শিরোনামঃ-

» আবুল কালাম আজাদ এর ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বক্তারা

প্রকাশিত: ০৩. মার্চ. ২০২১ | বুধবার

শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে অগ্রসৈনিক ছিলেন আবুল কালাম আজাদ

স্টাফ রিপোর্টারঃ
সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা শাখার সাবেক সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন এর সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, এনডিএফ সিলেট জেলা শাখার প্রয়াত নেতা এবং সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা দালাল পুঁজি বিরোধী আপোষহীন শ্রমিকনেতা আবুল কালাম আজাদ এর ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির যৌথ উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।

বুধবার (৩ মার্চ) সকাল ১০টায় প্রয়াত নেতার সমাধিস্থলে (মানিকপীর কবরস্থান) বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন এর বিভাগীয় কমিটি, সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন ও এর বিভিন্ন শাখা কমিটি, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ জেলার হোটেল শ্রমিক নেতৃবৃন্দ, এনডিএফ সিলেট জেলার নেতৃবৃন্দ, জাতীয় ছাত্রদল শাবিপ্রবি শাখার নেতৃবৃন্দ, পরিবারসহ ১৫টি সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন শেষে উপস্থিত শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা প্রয়াত নেতার অসমাপ্ত কাজ সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা দালালপুঁজি বিরোধী শ্রমিক কৃষক খেটে খাওয়া মানুষের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সংগ্রামকে বেগবান করার লক্ষ্যে শপথ গ্রহণ করেন। সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন এর সভাপতি ও বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির আহবায়ক শ্রমিকনেতা মো: ছাদেক মিয়ার নেতৃত্বে উপস্থিত নেতাকর্মীরা শপথ পাঠ করেন।

প্রয়াত নেতা আবুল কালাম আজাদ এর স্মরণে বিকেল ৪টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন এর সভাপতি ও বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির আহবায়ক শ্রমিকনেতা মো: ছাদেক মিয়া। আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট কুমার চন্দ্র রায়, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রজত বিশ্বাস, সিলেট জেলা শাখার সাবেক সভাপতি এডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহিদুল ইসলাম ও সিলেট জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুরুজ আলী, সুনামগঞ্জ জেলা হোটেল রেস্টুরেন্ট মিষ্টি বেকারী শ্রমিক শ্রমিক ইউনিয়ন এর সভাপতি মো: লিলু মিয়া। সভার শুরুতে আবুল কালাম আজাদ এর উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় ছাত্রদল সিলেট জেলা শাখার অন্যতম নেতা শুভ আজাদ শান্ত।

আলোচকবৃন্দ বলেন, ১৯৬৮ সালে জন্ম নেওয়া আবুল কালাম আজাদ একজন মেধাবী ছাত্র হওয়ার সত্ত্বেও পারিবারিক আর্থিক অভাবের কারণে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার পর একজন হোটেল শ্রমিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সে সময় সিলেট জেলায় হোটেল শ্রমিকদের উপর মালিকদের শোষণ-লুণ্ঠন, নিপীড়ন-নির্যাতন, অবৈধ জরিমানা, বিনাবেতনে চাকরিচ্যুতি ইত্যাদি ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। হোটেলে কর্মরত অবস্থায় তিনি হোটেল শ্রমিকদের সীমাহীন পরিশ্রম, চাকরির অনিশ্চয়তা, স্বল্প মজুরি, শোষণ-নিপীড়নসহ বিভিন্ন সমস্যা খুব নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করেন।হোটেল শ্রমিকদের সীমাহীন পরিশ্রম, চাকরির অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা, স্বল্প মজুরি এবং শোষণ-নিপীড়ন-বঞ্চনা তাঁর মনে নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। তিনি হোটেল শ্রমিকদের সীমাহীন কষ্ট ও সমস্যা দূর করার জন্য হোটেল শ্রমিকদের সংগঠিত করে একটি ইউনিয়ন করার প্রয়োজনবোধ করেন। হোটেল শ্রমিকদের সমস্যা-সংকট সমাধানকল্পে তিনি শ্রমিক-কৃষক-জনগণের অধিকার আদায়ে লড়াইকারী সংগঠন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এবং বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা শাখার সংস্পর্শে আসেন। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা শাখার কয়েকজন নেতাকর্মীর সহযোগিতায় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এর শরিক সংগঠন হিসেবে সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন (রেজি: নং চট্র: ১৯৩৩) গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সিলেট জেলার পাশাপাশি মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ জেলা তথা সিলেট বিভাগের হোটেল সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের সংগঠিত করে হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। জাতীয় পর্যায়ে মহান মে দিবসে হোটেল শ্রমিকদের ছুটির দাবিতে আন্দোলন ও হোটেল সেক্টরে নিম্নতম মজুরি ঘোষণার দাবিতে সারাদেশের সঙ্গে সিলেট বিভাগেও এই সংগ্রামকে বেগবান করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করেন। এসব ভূমিকায় তিনি হোটেল শ্রমিকদের প্রাণপ্রিয় নেতায় পরিণত হন এবং দেশের প্রায় ৪৫টি নিবন্ধনকৃত হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন নিয়ে ‘বাংলাদশে হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন (রেজি নং: বি-২০৩৭)’ এর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি আমৃত্যু হোটেল শ্রমিকদের আইনি আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্বের পাশাপাশি বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গণআন্দোলনসহ এদেশের শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের শোষণ মুক্তির সংগ্রামে আপোসহীন ভূমিকা পালন করেন। অতিরিক্ত পরিশ্রম ও অনাহারে-অর্ধাহারে থাকার কারণে তাঁর খাদ্যনালী ক্যন্সারে আক্রান্ত হয়। প্রচলিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় একজন শ্রমিকের চিকিৎসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে চরম অবহেলা ও সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় না হওয়া ইত্যাদি কারণে সহযোদ্ধাদের অকৃত্রিম প্রচেষ্টা সত্বেও হোটেল শ্রমিকদের আন্তঃপ্রাণ আবুল কালাম আজাদ ২০১৭ সালের ৩ মার্চ মাত্র ৪৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শ্রমিক সেক্টর হচ্ছে হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক সেক্টর। গ্রাম্য জোতদার মহাজনের শোষণে জমি-জমা হারিয়ে জীবিকার তাগিদে আমরা শহরে এসে হোটেল সেক্টরে অমানুষিক পরিশ্রম করে দুঃখ কষ্টের জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হচ্ছি। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যে শ্রমিকরা হোটেল রেস্টুরেন্টে সুন্দর ও মজাদার রকমারি খাবার তৈরি ও পরিবেশন করে তাদের পরিবারেই সবদিন দুবেলা ডাল-ভাত জুটে না। চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবনসহ প্রত্যেকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে জনজীবন আজকে দূর্বিসহ হয়ে পড়ছে। করোনাকালীন সময়ে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছি। আমাদের জীবন ও জীবিকার প্রশ্নটি কখনও ভোট শিকারী প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গুরুত্ব পায়নি। ভোট আসলেই নানারকম মার্কা আর প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নিয়ে তারা আমাদের কাছে আসেন, ভোট শেষ হলেই তারা আমাদের চিনতে পারেন না। তাই সরকারের পরিবর্তন ঘটলেও আমাদের জীবন মানের কোন পরিবর্তন হয় না, ভোট শিকারীরা আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হলেও আমাদের অবস্থা দিন দিন শুধু খারাপই হয়। এর কারণ প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা ধারাবাহিকভাবে ধনিক-বনিক, শোষক-শাসক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে চলে। বাংলাদেশ একটি নয়াউপনিবেশিক-আধাসামন্তবাদী দেশ। এদেশের শ্রমিক-কৃষক-জনগণের ঘাড়ের উপর চেপে বসে আছে সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ-আমলা মুৎসুদ্দি পুজিবাদের নির্মম শোষণ ও শাসন। বিদ্যমান শোষণমূলক বিশ^ব্যবস্থায় শ্রমিক-কৃষক-জনগণের উপার্জিত অর্থ ও সম্পদ জনগণের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা) পূরণের লক্ষ্যে ব্যয় না হয়ে মুষ্টিমেয় একচেটিয়া পুঁজিপতির হাতে কেন্দ্রীভুত হচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদ ও তার দালালদের শোষণ-লুন্ঠন এবং দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি দেশ ও সমাজকে অন্ধকার যুগের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাজনীতি বিমুখ করার কাজে এরা নিয়োজিত। যুব সমাজের শক্তিকে হীনবল করতে মাদক, অস্ত্রবাজী, নারী নিগ্রহ এ সকল পথ বেছে নিয়েছে। নারী ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন, নারী ও শিশু পাচার, পর্ণোগ্রাফী ও কালোবাজারি, মাদক ব্যবসা ইত্যাদি গণবিরোধী অসামাজিক কার্যকলাপ বাংলাদেশেও ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে আজ ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। এমনি এক পরিস্থিতিতে সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ আমলা দালালপুঁজি বিরোধী শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনগণের অধিকার আদায় আন্দোলনের একনিষ্ট কর্মি ও নেতা আবুল কালাম আজাদ এর ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছি। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা আবুল কালাম আজাদ এদেশ থেকে সাম্রাজ্যবাদ সামন্তবাদ ও আমলা দালালপুঁজির শাসন-শোষণকে উচ্ছেদ করে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমৃত্যু সংগ্রাম করে গিয়েছেন। এমনকি অসুস্থ অবস্থায়ও সাংগঠনিক কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণ করে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। শ্রমিকনেতা আবুল কালাম আজাদ ভাইয়ের এই মতাদর্শ ও আজীবন লালিত স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব।

বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন সিলেট বিভাগীয় কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক ও মো: আনছার আলীর পরিচালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মো: আনছার আলী, মৌলভীবাজার জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক মো: শাহীন আলম, দপ্তর সম্পাদক ও আবুল কালাম আজাদ এর বড় ছেলে বদরুল আজাদ, সিলেট জেলা স’মিল শ্রমিক ইউনিয়ন এর সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন, সিলেট জেলা প্রেস শ্রমিক ইউনিয়ন এর সভাপতি একে আজাদ সরকার, জাতীয় ছাত্রদল শাবিপ্রবি শাখার সভাপতি দীনবন্ধু দাস সৌরভ প্রমুখ।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ২৬৯ বার

Share Button

Callender

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930