শিরোনামঃ-

» আনুষ্ঠানিকতা শুরু, রোববার পবিত্র হজ

প্রকাশিত: ১০. সেপ্টেম্বর. ২০১৬ | শনিবার

সিলেট বাংলা নিউজঃ সারা বিশ্বের প্রায় ২০ লাখ মুসল্লি পবিত্র হজের অন্যতম ফরজ আদায়ের জন্য এখন সৌদি আরবের মিনায় অবস্থান করছেন। মিনা থেকে তারা যাবেন আরাফাত ময়দানে। রোববার সেখানে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।

ইসলামের ৫ স্তম্ভের অন্যতম পবিত্র হজ। রোববার পবিত্র আরাফাতের ময়দানেই শুরু হচ্ছে মুসলমানদের সব চেয়ে বড় এ ধর্মীয় জমায়েত। হজের অন্যতম ফরজ আদায়ের জন্য আজ আরবী হিজরী বর্ষের ৮ জিলহজ হাজিরা পবিত্র নগরী মিনায় সমবেত হয়েছেন।

শুক্রবার পবিত্র মক্কার মসজিদুল হারামে জুমার নামাজ আদায়ের পর থেকে হজের অংশ হিসেবে তারা তাঁবুর নগরী মিনায় পৌঁছেছেন। সেখানে নামাজ আদায়সহ ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল আছেন তারা।

প্রতি বছর হজের সময় মুসল্লিদের অস্থায়ী আবাস হিসেবে মিনায় বসানো হয় লাখ লাখ তাঁবু। এবারও এক লাখ ৬ হাজার তাবুর পনিচে প্রায় ১শ’ ৪৪ ঘণ্টা অবস্থান করবেন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হজযাত্রীরা। সেই সব লাল পাথরের পাহাড় ঘেসা চৌচালা তাঁবুর নিচে মুসল্লিদের লাবাবায়েক ধ্বনিতে মুখরিত পবিত্র মিনা নগরী।

মিনার এ পাহাড়ের উপত্যক্যায় মদিনা থেকে এসে মহানবীর হাতে শপথ পড়েন একদল মুসল্লি। যারা পরে ফিরে গিয়ে মদিনায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর হিজরতের পরিবেশ তৈরি করেন।

অন্য দেশের হাজিদের মতো বাংলাদেশের ১ লাখ ২ হাজার হাজিকে নিয়ে মিনায় অবস্থান করছেন বাংলাদেশের ধর্মমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য। মিনার ৭টি জোনের মধ্যে বাংলাদেশের হাজিরা মূলত আছেন ২, ৫ এবং ৬ নম্বর জোনে।

রোববার ৯ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য গাড়িতে বা ট্রেনে মিনা থেকে হাজিরা রওনা হবেন পবিত্র আরাফাত ময়দানের উদ্দেশে। তবে ১৪ কিলোমিটার দূরত্বের এই পথ বেশির ভাগ হাজি পাড়ি দেবেন পায়ে হেঁটেই।

আরাফাতের পবিত্র ময়দানে বিদায় হজে ভাষণ দিয়েছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম। রোববার সারাদিন আরাফাতে অবস্থান করে হাজিরা আরাফাত থেকে রাতে মুজদালিফায় অবস্থান করবেন। সোমবার ভোরে শয়তানকে পাথর মারার উদ্দেশ্যে তারা আবার আসবেন ত্যাগ আর তাবুর শহর মিনায়।

পবিত্র হজ উপলক্ষে মক্কা, মদিনা, মিনা, আরাফাত ময়দান, মুজদালিফা ও এর আশে পাশের এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদী সরকার। মোতায়েন আছে এক লাখের বেশী নিরাপত্তাকর্মী।

বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ড. জয়নব মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, হজের আহকামে ৮ জিলহজ সূর্যোদয়ের আগে থেকে ৯ জিলহজ সূর্যোদয় পর্যন্ত মিনায় অবস্থানের শর্ত। যেহেতু ৮ জিলহজ সূর্যোদয়ের আগে থেকে মিনায় অবস্থানের নিয়ম। তাই সতর্কতাবশত আগের রাতেই মিনায় চলে যান হজ যাত্রীরা।

ড. জয়নব আরও বলেন, আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের দিনটিকে প্রচলতি অর্থে মূল হজের দিন মনে করা হয়। আরাফাত ময়দানে অবস্থানের দিন হচ্ছে ৯ জিলহজ।

বাংলাদেশে ৮ জিলহজের তারিখটি সৌদি আরবে ৯ জিলহজ। সেই হিসাবে কাল রোববার হজ পালিত হবে। এদিন আরাফাত ময়দানে যাবেন হজযাত্রীরা। ‘লাব্বাইকা, আল্লাহুমা লাব্বাইক’ এই ধ্বনিতে আরাফাতের খোলা আকাশ মুখরিত করবেন তারা।

নিয়মানুযায়ী আজ (বাংলাদেশ সময়) ফজর থেকে কাল ফজরের নামাজ পর্যন্ত অবস্থান শেষে হাজীরা আরাফাতের ময়দানে রওনা হবেন। আরাফাতে গিয়ে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। সেখানে হজের খুতবা শুনবেন। জোহর এবং আসরের নামাজ একত্রে আদায় করবেন। আরাফাতে সারা দিন কাটাবেন খোলা আকাশের নিচে।

আরাফাত থেকে মুজদালিফায় যাবেন। সেখানে গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ একত্রে আদায় করবেন। মুজদালেফাতেও খোলা আকাশের নিচে রাত যাপন করবেন। সেখান থেকে জামারায় শয়তানকে মারার জন্য পাথর (কংকর) সংগ্রহ করে নেবেন। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে হাজীরা আবার মিনায় ফিরবেন। মিনায় হাজীদের ৪টি কাজ থাকে।

তা হচ্ছে, পশু কোরবানি করা, মাথা মুণ্ডন, শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ ও ইহরাম খোলা। এই আহকামের অংশ হিসেবে হাজীরা মিনায় গিয়ে ১০ জিলহজে কোরবানি করবেন এবং মাথা মুণ্ডন বা চুল ছাঁটাবেন।

এছাড়া বাকি দুটি কাজও করবেন। এরপর মক্কায় পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ এবং সা’ঈ করবেন। এই তাওয়াফের নাম বিদায়ী তওয়াফ। এর আগে সৌদি আরব গিয়েই হজযাত্রীরা প্রথমে একবার অবশ্যই পবিত্র কাবা ঘর তওয়াফ করেন। বিদায়ী তওয়াফ সেরে আবার মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ সেখানে অবস্থান করে প্রতিদিন তিন শয়তানকে পাথর মারবেন।

এভাবে সম্পন্ন হবে হজের গোটা আনুষ্ঠানিকতা। প্রত্যেক হজযাত্রীকে নিজ নিজ মোয়াল্লেম কার্যালয় থেকে গাইডের মাধ্যমে মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতে গমন, অবস্থান, শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ, কোরবানির নিয়মকানুন সবকিছু আগেভাগেই জানিয়ে দেয়া হয়।
ড. জয়নব বলেন, যারা হজ করতে পারেননি, তাদের জন্যও ইসলামে হজের দিনের বিশেষ সুখবর আছে। তা হচ্ছে, হাজীরা ছাড়া সারা বিশ্বের মানুষ হজের দিন বা ৯ জিলহজ রোজা রাখতে পারেন। এর মাধ্যমে সারা বছর রোজা রাখার সমান সওয়াব পাওয়া যায়।

মিনার উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে গাইড জানিয়ে দেন, মক্কায় বাসাতেই ওজু ও গোসল সেরে সেলাইবিহীন দু’টুকরা কাপড় পরে হজের নিয়ত করতে হবে। ইহরামের কাপড় পরতে হবে। অতিরিক্ত এক সেট সঙ্গে নিতে হবে।

এছাড়া এক সেট সাধারণ পোশাক (শার্ট-প্যান্ট বা পায়জামা-পাঞ্জাবি), পেস্ট, টুথব্রাশ, সাবান, মোবাইল ফোন, চার্জার, মুজদালিফায় রাতে অবস্থানের জন্য চাদর, হাওয়াই বালিশ ব্যাগে রাখা বাঞ্ছনীয়। তবে ব্যাগটি যেন হালকা হয় সেদিকে খেয়াল রাখা ভালো। কারণ নিজের বোঝা নিজেকেই বহন করতে হবে।

এদিকে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এ বছর প্রায় হাজার খানেক নতুন পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা লাগানো হয়েছে পবিত্র হারাম শরীফ এবং জামারাতে। এসব ক্যামেরা অন্যান্য বছরের চেয়ে গভীর ভাবে বিভিন্ন স্থান পর্যবেক্ষণ করবে। এ বছর প্রথম বারের মতো হজযাত্রীদের বিশেষ ধরনের ইলেক্ট্রনিক ব্রেসলেট প্রদান করা হয়েছে যা তাদের অবস্থান ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে।
পানি নিরোধক এবং জিপিএস-এর সাথে সংযুক্ত এই ব্রেসলেট হজযাত্রীদের সালাতের সময় এবং বিভিন্ন পালনাদি সম্পর্কে তাদের বিভিন্ন ভাষায় নির্দেশনা প্রদান করবে। গত বছর মিনায় এক দুর্ঘটনায় পদপিষ্ট হয়ে ৭৫০ জন হজযাত্রীর করুণ মৃত্যু হয়।
তবে বিভিন্ন বার্তা সংস্থার মতে মিনায় নিহত হজযাত্রীদের সংখ্যা ২ হাজারের বেশি। নিহতের মধ্যে ইরানি হজযাত্রীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পর্যায়ে সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হবার পর এবার ইরানের কোন হজযাত্রী হজ পালনের সুযোগ পাননি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কয়েক বছর ধরে হাজীদের সুবিধার জন্য সিটি চেকিং শুরু করেছে। অর্থাৎ ফ্লাইট ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা আগে মক্কায় এবং ফ্লাইট ছাড়ার ৩৬ ঘণ্টা আগে মদিনায় যাত্রীর লাগেজ বিমান গ্রহণ করবে। বিমানবন্দর থেকে বিমানের লাগেজ গ্রহণ করা হবে না। একজন যাত্রী বিনা ভাড়ায় সর্বোচ্চ ৪৬ কেজি মালামাল বহন করতে পারবেন।
একটি লাগেজের ওজন ৩০ কেজির বেশি হবে না। তাছাড়া, সউদী আরবের নিয়ম অনুযায়ী হাজীদের নিজ নিজ ফ্লাইটের ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা আগে জেদ্দা হজ টার্মিনালে মোয়াল্লেম পৌঁছে দেন।
বিমানবন্দরে এই ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা বসে থাকায় অনেকের ধৈর্যচ্যুতি হয়। এই তথ্যটি অনেক হজযাত্রীর অজানা। ফিরতি ফ্লাইট শেষে হাজিরা নানা ভোগান্তির অভিযোগ করেন তথ্যটি না জানার কারণে। উল্লেখ্য, আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫১১ বার

Share Button

Callender

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930