেশের মানুষের কাছে বাসিরন এখন পরিচিত মুখ।বাসিরন খাতুন যে কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছেন সে কক্ষের কক্ষ পরিদর্শকের দায়িত্বে ছিলেন সহকারী শিক্ষীকা সাজেদা খাতুন। তিনি জানান, সাধারণ পরীক্ষার্থীদের মতোই পরীক্ষা দিয়েছেন। শান্ত সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষায় আপনমনে তিনি লিখেছেন।

কেন্দ্র সচিব জিয়া মহাম্মদ আহসান মাসুম বলেন, ‘আমার কেন্দ্রে বাসিরন পরীক্ষা দিচ্ছেন এতে আমি খুব আনন্দিত। এ রকম বাসিরন আরো তৈরি হোক।’ তিনি প্রত্যাশা করেন, ‘বাসিরন ভালো পরীক্ষা দিয়ে পাস করে সবার মন জয় করুক।’

কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিক্ষার কোন বয়সসীমা নেই বাসিরন এটাই প্রমাণ করল। বাসিরন একটা উদাহরণ সৃষ্টি করলেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করলেন।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৩ উপজেলায় ১৩ হাজার ৬২৬ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে প্রাথমিক সমাপনীতে ১২ হাজার ৯৫৭ জন এবং ইবতেদায়ি সমাপনীতে ৬৭৯ জন রয়েছে।

এদিকে বাসিরনের নাতি জসিম উদ্দিন বলেন, পরিবারের সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাঁর নানি এই বয়সে পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। নানির আগ্রহ আর নিষ্ঠা দেখে তিনি বিশ্বাস করেন যে এ বছর পরীক্ষায় তিনি অবশ্যই পাস করবেন।
প্রতিবেশী কোরবান আলী পেশায় একজন গৃহশিক্ষক। তাঁর ছোট বোনও এবার পিএসসি পরীক্ষা দিবে। বাসিরন অনেক সময় বই খাতা নিয়ে তাঁর বোনের কাছে পড়তে আসেন জানিয়ে কোরবান আলী বলেন, এ সময় কোন সমস্যা হলে বাসিরন তাঁর সাথে কথা বলে সমাধান করে নেন। বাংলা-অঙ্কসহ অন্যান্য বিষয়গুলো ভালোভাবে আয়ত্ব করতে পারলেও ইংরেজিতে বাসিরনের একটু সমস্যা হয় বলে জানান তিনি।
মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ইউপি) সোহেল আহমেদ বলেন, বাসিরনের লেখাপড়ার খবর পেয়ে তাঁর বাড়িতে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি।
বাসিরনের বয়স তাঁর আগ্রহের কাছে হার মেনেছে। সারা দেশের বয়স্ক মানুষদের জন্য বাসিরন উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন বলে মনে করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, তাঁকে দেখে অনেকেই অনুপ্রাণিত হবে। এই ইউনিয়ন এলাকায় বয়স্ক কেউ লেখাপড়া করতে চাইলে তাঁকে পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৪৪ বার

Share Button

Callender

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930