শিরোনামঃ-

» রামপালে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২৮. আগস্ট. ২০১৬ | রবিবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবন ও পরিবেশের কোনে ক্ষতি হবে না। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য যা কিছু ভালো মনে হবে, আমি সেগুলো করবই।’
‘আপনারা আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমি এমন কোন কাজ আগেও করিনি, ভবিষ্যতেও করব না- যা দেশের এবং দেশের মানুষের সামান্যতম ক্ষতি করে।’
তিনি আরো বলেছেন, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে পৃথিবীর সর্বাধুনিক আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ফলে এতে সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশী ও মানুষের কোন ক্ষতি হবে না। বরং এই প্রকল্প থেকে বছরে ৩০ কোটি টাকা সিএসআর আসবে। যা এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্য ব্যয় হবে।

বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে শনিবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, এখানে যে কয়লা ব্যবহার করা হবে এর গুণগত মান অনেক উন্নত। এসব কয়লা আসবে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে।

রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আন্দোলনের পেছনে অন্য ষড়যন্ত্র আছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়েছেন।

দেশের একটি উন্নয়নবিরোধী মহল রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে বলেও অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই মহলটি দেশে ভীতি সৃষ্টি করছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উন্নয়নশীল বিশ্বে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনেক বেশি, সেই তুলনায় বাংলাদেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ মাত্র ১ শতাংশ। মূল্য ও প্রাপ্যতার দিক থেকে আজকের বিশ্বে কয়লাই মূল জ্বালানি। আমাদের বিদ্যুৎ গ্যাসনির্ভর। কিন্তু গ্যাসসম্পদ সীমিত। সেটি দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে। তাই আমাদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে কয়লার দিকে যেতে হবে।

পরিবেশের ক্ষতি ও সুন্দরবনের সম্ভাব্য নানা বিপর্যয় তুলে ধরে বিভিন্ন সংগঠন রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের বিরোধিতা করছে। বামপন্থীদের নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। সম্প্রতি বিএনপিও আনুষ্ঠানিকভাবে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিবাদ জানায়।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতার কথা জানান। তিনি সুন্দরবনের কাছে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে গণবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী উল্লেখ করে এ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান।

এরপর রামপাল ইস্যুতে বামপন্থীদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সমর্থনের কথা জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ সংবাদ সম্মেলনে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনকে ‘মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি’ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রামপাল সুন্দরবন থেকে ৬৫ কিলোমিটারের বেশি দূরে। এর বায়ুপ্রবাহ সুন্দরবনের উল্টোদিকে। খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়েছেন।

বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনসংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে নির্মিত হচ্ছে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’।

প্রকল্পে সহায়তা করছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ভারতের এনটিপিসি লিমিটেড। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের জন্য ৪৩০ একর ভূমি উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া চলছে প্রাথমিক অবকাঠামোর কাজ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের সঙ্কট দেখা দেওয়ায় মূল্য এবং প্রাপ্যতার দিক থেকে কয়লা এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জ্বালানি। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, জাপান, ভারত তাদের মোট বিদ্যুতের ৪০ থেকে ৯৮ শতাংশ উৎপাদন করে কয়লা দিয়ে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে কয়লা বিদ্যুতের পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশের সামান্য বেশি।
আন্তর্জাতিকভাবে গভীর বনভূমির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ না করার আইন থাকার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের প্রান্ত সীমানা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হতে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।’

এই এলাকার বায়ুপ্রবাহ সুন্দরবনের বিপরীত দিকে- এই তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সামান্য পরিমাণ ক্ষতিকারক বায়বীয় পদার্থও যদি নিঃসরণ হয়, তবে তা সুন্দরবনের দিকে নয়, উল্টোদিকে প্রবাহিত হবে।’

রামপাল নিয়ে খালেদা জিয়া তার পুরো বক্তব্যে ‘উদ্ভট, বানোয়াট এবং অসত্য’ উপাত্ত পরিবেশন করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা ধ্বংস করবে খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ কথা মোটেই সত্য নয়। বরং এটি নির্মিত হলে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মানুষের চুরি করে গাছ কাটার প্রয়োজন আর হবে না। কোম্পানি থেকে বছরে ৩০ কোটি টাকা সিএসআর ফান্ডে জমা হবে। তা দিয়ে এলাকার জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কাজ করা হবে। লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হবে।’

ভারতে বনাঞ্চলের ২৫ কিলোমিটার মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আইনি বাধা রয়েছে খালেদার এই তথ্য বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত বিশাল আয়তনের দেশ। বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশের সঙ্গে তুলনা সঠিক নয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা করেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।

তারপর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪১২ বার

Share Button

Callender

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930