শিরোনামঃ-

» সরকার ঘোষিত লকডাউনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন দেশের ৬১টি সাব রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত নকল নবিসরা

প্রকাশিত: ২১. এপ্রিল. ২০২১ | বুধবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ
আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় নিবন্ধন অধিদফতর পরিচালিত তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১ জেলায় প্রায় ৪৯৭টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অস্থায়ীভাবে ‘কাজ আছে মজুরি আছে ভিত্তিতে’ ১৬ হাজার ২৪৫ জন এক্সট্রা মোহরার বা নকল নবিস কাজ করছেন। যাদের আড়াইশ বছরেও রাজস্ব খাতে নেওয়া হয়নি।
সম্প্রতি আইন বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক জাতীয় সংসদকে বলেছেন, নকল নবিসদের চাকরি স্থায়ীকরণের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন এখনো হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নকল নবিসদের চাকরির বিষয়ে ফাইল রয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের যথাযথ মনোভাবের অভাবে ফাইলের অগ্রগতি নেই বলে জানান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব।
তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আইন মন্ত্রণালয় চাইলে দ্রুত বিষয়টি প্রস্তাব আকারে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাস করিয়ে নিতে পারে। যেহেতু বঙ্গবন্ধুর প্রতিশ্রুতি এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি অতিতে নকল নবিসদের চাকরি স্থায়ীকরণের ষোষণা দিয়েছিলেন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন- করোনার কারণে লম্বা লকডাউনে নকল নবিসদের খোঁজ রাখেনি খোদ আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। যাদের পরিশ্রমের টাকায় প্রতিমাসে রাজস্ব খাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা জমা হচ্ছে। তাদের স্থায়ীকরণের বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না আমলারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নকল নবীসরা প্রতি পৃষ্ঠা দলিলের নকল বালাম থেকে ভলিয়ম লেখে মাত্র ২৪ টাকা পান (বাংলা) আর ইংরেজি প্রতি পৃষ্ঠায় পান ৩৬ টাকা। সব মিলিয়ে মাসে গড়ে যা লেখেন সেটাই তাদের বেতন। আবার দেশের সব অফিসে প্রতিমাসে বেতন বকেয়া থেকে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যারা দীর্ঘদিন এভাবে কাজ করে আসছেন, তাদের বিষয়টি সমাধান করা একান্ত জরুরি।

এখন সমাজে সবাই শিক্ষিত মানুষ। তাদের ভবিষৎ প্রজন্ম যাতে এই পেশায় থাকে। সে লক্ষ্যে সরকারের উচিত দ্রুত নকল নবিসদের চাকরি স্থায়ী করা।

বিষয়টি নিয়ে দেশের বরেণ্য ব্যক্তিরাও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই বরেণ্য ব্যক্তিরা বিশেষ করে সাবেক আইন বিচার সংসদ বিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ

গতকাল দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু ঘোষিত নকল নবিসদের চাকরি স্থায়ীকরণ বিষয়টি অনেক আগেই করা উচিত ছিল। বিষয়টি যদিও খুব সামান্য।
তারপরও কী কারণে হচ্ছে না? তিনি বলেন, এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা শুরু করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় নকল নবিসদের বিষয়টি সমাধান করে আসতে পারিনি। আশা করি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে রয়েছে। তাকে শুধু স্মরণ করে দিলেই দ্রুত সমাধান হতে পারে।
সম্প্রতি সংসদে জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, দেশের জেলা রেজিস্ট্রারও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত নকল নবিসের সংখ্যা ১৬ হাজার ২৪৫ জন। নকল নবিসদের চাকরি রাজস্ব খাতে ন্যস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগ ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠিয়েছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অচিরেই বাস্তবায়িত হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার নকল নবিস অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, নকল নবিসদের চাকরি স্থায়ীকরণ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ও জাতীয় সংসদের ঘোষণা। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এতে নকল নবিসরা হতাশ। আর করোনাকালে তারা কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না। সেটিও সরকারকে দেখতে হবে।পাশাপাশি সরকার যেন নকল নবিসদের চাকরি দ্রুত স্থায়ীকরণ করে সে দাবিও জানান তিনি।
এসোসিয়েশন সিলেট জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট সালেক আহমদ বলেন দলিল সম্পাদনের ইতিহাস অনেক পুরনো হলেও সম্পত্তি বেচাকেনায় প্রতারণা বন্ধ এবং ভূমি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে ১৭৮১ সালে উপমহাদেশে প্রথম রেজিস্ট্রি আইন প্রবর্তিত হয়। তখন থেকেই দলিল রেজিস্ট্রি এবং দলিলের নকল লেখার জন্য সৃষ্টি হয় নকল নবিস পদ। কিন্তু পদ সৃষ্টি হলেও প্রায় ২৩৯ বছর ধরে মাস্টার রোলে কাজ করতে হচ্ছে নকল নবিসদের। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করেও তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। প্রশাসনিক জটিলতাসহ নানা কারণে হয়নি চাকরি স্থায়ীকরণ। অথচ ১৯৫৮ সালে কালেক্টরেট, জজ কোর্ট, হাইকোর্ট ও সরকারের বিভিন্ন দফতরে কর্মরত নকলনবিসদের চাকরি স্থায়ী করে নেয়া হয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধন অধিদফতরের অধীন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সরকারের অন্যতম রাজস্ব আয়ের উৎস। জমির দলিল বাবদ বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় আসে এই সাব-রেজিস্ট্রি অফিস থেকে। এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা এই অফিসের অস্থায়ী জনশক্তি নকল নবিসদের।
নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি চাকরির নিয়োগ বিধির মতোই শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ সব যোগ্যতা ও নিয়মের ভিত্তিতে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে এক্সট্রা মোহরার নিয়োগ করা হয়। এসব অফিসে স্থায়ী কর্মচারী মোহরারদের প্রধান কাজ হলো রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের নকল ভলিউমে লেখা। দলিল রেজিস্ট্রির ১৫ দিনের মধ্যে নকল লেখার কাজ শেষ না হলে সহযোগী হিসেবে ভলিউমে নকল লেখা এক্সট্রা মোহরারদের কাজ।
অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন,সিলেট জেলায় ১৩টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে। এতে প্রায় ৫০০ জন নকল নবিস কাজ করেন। এবং সিলেট বিভাগে রেজিস্ট্রি অফিসে আছে ৪০ টি এবং নকল নবিশ আছেন প্রায় ২০০০ হাজার। এমনিতেই আমরা প্রতি মাসের বেতন নিয়মিত পাই না।এখন তো অফিসই বন্ধ। নকল নবিসদের পরিবার খুব খারাপ অবস্থায় সময় পার করছে। এই মুহূর্তে কমপক্ষে নকল নবিসরা যাতে সংসার চালাতে পারেন সরকারের কাছে এই সহযোগিতা আমরা চাই।
সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম আল-দ্বীন ও অর্থ সম্পাদক জুনেদ আহমদ অভিযোগ করেন, এতোদিনে ও নকল নবিসদের চাকরি স্থায়ীকরণ হয় না এর মধ্যে আবার অতিরিক্ত নকল নবিস নিয়োগ কিন্তু থেমে নেই। টাকার বিনিময়ে এক শ্রেণীর কর্মকর্তা এই নিয়োগ দিয়েছেন।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ২৫৯ বার

Share Button

Callender

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930