শিরোনামঃ-

» ফেসবুকের কল্যাণে ২৫ বছর পর মায়ের সঙ্গে শেরু

প্রকাশিত: ২৫. এপ্রিল. ২০১৬ | সোমবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ এ যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে ২৫ বছর পর জড়িয়ে ধরলেন মা। ভারতের মধ্যপ্রদেশে এমনই এক ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনার শুরু আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে। মধ্যপ্রদেশের খাণ্ডোয়া অঞ্চলের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম শেরু মুনশি খানের। শেরু যখন ছোট, তখনই তার বাবা তার মা-কে ছেড়ে চলে যায়।
দারিদ্র্যের তাড়না সহ্য করতে না পেরে শেরুর মা বাধ্য হন নিজের ৩ সন্তানকে ভিক্ষাবৃত্তিতে পাঠাতে। শেরু তার ২ ভাইয়ের সঙ্গে ট্রেন স্টেশনে ভিক্ষা করা শুরু করে।
এক সন্ধ্যায় ১ বুরহানপুরগামী একটি ট্রেনে ভাই গুড্ডুর সঙ্গে চড়ে বসে শেরু। ক্লান্ত শরীর তখন ঘুমিয়ে পড়েছে। ট্রেন যখন গন্তব্যে পৌঁছায় গুড্ডু তাকে ট্রেনে একা রেখে চলে যায়।  ঘুম ভাঙলে শেরু দেখে পাশের প্ল্যাটফর্মে আর একটি ট্রেন দাড়িয়ে।
তার মনে হয়, ওই ট্রেনেই হয়তো আছে তার ভাই। উঠে পড়ে সেই ট্রেনে। ক্লান্তির চোটে আবার ঘুম। অজানা রেলপথে চলতে চলতে শেরু এসে পৌঁছয় হাওড়া স্টেশনে। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে আর স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শুয়ে কয়েকদিন কেটে যায় শেরুর।
অবশেষে তার চেয়ে বয়সে কিছু বড় এক কিশোরের সাহচর্যে সে ঠাঁই পায় এক সরকারি হোমে, যে হোম তার মতো আরও অনেক গৃহহীন শিশুর আস্তানা। কিছুকাল পরে অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়ার এক পরিবার শেরুকে দত্তক নেয়।
এদিকে শেরুর মা তন্নতন্ন করে খুঁজছেন তাঁর হারানো ছেলেকে। কিছুদিন পরে জানা যায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে গুড্ডু। কিন্তু শেরুকে অনুসন্ধানের কাজ তাঁর অব্যাহত থাকে।
ওদিকে অস্ট্রেলিয়ায় বড় হতে থাকে শেরু। বড় হয়ে ক্যানবেরা কলেজে বিজনেস এ্যান্ড হসপিটালিটি নিয়ে পড়া শুরু করে সে। কিন্ত মায়ের কথা সে ভুলে যায়নি। ‘গুগল আর্থ’-এ সে হাওড়া স্টেশন থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়া রেল লাইনগুলোকে নিবিড়ভাবে অনুসরণ করতে থাকে।
বিভিন্ন স্টেশনের নামগুলো ঘাঁটতে ঘাঁটতে বুরহানপুর নামটা যেন তার মনের তন্ত্রীতে কিঞ্চিৎ নাড়া দিয়ে যায়। তার নিকটবর্তী স্টেশন খাণ্ডোয়া নামটা আরও পরিচিত লাগে তার।
বিশেষত, সেই স্টেশনের নিকটবর্তী একটা ফোয়ারার সঙ্গে কী যেন এক গোপন যোগাযোগ তার রয়েছে বলে তার মনে হয়। ফেসবুকের মাধ্যমে খাণ্ডোয়ানিবাসী এক দল মানুষের সঙ্গে আলাপ জমায় শেরু।
খুঁজতে খুঁজতে শেরু পৌঁছে যায় খাণ্ডোয়ায়। ২৫ বছর আগে তোলা মায়ের সঙ্গে শেরুর একটি ছবি এলাকাবাসীকে দেখিয়ে সে খুঁজে বার করে তার মা-কে। নিজের ১ বোন আর ভাই-এর সঙ্গেও পুনর্মিলন ঘটে যায় তার।
বর্তমানে শেরু বসবাস করছেন অস্ট্রেলিয়ার হোবার্টে। কিন্তু নিজের পরিবারের সঙ্গে ইন্টারনেট মারফৎ নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে সে। সম্প্রতি হারানো মায়ের সঙ্গে পুনর্মিলনের অবিশ্বাস্য কাহিনি নিয়ে শেরু লিখেছে একটি বইও, নাম ‘আ লং ওয়ে হোম’

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫০৪ বার

Share Button

Callender

July 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031