শিরোনামঃ-

» আগাম সংকেত আসছে সিলেটে বজ্রপাত সংক্রান্ত

প্রকাশিত: ০৯. মে. ২০১৮ | বুধবার

সিলেট বাংলা নিউজ ডেস্কঃ কোন এলাকায় বিজলি চমকাবে এবং বজ্রপাত হবে তার আগাম সংকেত দেওয়া শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ঝড়-বৃষ্টির সময় কোন জেলায় বজ্রপাত হতে পারে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবে আবহাওয়া অফিস।

এমনকি ১০ মিনিট থেকে আধাঘণ্টা আগে বজ্রপাতের সংকেত দেওয়া যাবে। এতে করে ওই এলাকার মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার সময় পাবে। ফলে বজ্রপাতে প্রাণহানি কমে আসবে দেশে।

বজ্রপাতের আগাম সংকেত জানতে এরই মধ্যে দেশের ৮টি স্থানে বসানো হয়েছে লাইটেনিং ডিটেকটিভ সেন্সর। স্থানগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, নওগাঁর বদলগাছি, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনার কয়রা এবং পটুয়াখালী।

আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানান, ৮টি সেন্সরে পুরো দেশের চিত্র উঠে আসবে। একেকটি সেন্সরের রেঞ্জ ২৫০ কিলোমিটার।

প্রতিটি সেন্সর থেকে এক হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত মনিটরিং করা যাবে। এক মৌসুমে (এপ্রিল থেকে জুন) দেশে কতবার বিদ্যুৎ চমকায় এবং বজ্রপাত হয় সেটিও সংরক্ষণ করা হবে। তবে এখন সব চলছে পরীক্ষামূলকভাবে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হবে।

আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, রেডিও, টেলিভিশন, ওয়েবসাইটে এখনো তাঁরা বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেন। তবে সেটি রাডার থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেওয়া হয়, যাতে বজ্রপাতের চিত্র সুস্পষ্টভাবে আসে না।

এ ছাড়া এখন বজ্রপাতের তথ্য দেওয়া হয় জেলাওয়ারি। কিন্তু ডিটেকটিভ সেন্সরের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট এলাকার নামও বলা যাবে।

কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, আগে বজ্রপাতের প্রতি নজর ছিল কম। গুরুত্ব অনুধাবন করে এখন এর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষ যদি সচেতন না হয়, সংকেত পাওয়ার পরও যদি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা না ছাড়ে তাহলে কোনো উদ্যোগই কাজে আসবে না।

আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, ‘বাংলাদেশে ১৩টি নদীবন্দরে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্পের আওতায় বজ্রপাতের সংকেত ও সংখ্যা নিরূপণের যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৬২ কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আটটি ডিকেটটিভ সেন্সরের যন্ত্রপাতি কেনায় খরচ হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা।

প্রকল্প পরিচালক মজিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এখন পরীক্ষামূলকভাবে ডিটেকটিভ সেন্সর ব্যবহার করছি। কোথায় কোথায় ত্রুটি বিচ্যুতি হচ্ছে সেটি দেখা হচ্ছে।

আশা করছি এ বছরের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি চালু হবে। তখন বজ্রপাতের সংকেত আগাম দেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া বজ্রপাতের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকানোর তথ্যও থাকবে।’

কর্মকর্তারা জানান, চারভাবে বজ্রপাত হয়ে থাকে। প্রথমত, মেঘমালা থেকে ভূপৃষ্ঠে। দ্বিতীয়ত, মেঘমালার সঙ্গে মেঘমালা। তৃতীয়ত, একই মেঘের মধ্যে। চতুর্থত, মেঘমালা থেকে বায়ুমণ্ডলে।

এর মধ্যে মেঘমালা থেকে ভূপৃষ্ঠে যে বজ্রপাত হয় সেটি সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর। তাতে মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আবহাওয়া কর্মকর্তা বজলুর রশীদ বলেন, অনেক বজ্রপাত হয় ভূপৃষ্ঠের ওপর, যেটা ক্ষতিকর নয়। যেটি ভূপৃষ্ঠে পড়ে সেটি ক্ষতিকর। মানুষের মৃত্যু হয়। নতুন ডিটেকটিভ সেন্সরের মাধ্যমে জানা যাবে এক দিনে কতবার বিজলি চমকায় এবং কতবার বজ্রপাত হয়।

ঢাকা স্টেশনের পরীক্ষামূলক তথ্যে দেখা গেছে, গতকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বজ্রপাত হয়েছে ১২ হাজার ২৯০ বার। মজিদুল ইসলাম বলেন, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশে আড়াই হাজার বজ্রপাত হয়। তবে এসব তথ্যের এখন কোনো মূল্য নেই। কম-বেশি হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক বছর আগেও বজ্রপাতে বছরে ৪০০ থেকে ৪৫০ জন মানুষ মারা যেত। প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি মানুষের সচেতনতা বাড়ায় সেখানে মৃতের সংখ্যা কমে ২০-এ দাঁড়িয়েছে। সিঙ্গাপুর, জাপান, কানাডা এমনকি পাশের দেশ ভারতেও ডিটেকটিভ সেন্সর বসিয়ে বজ্রপাতের আগাম সংকেত মিলছে। উল্টোদিকে বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে প্রাণিহানির সংখ্যা বাড়ছে। এতে সরকার ২০১৬ সালে একে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এ বছর পহেলা বৈশাখ থেকে এখন পর্যন্ত বজ্রপাতে অর্ধশতাধিক লোক মারা গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় সুনামগঞ্জে। হাওরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে বজ্রপাতে।

বজ্রপাতের কারণ হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম , বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে বজ্রপাত বাড়ছে। আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ দেখা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বজ্রপাত হচ্ছে এটা বলার সময় এখনো আসেনি। তিনি বলেন, দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। ঘর ছেড়ে বাইরে আসার প্রবণতাও বাড়ছে। মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশি কর্মব্যস্ত। আগে অনেক কৃষিজমি খালি পড়ে থাকত। এখন সেসব জমি ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষ কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যাচ্ছে। তা ছাড়া আগে দেশের প্রায় সব স্থানে বড় বড় গাছ ছিল। সেসব গাছও কমে গেছে শিল্পায়নের কারণে। জলাভূমির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এসব কারণে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।

বজ্রপাতে মৃত্যের সংখ্যা কমাতে সারা দেশে তালগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। কিন্তু সে উদ্যোগেও গতি নেই। কর্মকর্তারা জানান, বিপুলসংখ্যক গাছ পেতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা ২৮ লাখ বীজ লাগিয়েছি। তালগাছ হতে কিছুটা সময় লাগে। আমরা গাছ লাগানোর যে উদ্যোগ নিয়েছি, সেটি সফল হবে। তবে কিছুটা সময় লাগবে।’

বজ্রপাত বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া, বাতাসে সিসার পরিমাণ বাড়া, জনজীবনে ধাতব পদার্থের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া, মোবাইল ফোনের টাওয়ারের সংখ্যা বাড়া, বনভূমি বা গ্রামাঞ্চলে উঁচু গাছ কমে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট ও নদী শুকিয়ে যাওয়া বজ্রপাতের কারণ। বুয়েটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, বিল্ডিং কোডে বলা আছে, দশ তলা পর্যন্ত ভবনে বজ্রপাত প্রতিরোধ রড ব্যবহার করতে। ঢাকায় তা মানা হলেও অন্য জায়গায় মানা হচ্ছে না।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৫৭৭ বার

Share Button

Callender

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930