শিরোনামঃ-

» লকডাউন কী উঠে যাবে আমেরিকায়?

প্রকাশিত: ১৪. এপ্রিল. ২০২০ | মঙ্গলবার

নিউইয়র্ক সহ আমেরিকাজুড়ে করোনা পরিস্থিতির বিস্ময়কর উন্নতি; ঘুরে দাড়ানোর চেস্টা বাংলাদেশীদের

নিউইয়র্ক থেকে এমদাদ চৌধুরী দীপুঃ

(১৩ এপ্রিল, ২০২০)
একদিনে বিস্ময়কর পরিবর্তন এসেছে আমেরিকার করোনা পরিস্থিতিতে। কমেছে মৃত্যু এবং আক্রান্ত রোগীর হার। এর বিপরীতে সুস্থতার হার বেড়েছে আগের চেয়ে।

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে উন্নতির এই ধারাবাহিকতা থাকলে বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন কী উঠে যাবে?

এ নিয়ে হোয়াইট হাউস এর সাথে স্নায়ু যুদ্ব চলছে পূর্ব উপকুলের রাজ্য কেলিফোর্নিয়া এবং পশ্চিম উপকুলের রাজ্য নিউইয়র্ক এর গভর্নরের।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটে বলেছেন লকডাউন তুলে নেয়ার ঘোষনা দেয়ার একমাত্র ক্ষমতা তার।

এদিকে নিউইয়র্ক এবং কেলিফোর্নিয়ার গভর্নর লকডাউন তুলে দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।

আমেরিকার করোনা পরিস্থিতির একদিনের এই পরিবর্তনকে বিচ্ছিন্ন বিষয় বলে মনে করছেন এই মহামারীর সাথে সংশ্লিস্ট অনেক মহল।

করোনা সনাক্তকরণ সেন্টারে কাজ করেন এমন একজন বাংলাদেশী ডাক্তার আমানুর রহমান মনে করেন, আমরা আশাবাদী হতে চাই। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে এবং সাবধানতার মাধ্যমে এ বৈশ্বিক মহামারী থেকে আমরা মুক্তি পেতে পারি এমন মন্তব্য কওে ডা. আমান বলেন করোনা মূক্ত হওয়ার জন্য আমেরিকায় সব ধরনের প্রচেস্টা অব্যাহত আছে।

আমেরিকায় করোনায় আক্রান্তদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন সংগঠন। এর মধ্যে আমব্রেলা সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি, জালালাবাদ এসোসিয়েশন এবং মুসলিম উম্মাহ অব নর্থ আমেরিকা অন্যতম।

কবরের ব্যবস্থা করা, মারা যাওয়া পরিবারকে আর্থিক সহযোগীতা প্রদান, মরদেহ ফেউনারেলে রাখা, জানাজা ও দাফন কাজে সহযোগীতা করছে এসব সংগঠন।

এদিকে বাংলাদশীদের ঘুরে দড়ানোর একটা চেস্টা লক্ষ্য করা গেছে। জেকসনহাইটসের বাংলাদেশী মালিকানাধীন গ্রোসারীগুলো খোলতে শুরু করেছে।

শুধু জেকসন হাইটস নয় ব্রংকসের অনেক গ্রোসারী এবং রেস্টুরেন্ট খোলেছেন বাংলাদেশী মালিকরা।

জেকসনহাইটে খা খা আর নীরব পরিবেশে দরোজা খোলেছে ইত্যাদি গ্রোসারী, মান্নান হালালমিট, হাটবাজার, আপনাবাজার খোলা অনেক আগ থেকে।

ব্রংকসে খোলা হয়েছে বাংলাবাজার, খলিল বিরিয়ানী, ইত্যাদি গ্রোসারী সহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্টান।

এছাড়া লকডাউনে জরুরী কাজে প্রতিদিন রাস্তায় নামেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, সোমবার কুইন্স এর কিছু এলাকাঘুরে দেখা গেছে সে চিত্র।

তবে মাস্ক, গ্লাভস পরে সাবধানতা বজায় রেখে ভয়, আতংককে সাথী করে চলাফেরা করছে বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ।

করোনা ভাইরাসে মৃত্যু কিংবা আক্রান্ত দুই বিবেচনায় শীর্ষদেশ আমেরিকা।

তবে ১২ এপ্রিল এর চেয়ে ১৩ এপ্রিল আমেরিকায় আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে ৪ হাজার।

বিশ্বে মোট আক্রান্তের প্রায় এক তৃতীয়াংশ আমেরিকায়, বর্তমানে আক্রান্ত রোগী ৫ লাখ ৮৬ হাজারের উপরে।

একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২৬ হাজার, এটি একদিন আগে ছিল ৩০ হাজার।

ফলে ৪ হাজার কমেছে আক্রান্তের সংখ্যা।

এদিকে আজ আমেরিকায় মৃত্যুর সংখ্যা ২৩ হাজার ৬১০ জন। একদিনে মৃত্যু ১৪৯৫ জনের। একদিন আগে এটি ছিল ১৫২৮ জন, ফলে কমেছে মৃত্যুর সংখ্যা।

স্বস্থিকর খবর হচ্ছে সুস্থতা বেড়েছে আগের চেয়ে, আগে একদিনে সুস্থতার সংখ্যা ছিল গড়ে ২ হাজার সেটি বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার।

আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন নিউইয়র্কে পৃথিবীর সব দেশের উপরে। ইতিমধ্যে শতাধিক বাংলাদেশীর মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে, নতুন করে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে কয়েকজনের।

আমেরিকার নিউইয়র্ক সময় রাত ৯টা, সোমবার এখানে রোগী ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬৫৫ জন।

একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫হাজার কমেছে। এর আগে একদিনে ১০ হাজার আক্রান্তের রেকর্ড ছিল।

এছাড়া নিউইয়র্কে রোবারের চেয়ে সোমবার ৮৭ জন কম মারা গেছেন। আজ সোমবার মৃত্যু ৬৭১ জনের, রবিবার নতুন মৃত্যু ছিল ৭৫৮ জন। নিউইয়র্কে আগে সুস্থ রোগী ছিল ১৩ হাজার, আজ সেটি বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার।

আমেরিকার ৪৬টি রাজ্যে আজো মারা যাওয়ার খবর আছে।

এ পর্যন্ত আমেরিকাজুড়ে ৩৬ হাজার ২১৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এদিকে করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে।

বাংলাদেশী একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন নিউইয়র্কে ভারতীয় কিংবা পাকিস্তানী অভিবাসীদের চেয়ে বাংলাদেশীদের মৃত্যুর সংখ্যা বেশী।

সংকটাপন্নদের জন্য প্রতিদিন চলছে দোয়া মাহফিল এসব দোয়া মোনাজাত সহ অন্যান্য ধর্মীয় আয়োজন চলছে অনলাইনে।

নিউইয়র্কে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৯৫ হাজারের উপরে। আর মৃতের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার ৫৬ জন।

এদিকে নিউইয়র্কের পর উদ্বেগজনক অবস্থা নিউজার্সীতে। আক্রান্ত প্রায় ৬৪ হাজারের উপরে, মারা গেছেন ২৪৪৩ জন।

অবনতি হয়েছে মিশিগানের করোনা পরিস্থিতি। এখানে মৃত্যু ১৬০২ জনের, নতুন করে মৃত্যু ১১৫ জনের, মোট আক্রান্ত রোগী ২৫ হাজারের উপরে।

আক্রান্ত রোগী বিবেচনায় শীর্ষ রাজ্য সমূহ
আক্রান্ত রোগী বেশী যেসব রাজ্যে সে তালিকায় রয়েছে ওয়াশিংটন আক্রান্ত ১০ হাজারের উপরে, কেলিফোর্নিয়া ২৪ হজারের উপরে।

মেসাজুসেট ২৬ হাজারের উপরেইলিনইস প্রায় ২২ হাজার, পেনসেলভেনিয়া ২৪ হাজারের উপরে, ফ্লোরিডা ২১ হাজারের উপরে, লুসিয়ানা প্রায় ২১ হাজার উপরে, জর্জিয়া ১৩ হাজারের উপরে, টেক্সাস ১৪ হাজারের উপরে, কানেকটিকা ১৩ হাজারের উপরে।

উল্লেখযোগ্য নতুন মৃত্যুঃ

আলোচিত শীর্ষ রাজ্যগুলো
ওয়াশিংটন ১৮ জন, কানেকটিকা ৪৮ জন, কেলিফোর্নিয়া ৫১ জন, মেসাজুসেট ৮৮ জন, ইলিনইস ১৪ জন।

পেনসেলভেনিয়া ২৯ জন, মিশিগান ৯৫ জন, ফ্লোরিডা ৩৮ জন, লুসিয়ানা ৪৪ জন, জর্জিয়া ৩৮ জন, টেক্সাস ৯ জন।

আলোচিত রাজ্যে মোট মৃত্যু
ওয়াশিংটন ৫২৩ জন, কানেকটিকা ৬০২ জন, কেলিফোর্নিয়া, ৭২৫ জন, মেসাজুসেট ৮৪৪ জন, ইলিনইস ৭৯৪ জন, পেনসেলভেনিয়া ৫৯০ জন, মিশিগান ১৬০২ জন, ফ্লোরিডা ৪৯৯ জন, লুসিয়ানা ৮৮৪ জন, জর্জিয়া ৪৮০ জন, টেক্সাস ২৮৭ জন।

আমেরিকাজুড়ে এখন শোকের ছায়া। লাশ গণকবর দেয়া হচ্ছে। ফিউনারেল, ট্রাক, লাশঘর, অস্থায়ী বিভিন্ন স্থানে পড়ে আছে মানুষের মরদেহ।

বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, আর্তনাদ আহাজারী।

হাসপাতালে বাড়তি চাপ। নেই লাশ রাখার জায়গা।করোনা রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত পৃথক ব্যবস্থা না থাকায় রোগী এবং স্বজনদের অভিযোগ বাড়ছে, বাড়ছে হতাশা-ক্ষোভ।

এদিকে বাংলাদেশীদের মধ্যে স্বজন হারানোর বেদনা আছে, আছে অসুস্থ হওয়ার ভয়, পরিচিতজনের অসুস্থতা নিয়ে দূর্ভাবনা।

এর বিপরীতে আর মাত্র দু’দিন পর ১৫ এপ্রিল থেকে টাকা প্রাপ্তির অপেক্ষা সবার মাঝে।

আমেরিকার নাগরিকদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত ২ ট্রিলিয়ন সহায়তা ঘোষনা স্বস্থি নিয়ে আসে করোনা মহামারীতে। ঘরে ঘরে অপেক্ষা বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশীরা রয়েছেন জনপ্রতি ১২শ ডলার, আর শিশুদের ৬শ ডলার সহায়তা গ্রহনের জন্য।

এদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৩৫০ বিলিয়ন ডলার ঘোষনা করা হয়েছে। এই সুবিধা পাওয়ার জন্য বাংলাদেশীদেও মধ্যে চলছে নানা আলোচনা।

এদিকে পেন্ডামিক আনএমপ্লয়মেন্ট সহায়তা পাবেন বাংলাদেশী প্রবাসীরা সহ সব ধরনের নাগরিক, পাবেন বেকার ভাতা।

এদিকে লাখ লাখ উদ্বিগ্ন কর্মহীন বাংলাদেশীরা ব্যস্থ আনএমপ্লয়মেন্ট আবেদন জমা দেয়ার কাজে।

ইতিমধ্যে অনেকে জমা দিয়েছেন। সাপ্তাহিক কর্মহীন ভাতা পেয়েছেন কেউ কেউ। বিভিন্ন খাত থেকে ডলার পাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রয়েছেন প্রবাসীরা।

এই সংবাদটি পড়া হয়েছে ৪০৭ বার

Share Button

Callender

May 2024
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031