শিরোনামঃ-

» আমার জন্য পাউরুটি আর চকলেট নিয়ে এসো

প্রকাশিত: ২৮. এপ্রিল. ২০১৬ | বৃহস্পতিবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ রাত ১০.০০টা। কনকনে শীত জেঁকে বসেছে চারদিকে।

সাথে রয়েছে ঠান্ডা হিমেল হাওয়া। বাবার জন্য অনেকক্ষণ থেকে অপেক্ষা করতে করতে শেষে মায়ের ফোন থেকে বাবাকে ফোন দিল মেয়েটি-’ বাবা, ও বাবা তুমি কখন আসবে, তোমার জন্য মা আর আমি বসে আছি একসাথে খাবো বলে, আর শোনো আমার জন্য পাউরুটি আর চকলেট নিয়ে এসো”।

ওপাশ থেকে জবাব- হ্যাঁ মামনি এক্ষুণি চলে আসছি, মাকে বলো খাবার রেডী করতে কেমন’।

রাত ১১.০০টা। বাবা এলেন। বিছানায় গিয়ে দেখলেন তার কলিজার টুকরো প্রিয় মা-মনি তাজরিন ঘুমিয়ে পড়েছে।

কপালে চুমু খেয়ে পাউরুটি আর চকলেট রাখলেন মেয়ের বালিশের পাশে। আক্ষেপ করলেন নিজের উপর।

‘আচ্ছা তুমি ওকে আর একটু জাগিয়ে রাখতে পারলেনা? ও অনেকক্ষন জেগে ছিল, তোমার কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছে।

ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁইছুঁই। প্রিয়তমা স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে আবারো রাত্রীকালীন ডিউটি পালনের জন্য বের হয়ে গেলেন।

এই বের হওয়াই শেষ বের হওয়া, এই দেখাই ছিল ঘুমন্ত কন্যার শেষ মুখ দেখা, এই দেখাই ছিল প্রিয়তমা স্ত্রীর সাথে শেষ দেখা।

আর কখনোই ফিরেননি তিনি। স্ত্রী আর কলিজার টুকরো তাজরিনের সাথে সমস্ত বাঁধন ছিন্ন করে না ফেরার দেশে পা বাড়ালেন।

ছোট ফুটফুটে পরীর মতো মেয়ে তাজরিনের সাথে আর কখনো দেখা হবে না তার।

তাজরিনও আর কখনো বলবেনা- আব্বু আমাকে পুতুল কিনে দাও, আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাও।

গত ২৬শে এপ্রিল পুলিশ কনভেনশন হলে বসে সার্জেন্ট কবীর হোসেনের স্ত্রীর সাথে এ নিয়ে কথা বলতে বলতে বারবার চোখ মুছছিলেন নিহত সার্জেন্ট কবীর হোসেনের স্ত্রী উম্মে ফারহানা।

কোলে থাকা অবুঝ শিশু তাজরীনের চোখ থেকেও টপটপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল।

ফারহানা জানালেন- ওর বাবা মারা যাওয়ার প্রথম দিকে আমি যখন কাঁদতাম, তখন আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলতো- কাঁদছো কেন মা, আব্বুতো চলে আসবে, আমার জন্য কতো কি নিয়ে আসবে।

কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছে যে ওর বাবা আর কখনোই ওর জন্য পাউরুটি, চকলেট, নুসিলা, কমলা নিয়ে আসবেনা’ বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন ফারহানা।

উম্মে ফারহানার স্বামীর নাম কবীর হোসেন। তিনি ২০০১ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে সার্জেন্ট হিসেবে যোগ দেন। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত চট্রগ্রামের ফৌজদারহাট ক্যাম্পের ক্যাম্প ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

ঘটনার দিন রাতে গাড়ীতে পেট্রোল বোমা মারা হয়েছে শুনে তিনি ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে যাচ্ছিলেন।

পথিমধ্যে একটি আকস্মিক সড়ক দূর্ঘটনায় তার বহনকৃত পিকআপটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই প্রান হারান।

গতকাল রমনা পুলিশ কনভেনশন হলে ২০১৫ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতি স্মারক প্রদান অনুষ্ঠানে উম্মে ফারহানা তার স্বামীর স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বারবার ডুকরে ডুকরে কাঁদছিলেন।

এখন কীভাবে চলছেন? এমন প্রশ্ন করতেই বললেন- ও মারা যাওয়ার পর প্রতি মাসে কিছু পাই তাই দিয়ে চলি।

তিনি এ সময়ে মাননীয় পুলিশ প্রধানকে উদ্দেশ্য করে বলেন- আইজিপি স্যার যদি আমাকে একটা চাকরীর ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে এ এতিম মেয়েটিকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারতাম।

উম্মে ফারহানার মতো ২০১৫ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত ১২৬ জন পুলিশ সদস্যদের পরিবার, পরিজন নিয়ে গতকাল একটি হৃদয়স্পর্শী শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয় রমনা পুলিশ কনভেনশন হলে।

সবার কান্নার শব্দ আর মর্মন্তুদ বিলাপ যেন রমনার পুলিশ কনভেনশন হলের গন্ডি ছড়িয়ে পড়েছিল ঢাকার আকাশে বাতাসে।

সূত্র: ডিএমপি নিউজ

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪৭৬ বার

Share Button

Callender

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930